মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে রাজমিস্ত্রীর সহকারি কাজে ’মা’

অসহায়তা নয়, অদম্য ইচ্ছাশক্তিই তার জীবনের চালিকাশক্তি। একমাত্র মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করতে, শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে নির্মাণ শ্রমিকের ভার কাঁধে তুলে নিয়েছেন এক মা। অন্যের চোখে যেসব যন্ত্রপাতি নির্মাণসাইটে বোঝা, তা তার কাছে সন্তানের স্বপ্নের ভার।
নেত্রকোণার দুর্গাপুর পৌরসভার দক্ষিণপাড়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করেন এই সংগ্রামী নারী সুপরিতা পন্ডিত। স্বামী পরিত্যক্তা সুপরিতা একমাত্র সন্তান ত্রয়ি পন্ডিতকে নিয়েই তার জগৎ। মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে নিজে রাজমিস্ত্রীর সহকারী/যোগালির মতো কঠিন কর্ম বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
মেয়ে ত্রয়ি বর্তমানে স্থনীয় একটি বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে রান্না, কাপড় ধোয়া, মেয়ের দেখাশোনা ও স্কুলে পাঠানোর প্রস্তুতি সেরে নিজেই বেরিয়ে পড়েন কাজের সন্ধানে। দিনপ্রতি মজুরি পান ৪০০ টাকা তাও প্রতিদিন কাজ জোটে না। এই সামান্য আয়ে চালাতে হয় মেয়ে ত্রয়ির লেখাপড়ার খরচ, বই-খাতা, ও সংসারের অন্যান্য প্রয়োজন।
তবু সুপরিতা দমে যাননা। তিনি বলেন, সকাল হতেই সব কাজ সেরে মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে আমি বেরিয়ে পড়ি কাজে। নির্মাণসাইটে কাজ করাটা সহজ না, তবু মনের জোরে টিকে আছি। শুধু একটাই স্বপ্ন মেয়েটা যেন পড়ালেখা করে মানুষ হয়। আমার কষ্ট যদি ওর ভবিষ্যৎ গড়তে পারে, তাহলেই শান্তি পাই।
ত্রয়ির স্বপ্নও বড় সে পুলিশ অফিসার হতে চায়। মায়ের কষ্ট দেখে ছোট বয়সেই তার মনে প্রতিজ্ঞা, একদিন মায়ের সব দুঃখ দূর করবে।
ত্রয়ি বলে, মা অনেক কষ্ট করেন। তাঁকে দেখে মনে হয়, আমি যদি বড় হয়ে কিছু করতে পারি, তাহলেই মায়ের সব কষ্টের মূল্য দিতে পারব। আমি পুলিশ হতে চাই, যেন মাকে ভালো জীবন দিতে পারি। আমি চাই, মা যেন গর্ব করতে পারেন।
স্থানীয় বাসিন্দা গিয়াসউদ্দিন বলেন, সুপরিতার মতো পরিশ্রমী নারী খুব কম দেখা যায়। আমরা ওকে সম্মান করি। এমন মায়ের পাশে দাঁড়ানো সবার দায়িত্ব। সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা পেলে ত্রয়ি অনেক দূর এগুতে পারবে।
এই সমাজে যখন অনেক বাবা-মা সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদাসীন, তখন সুপরিতার মতো একজন মা প্রমাণ করছেন ইচ্ছা থাকলে পথ হয়। সামান্য সহযোগিতাই পারে এই মা-মেয়ের স্বপ্নের পথে আলো জ্বালাতে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন