মোদির সামনে যে চ্যালেঞ্জ
কিছুদিন আগেই ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়েছে। এবারো বিপুল ব্যবধানে জিতেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি। তবে দ্বিতীয়বারের মতো দেশের ক্ষমতার আসনে বসে নরেন্দ্র মোদিকে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। চ্যালেঞ্জগুলো হলো-
কৃষকের ক্ষোভ : ভারতীয় বার্তা সংস্থা ইন্ডিয়া টুডে বলছে, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা মোদির প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে কৃষকের ক্ষোভ মোকাবেলা করা। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে কয়েক হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছেন বলে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কারণ দেশটির কৃষিখাতে এখন ব্যাপক সংকট চলছে। অথচ দেশটির ৭০ শতাংশের বেশি গ্রামীণ পরিবার এ খাতের ওপর নির্ভরশীল। তবে এই খাতে সংকটের অন্যতম কারণ ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং মৌসুমি বৃষ্টি অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় কৃষকরা তাদের শস্যে পানি দিতে পারছেন না। এতে দূষণকারীদের হাত থেকে রক্ষায় পানির উৎসের কাছে সশস্ত্র প্রহরী ও কারফিউসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে সরকারকে। আবার কৃষকদের অভিযোগ, তারা উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর জন্য ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। জাতিসংঘের তথ্য থেকে জানা গেছে, সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে ৪০ শতাংশ ফল ও সবজি ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর আগেই নষ্ট হয়ে যায়।
বেকারত্ব : মোদি সরকারের জন্য আরো একটি চ্যালেঞ্জ হবে দেশের বেকারত্ব কমানো বা লাগাম টেনে ধরা। যদিও দেশটির গড় হিসাবমতে, প্রতি মাসেই লাখ লাখ ভারতীয় নাগরিক নতুন চাকরিতে প্রবেশ করে। তবুও দেশটিতে চাকরির বিরাট ঘাটতি রয়েছে। সম্প্রতি সময়ে ফাঁস হওয়া এক তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ সালে গত ৪৫ বছরের মধ্যে দেশটির বেকারত্ব ছিল সবচেয়ে বেশি, ছয় দশমিক এক শতাংশ।
পররাষ্ট্রনীতি : পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও মোদির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যার মধ্যে একটি হচ্ছে, পরমাণু শক্তিধর চিরবৈরী পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটির বিরুদ্ধে তিনটি যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে ভারত। গত ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ৪০ ভারতীয় জওয়ান নিহত হওয়ার পর দুই প্রতিবেশী আকাশযুদ্ধেও লিপ্ত হয়েছিল। তবে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জয়ের পরেই নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানান ও শান্তিপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কথা বলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদিকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের কূটনীতিক সম্পর্ক কোনো সহজ বিষয় নয়। কারণ এর সঙ্গে কাশ্মীরের সমস্যা, ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রশ্নসহ আরো বিভিন্ন বিষয় জড়িয়ে রয়েছে। এ কারণেই হয়তো মোদির শপথ অনুষ্ঠানে নেপালের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও ইমরান খান তালিকায় নেই। এছাড়া ভারতের মাথ্যব্যথা রয়েছে চীনা প্রভাব নিয়েও।
দূষণ : গ্রিনপিস জানিয়েছে, ভারতীয় বাতাসেও রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ৩০টি শহরের মধ্যে ২২টিই হচ্ছে ভারতে। শিল্পকারখানার নিঃসরণ, গাড়ির ধোঁয়া ও পোড়া ফসল থেকে তৈরি হওয়া বিষাক্ত পানীয় দূষণকে বাড়িয়ে তুলছে। ল্যানসেটের এক তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে বিষাক্ত বাতাসের কারণে ভারতে ১২ লাখ ৪০ হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে। এতে আরো হাজার হাজার মানুষ নতুন করে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। প্রতি শীতে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিকর রাজধানীতে পরিণত হচ্ছে নয়াদিল্লি। অথচ মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলন, দেশের দূষণ প্রতিরোধে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু গত পাঁচ বছরে সে প্রতিশ্রুতির একটুও বাস্তবায়িত হয়নি।
মুসলমানদের কাছে পৌঁছানো : মোদিকে মুসলিমবিদ্বেষী হিসেবে মনে করা হয়। এই মানসিকতা থেকে মোদিকে বের হতে হবে এবং তাকে মুসলিমদের কাছে পৌঁছতে হবে। এর মধ্যে নির্বাচনের পরেই কিছু এলাকায় মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। যেমন, বিহারের একজন মুসলিমকে গুলি করে হত্যা এবং মধ্য প্রদেশের এক দম্পতির ওপর নির্যাতনের খবর প্রকাশ করেছে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। এসব ঘটনা মোদির ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে। কারণ তিনি বিধানসভার নবনির্বাচিত এমপিদের উদ্দেশে বলেছিলেন, আমরা পরবর্তী পাঁচ বছর সবার বিশ্বাস অর্জন এবং সম্মান জানিয়ে সবাইকে নিয়ে কাজ করব।
সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন