মেয়েদের জন্য একজন ক্লিনার বাবার শর্তহীন ভালোবাসা
‘আমি কী কাজ করি তা কখনোই আমার সন্তানদের বলি নাই। কখনোই আমি চাইনি যে তারা আমার কারণে লজ্জা পাক।’- সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে গিয়ে পেশায় ক্লিনার একজন বাবার এমন সহজ সরল স্বীকারোক্তি ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।
মর্মস্পর্শী নিজের কাজের (ক্লিনার) এমন এক গল্প মেয়েদের কাছে গোপন রেখেছিলেন তিনি। ক্লিনারের কাজ করে যে অর্থ পেতেন তার পুরোটাই ব্যয় করতেন মেয়েদের শিক্ষার পেছনে। ফেসবুকে ওই বাবার এমন ত্যাগের গল্প হাজার হাজার মনকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
মেয়েদের প্রতি বাবার শর্তহীন এ ভালোবাসার গল্প ফেসবুকে পোস্ট করেছেন জেএমবি আকাশ নামে ভারতীয় এক সাংবাদিক। গত ৬ মে এই গল্প ফেসবুকে পোস্ট করার পর এখন পর্যন্ত ৩ লাখ একটি লাইক পড়েছে; শেয়ার হয়েছে এক লাখেরও বেশি।
পোস্টে ইদরিস নামের ওই বাবা নিজের মেয়েদের কাছে চাকরি লুকিয়ে রাখার দীর্ঘ এক গল্প করেছেন। তিনি বলেছেন, মেয়েদেরকে তিনি বলতেন যে, তিনি একজন শ্রমিক কিন্তু আসলে তিনি একজন ক্লিনার। এমনকি কাজ শেষে বাসায় ফেরার আগে পাবলিক টয়লেটে গোসল সারতেন তিনি; যাতে তিনি কীভাবে অর্থ উপার্জন করছেন তা যেন পরিবারের সদস্যরা বুঝতে না পারেন। ক্লিনারের কাজ করে যে অর্থ আয় করতেন তিনি; তা মেয়েদের পড়াশুনার জন্য ব্যয় করতেন।
তিনি বলেন, ‘আমি চাইতাম তারা যেন মানুষের সামনে সম্মানের সঙ্গে দাঁড়াতে পারে। আমি চাইতাম, অন্যরা আমাকে যেভাবে ঘৃণার চোখে দেখে; তাদেরকে যেন সেভাবে কখনোই না দেখে। মানুষ সবসময় আমাকে অপমান করে।’
একদিন এই বাবা তার মেয়েদের সামনে সবকিছু খুলে বলেন। তার মেয়ের কলেজে ভর্তির ফি জমা দেয়ার শেষদিন তিনি তার লুকানো কষ্ট উন্মোচন করেন। কারণ মেয়ের কলেজের ফি পরিশোধের সামর্থ্য ছিল না তার। মেয়ে টাকা চাইলে কী বলবেন এই ভেবে ব্যাপক চিন্তিত হয়ে পড়েন তিনি। এই চিন্তায় সেদিন কাজেও যেতে পারেননি তিনি।
সৌভাগ্যক্রমে তার সহকর্মী ক্লিনাররা নিজেদের দৈনিক পারিশ্রমিকের কিছু অংশ সহায়তার জন্য হাত বাড়িয়ে দেন। তবে প্রথমে তিনি এই অর্থ নিতে রাজি হননি। পরে ইদরিসের সহকর্মী ক্লিনাররা বলেন, ‘দরকার হলে আমরা আজ উপবাস থাকবো, কিন্তু অামাদের মেয়েকে কলেজে যেতে হবে।’
ইদরিস বলেন, ‘ওইদিন আমি গোসল করিনি। সেদিন বাড়িতে গিয়েছিলাম একজন ক্লিনারের মতো।’
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য তার সেই কঠোর পরিশ্রমের ফল পেতে যাচ্ছেন তিনি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার মেয়ে কলেজের পাঠ শেষ করবে। কলেজপড়ুয়া মেয়ে এবং তার বোনেরাও পার্ট টাইম চাকরি নিয়েছেন; যাতে তাদের বাবার আর কাজ করতে না হয়।
তবে বিপদের সময় যারা হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাদের ভুলে যায়নি তার মেয়েরা। তিনি বলেন, মাঝে মাঝে আমার সহকর্মী ক্লিনারদের কাছে গিয়ে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ান মেয়েরা। এ সময় তারা হাসতে হাসতে জানতে চান, কেন তাদেরকে খাওয়ানো হচ্ছে। আমার মেয়ে তখন তাদেরকে বলেন, ওইদিন আপনারা সবাই আমার জন্য উপবাস ছিলেন; এ কারণেই আজকের আমি হতে পেরেছি। আমার জন্য দোয়া করবেন যেন, আমি প্রত্যেকদিন আপনাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে পারি।
তার গল্পের ইতি টেনেছেন গর্বের সঙ্গে। ইদরিস বলেন, এখন আমি নিজেকে গরীব মানুষ মনে করি না। যাদের এরকম সন্তান আছে; তারা কীভাবে গরীব হতে পারেন?
সূত্র : এনডিটিভি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন