মেক্সিকো সীমান্তে ১৫শ সেনা মোতায়েন করছে যুক্তরাষ্ট্র
মেক্সিকো সীমান্তে ১৫শ সেনা সদস্য মোতায়েন করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত যুক্তরাষ্ট্র-অভিমুখী অভিবাসীদের প্রত্যাশিত ঢেউ বৃদ্ধির আগে নিজেদের দক্ষিণ সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য এই সেনাদের সেখানে পাঠানো হচ্ছে বলে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগন জানিয়েছে।
বুধবার (৩ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে ইচ্ছুক অভিবাসীদের প্রত্যাশিত বৃদ্ধির আগে নিজেদের দক্ষিণ সীমান্তে ১৫০০ সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ। এই দেড় হাজার সেনা সীমান্ত এজেন্টদের কাজে সহায়তা করার জন্য ইতোমধ্যেই মোতায়েনকৃত ২৫০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের সাথে যুক্ত হবে।
টাইটেল ৪২ নামে ট্রাম্প-আমলের একটি নীতির মেয়াদ আগামী ১১ মে শেষ হতে চলেছে। মূলত এই নীতির কারণে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে বহিষ্কার করার ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছিল মার্কিন সরকার। আর এটির মেয়াদ আগামী ১১ মে মেয়াদ শেষ হওয়ায় এখন যুক্তরাষ্ট্র-অভিমুখী অভিবাসীদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে বলে কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন।
মঙ্গলবার একজন মার্কিন কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার পেট্রোল (সিবিপি) কর্মকর্তাদের কাজের ‘সহায়তা’ করার জন্য অতিরিক্ত এই সামরিক কর্মীদের ৯০ দিনের জন্য মোতায়েন করা হবে।
ওই কর্মকর্তা বলেছেন, এসব সেনা কোনও আইন প্রয়োগ করবে না, কিন্তু এর পরিবর্তে তারা পরিবহন, মাদকদ্রব্য শনাক্তকরণ, ডেটা এন্ট্রিসহ অন্যকাজে সহায়তা করবে।
এদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত এসব সামরিক কর্মী ‘গুরুত্বপূর্ণ সক্ষমতার দুর্বলতা’ পূরণ করবে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, তার সংস্থা গত ২২ বছরের মধ্যে ১৮ বছরই যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগকে সহায়তায় কাজ করেছে। আর ২০০৬ সাল থেকে প্রতি বছরই হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সমর্থনে কাজ করে আসছে তারা।
সীমান্তে মোতায়েনের জন্য এসব সৈন্য আগামী ১০ মে এর আগেই সেখানে পৌঁছাবে বলে জেনারেল রাইডার বলেছেন।
বিবিসি বলছে, অভিবাসীদের ঢেউয়ের মুখে সীমান্ত এজেন্টদের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে বাড়তি সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিবিপির শীর্ষ কর্মকর্তা ট্রয় মিলার গত মাসে কংগ্রেসকে বলেছিলেন, তার সংস্থা টাইটেল ৪২-এর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে প্রতিদিন ১০ হাজারেরও বেশি অভিবাসীকে সীমান্তে মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এর আগে ২০২১ অর্থবছরে দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ১৯৬০ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ। আর গত বছর এই সংখ্যাটি ২.৭৬ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। যা ছিল আরেকটি রেকর্ড।
উল্লেখ্য, টাইটেল ৪২ আইনটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। এই আইনের সাহায্যে যে কোনও শরণার্থী, উদ্বাস্তু, অ্যাসাইলামসিকার, অভিবাসনপ্রত্যাশীকে বিনা নোটিশে দেশ থেকে বের করে দেওয়া যায়। এমনকি সীমান্তে আটকেও দেওয়া যায় অভিবাসী-শরণার্থীদের।
২০২০ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন করোনা মহামারিকে সামনে রেখে এই আইনটি কার্যকর করেছিল। তবে করোনা পরবর্তী সময়ে আইনটি জারি থাকবে কি না, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়।
১৯৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বিতর্কিত টাইটেল ৪২ আইনটি পাস হয়। গণস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে এই আইন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আইনটি প্রথম কার্যকর হয় ২০২০ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের হাত ধরে।
এই আইনের সাহায্যে অতি সহজেই ভিসাহীন অ-যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে বিনা নোটিশে দেশ থেকে বিতাড়িত করা যায়। এখনও পর্যন্ত এই আইন দুই দশমিক পাঁচ মিলিয়ন বার প্রয়োগ হয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছে প্রশাসন। এই আইনের সাহায্যে বহু শরণার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন