মৃণাল হকের বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য সরিয়ে নিল কুবি প্রশাসন
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণে অনিয়ম আর নিম্নমানের অভিযোগের মুখে রাতের আঁধারে ভাস্কর্য সরিয়ে নিয়েছে প্রশাসন। বিতর্কিত শিল্পী মৃণাল হক সরিয়ে ফেলা এই ভাস্কর্যের স্থপতি বলে জানা গেছে।
মৃণাল হক সাম্প্রতিককালে সুপ্রিম কোর্টের সামনে শাড়ি পরিহিত গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্যের নির্মাতা হিসেবে দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনার মধ্যে পড়লে, থেমিসের ভাস্কর্যও সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। থেমিসের ভাস্কর্য নির্মাণ প্রক্রিয়ায় টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি বলে নিজেই তখন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন মৃণাল হক।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আলী আশরাফ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ত কমিটি এবং ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন কমিটি’র অনুমোদন ছাড়াই মৃণাল হককে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য নির্মাণের দায়িত্ব দেয়। মোট ২০ লাখ টাকা ব্যয় ধার্য করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আলী আশরাফ। এর মধ্যে দুই অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা করে মৃণাল হককে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা যায়।
সূত্র জানায়, উপাচার্যের সাথে দফারফার ভিত্তিতে মৃণাল হক মে মাসে কাজ শুরু করেন। ভালো মানের পাথর ও টাইলস দিয়ে ভাস্কর্যটি নির্মাণের কথা থাকলেও মাত্র দুই রাতের কাজে মৃণাল হক লোহার পাত আর সাদা রঙ ব্যবহার করে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান। গত জুনে স্থানীয় জনতা ব্যাংকে নিজের নামে একটি হিসাব খোলেন মৃণাল হক।
শিক্ষক সমিতির একজন সদস্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘মে মাসে কাজ শুরু হলেও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় জুন মাসে আবার কাজ শুরু হয়। ১২০ টাকা ফুট হিসাবের দামি টাইলস এবং উচ্চ মানসম্পন্ন পাথর দিয়ে এই ভাস্কর্য নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু মৃণাল হক ৪০ টাকা ফুট হিসেবের নিম্নমানের টাইলস ব্যবহার করেছেন মূল বেদীতে। এছাড়া স্থানীয় নিম্নমানের ইটও ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।’ তিনি জানান, মূল বেদির উপর ১৫ ফুট দীর্ঘ ভাস্কর্য নির্মিত হওয়ার কথা, কিন্তু ১১ ফুট ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে অনিয়ম এবং নিম্নমানের অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রতিবাদে টনক নড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের। গত ৩০ জুলাই রাতের আঁধারে ভাস্কর্যটি খুলে ফেলে বঙ্গবন্ধুর দেহটি অযত্নে ফেলে রাখা হয়েছে।
বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু তাহের এর নেতৃত্বে গঠিত ‘বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল নির্মাণ তদারকি কমিটি’তে অন্যান্যদের সাথে আছেন দেশ বরেণ্য শিল্পী হাশেম খান। আরও আছেন সাবেক প্রক্টর আইনুল হক, শিল্পী রবিউল ইসলাম ও লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক তোফায়েল হোসেন মজুমদার।
ম্যুরাল কমিটির সদস্য সাবেক প্রক্টর আইনুল হক বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কমিটিকে পাশ কাটিয়ে একটি নিয়ম-বহির্ভূত প্রক্রিয়ায় বিতর্কিত ভাস্কর মৃণাল হককে দিয়ে যে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছিল, সেটি জাতির জনকের প্রতি চরম অপমান।’
আইনুল হক বলেন, ‘ভাস্কর্যের দেহ খাটো, মাথা সেই তুলনায় বেঢপ ধরনের বড়। এরকম বিকৃত চেহারা ও নির্মাণ ত্রুটি বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে এই ভাস্কর্যটি কোনোভাবেই বঙ্গবন্ধুর নয়।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আলী আশরাফ বলেন, ‘ভাস্কর মৃণাল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া ‘থিম এবং স্পেসিফিকেশন’ অনুযায়ী কাজটি করতে পারেননি বিধায় নতুন করে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করতে বলা হয়েছে।’
উপাচার্য বলেন, ‘মৃণাল হককে একটি আন্ডারটেকেন দিতে বলা হয়েছে। তিনি আমাদের দেয়া থিম এবং স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী জাতির জনকের ভাস্কর্যটি নির্মাণ করতে পারেননি। তার বিলও আটকে দেয়া হয়েছে। জাতির জনকের ব্যক্তিত্ব যথাযথভাবে ফুটিয়ে তোলেই ভাস্কর্যটি পুনঃনির্মাণ করা হবে।’
অধ্যাপক আলী আশরাফ বলেন, ‘প্রশাসন শিক্ষক সমিতি কিংবা বঙ্গবন্ধু পরিষদের চাপে পড়ে ভাস্কর্য পুনঃনির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটি ঠিক নয়।’ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত পরিস্থিতি দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন