মেসি ও আর্জেন্টিনাকে সামলাবেন কে?
বিশ্বকাপ ব্যর্থতার দায় চাপিয়ে হোর্হে সাম্পাওলিকে সমঝোতার-বরখাস্ত করা হয়েছে। আর্জেন্টিনার কোচের পদ এখন খালি। গত ৩ বছরের মধ্যে এ নিয়ে তৃতীয় বারের মতো কোচশূন্য আর্জেন্টিনার জাতীয় ফুটবল দল। আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) শুন্যতা পূরণের চেষ্টা করছে। কিন্তু কে হবেন সবচেয়ে যোগ্য কোচ? কে শক্তহাতে সামলাতে পারবেন জাতীয় দল ও বিশ্বসেরা লিওনেল মেসিকে? প্রার্থী বাছাই করার প্রক্রিয়ায় এই প্রশ্নগুলোর চক্করে পড়ে গেছেন এএফএ-র কর্তারা। কিছুতেই সেই চক্কর থেকে বেরোতে পারছেন না।
বিশ্বকাপে যে সাম্পাওলি-কাণ্ডের জন্ম হয়েছে, তাতে এএফএ-র কর্তাদের চিন্তায় গলদগর্ম হওয়াটাই স্বাভাবিক। সাম্পাওলির দুর্বল ট্যাকটিকস, কৌশল নিয়ে আর্জেন্টিনার গণমাধ্যম আগে থেকেই সমালোচনায় মুখর ছিল। বিশ্বকাপ মঞ্চে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরাও কোচ সাম্পাওলির কোচিং দর্শন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মেসি-মাচেরানোরা কোচের বিরুদ্ধে রীতিমতো বিদ্রোহ করেছেন। কোচকে ‘জিরো’ বানিয়ে শেষ পর্যন্ত তারা নিজেরাই পালন করেছেন কোচের গুরুত্ব দায়িত্ব!
নাইজেরিয়া ও ফ্রান্সের বিপক্ষে ম্যাচ দুটিতে কোচ সাম্পাওলি ছিলেন খেলোয়াড়-কোচ মেসিদের হাতের পুতুল! মাঠ থেকে মেসিরা যে নির্দেশনা দিয়েছেন, ডাগআউটে দাঁড়িয়ে কোচ সাম্পাওলি পুতুলের মতো তা পালন করেছেন। বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাস এমন লজ্জাজনক ঘটনার নজির খুব কমই আছে।
বিশ্বকাপের টাটকা এই তিক্ত অভিজ্ঞতা এএফএ’র কর্তাদের ভাবনার নদীতে ফেলে দিয়েছে। খোঁজতে চাইছে এমন একজনকে, যার ট্যাকটিকস, কোচিং দর্শন নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস করবেন না মেসিরা। অধিনায়ক মেসি এবং দলকে সামলাতে পারবেন দক্ষ হাতে।
আর্জেন্টাইন ভক্তদের জন্য আশার কথা, ভাবতে ভাবতে মেসিদের সম্ভাব্য কোচ হিসেবে দুজনকে বাছাইও করে ফেলেছেন এএফএ-র কর্তারা। প্রশ্নটা যেহেতু উপযুক্ত ট্যাকটিকস-কৌশলের মাধ্যমে বিশ্বসেরা মেসিকে সামলানো, এএফএ তাই পরীক্ষিতদের দিকেই হাত বাড়িয়েছে। প্রাথমিকভাবে বাছাই করেছে সাবেক দুই কোচ হোসে পেকারম্যান ও আলেসান্দ্রো সাবেলাকে।
নাম দুটো শুনেই আর্জেন্টাইন ভক্তরা চিনে ফেলার কথা। এই দুজনই আর্জেন্টিনা জাতীয় দলকে কোচিং করিয়েছেন। এই দুজনের অধীনেই জাতীয় দলে খেলেছেন মেসি। মানে দুজনের ঝুলিতেই আছে মেসিকে সামলানোর অভিজ্ঞতা।
সাম্পাওলির উত্তরসূরি হিসেব প্রথমে অবশ্য শোনা যাচ্ছিল অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের কোচ দিয়েগো সিমিওনে ও টটেনহামের কোচ মরিসিও পচেত্তিনোর কথা। ক্লাব ফুটবলে দুজনেই নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। নাম কামিয়েছেন। কিন্তু তাদের পথ থেকে সরে এসে এএফএ অভিজ্ঞ পেকারম্যান এবং সাবেলার স্মরণাপন্ন বলেই জানা গেছে।
৬৮ বছর বয়সী পেকারম্যান ২০০৪ থেকে ২০০৬, দুই বছর আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। ২০০৬ বিশ্বকাপে দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনিই। বিশ্বকাপের পর অবশ্য তাকে ব্যর্থতার দায় নিয়েই কোচের পদ থেকে সরে যেতে হয়। জার্মানির কাছে হেরে আর্জেন্টিনা কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা।
পেকারম্যানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় সমালোচনাটা ছিল মেসিকে নিয়েই। তখন মেসির বয়স ছিল মাত্র ১৯। তবে ওই বয়সেই ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে হইচই ফেলে দেন মেসি। অবধারিতভাবেই পেকারম্যানের বিশ্বকাপ দলে ছিলেন মেসি। কিন্তু তরুণ মেসিকে খুব বেশি ব্যবহারই করেননি পেকারম্যান। এমনকি জার্মানির বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে মেসিকে মাঠেই নামাননি তিনি।
তবে সময়ের স্রোতে সেই সমালোচনার তোর ভেসে গেছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেকারম্যানও কোচ হিসেবে আরও দক্ষ হয়ে উঠেছেন। ২০১২ সাল থেকে পালন করে আসছেন কলম্বিয়া জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব। এই বিশ্বকাপেও তিনি কলম্বিয়াকে তুলেছিলেন দ্বিতীয় রাউন্ডে।
তার তুলনায় আলেসান্দ্রো সাবেলা কিছুটা বেশি সফল। ২০১৪ বিশ্বকাপে এই সাবেলার অধীনেই ফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা। অধিনায়ক মেসির সঙ্গে ৬৩ বছর বয়সী সাবেলা’র বোঝাপড়াটাও ছিল দারুণ। যদিও ব্রাজিল বিশ্বকাপের পর ঠিকই সরে যেতে হয় তাকে।
আপাতত এই দুজনই এএফএ’র পছন্দের তালিকার শীর্ষে। তাদের একজনই নতুন করে কোচ হয়ে আসেন, নাকি মেসিদের সামলানোর দায়িত্বটা নতুন কারো হাতে উঠে, সেটাই এখন দেখার।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন