মেসির হ্যাটট্রিকে সরাসরি বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা
মাঠে নেমে ধাতস্ত হয়ে তো বসতে হবে। কিন্তু না, এ কি, প্রথম মিনিটেই আর্জেন্টিনার জালে বল। এ তো রীতিমত অবিশ্বাস্য এক ব্যাপার। ৪০ সেকেন্ডের মধ্যেই গোল হজম করে বসলো আর্জেন্টিনা। কিউটোর উচ্চতা নিয়ে ভয় ছিল। কিন্তু সেটা যে প্রথম মিনিটেই বিপদ ঘটিয়ে ফেলবে কে জানতো!
যারা এতটুকু দেখে শঙ্কায় ভুগতে শুরু করে দিয়েছিলেন, তাদের জন্য একটু সমবেদনা। কারণ, নিয়তি বুঝি তখন আড়াল থেকে হাসছিল! আর্জেন্টিনা দলে যে মেসি নামক এক জাদুকর ছিলেন! সেই জাদুকরের জাদুর ছোঁয়ায় ১২ মিনিটেই বদলে গেলো দৃশ্যপট। অবশেষে সেই জাদুকর করলেন বিরল এক হ্যাটট্রিক। তার হ্যাটট্রিকেই শেষ পর্যন্ত ইকুয়েডরকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করলো আর্জেন্টিনা।
ইকুয়েডরের বিপক্ষে জয়ই শেষ কথা ছিল না আর্জেন্টিনার। তাকিয়ে থাকতে হতো ব্রাজিল-চিলি ম্যাচের দিকে। নিজেদের মাঠে ব্রাজিল চিলিকে ৩-০ গোলে পরাজিত করলো। তাতেই পয়েন্ট টেবিলে ৬ নম্বর থেকে এক লাফে আর্জেন্টিনা চলে এলো তিন নম্বরে এবং সরাসরি রাশিয়া বিশ্বকাপে ঠাঁই করে নিলো মেসির দেশ।
ব্রাজিল আগেই বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত করে নিয়েছিল। বাছাই পর্বে দ্বিতীয় হয়ে সুয়ারেজের উরুগুয়ে, তৃতীয় হয়ে আর্জেন্টিনা, চতুর্থ হয়ে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করলো কলম্বিয়া। পেরু সুযোগ পেলো প্লে-অফ খেলার। দু’বারের কোপা আমেরিকা জয়ী চিলিকে বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে পড়তে হলো।
খেলার শুরুতেই আর্জেন্টিনা সমর্থকদের স্তব্ধ বরে দেয় স্বাগতিক ইকুয়েডর। খেলা শুরুর ৪০ সেকেন্ডের মধ্যেই পিছিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। লম্বা বাড়ানো বল ধরে সতীর্থকে হেডে পাস দিয়েছিলেন রোমারিও ইবাররা। বল ফেরত পেয়ে কোনাকুনি শটে আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক রোমেরোকে পরাস্ত করেন এই মিডফিল্ডার।
খেলার ১২ মিনিটেই আর্জেন্টিনাকে সমতায় ফেরালেন মেসি। অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া বাঁ দিকে বল বাড়িয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন বার্সেলোনার ফরোয়ার্ড। ডি মারিয়ার কাছ থেকে বল ফেরত পেয়ে প্রথম ছোঁয়াতেই বাঁ পায়ের টোকায় ইকুয়েডরের জালে বল পাঠান মেসি।
সমতায় ফিরে খেলারও নিয়ন্ত্রণ নেয় আর্জেন্টিনা। যার ফলে ২০ মিনিটে আবারও গোল। এবারও ম্যাজিসিয়ান মেসির পায়ের কারুকাজ। ইকুয়েডরকে স্তব্ধ করে দিয়ে গোলটি করে বসলেন লিওনেল মেসি।
ডিফেন্ডার আইমার আলভারেজের ভুলে বল পেয়েছিলেন মেসি। সেটা নিয়ন্ত্রণে রেখেই ডি-বক্সে ঢুকে উপরের বাঁ-কোন দিয়ে কোনাকুনি শটে প্রতিপক্ষের জালে পাঠান পাঁচবারের বর্ষসেরা এই ফুটবলার।
একই সঙ্গে রেকর্ড গড়েন তিনি। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটিও দখলে নিলেন মেসি। তার গোলসংখ্যা এখন ২০।
২-১ লিড নিয়েই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা-ইকুয়েডর। বিরতির পর আবারও প্রভাব বিস্তার করে খেলতে শুরু করে আর্জেন্টিনা। যার ধারাবাহিকতায় ৬২ মিনিটে আবারও গোল। ম্যাজিসিয়ান মেসির দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক। এমন চাপের ম্যাচে অসাধারণ হ্যাটট্রিক। শুধুমাত্র মেসির মত ফুটবলারের ক্ষেত্রেই সম্ভব।
ডি বক্সের সামনে বলটা পেয়েই ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে মাপা লবে গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে ইকুয়েডরের জালে জড়িয়ে দিলেন তিনি। পুরোপুরি মেসিময় করে তুললেন ম্যাচটা। আর্জেন্টিনাকে এনে দিলেন অসম্ভব, অবিশ্বাস্য এক জয়। এই জয়েই শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ নিশ্চিত হলো আর্জেন্টিনার।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন