শেখ হাসিনা- নরেন্দ্র মোদি বৈঠক বিকেলে
জি–২০ শীর্ষ সম্মেলন শুরুর আগের দিন, শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক বসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নরেন্দ্র মোদির সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে টাকা–রুপিতে লেনদেন সুগম করা, কৃষি খাতে গবেষণা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বিষয়ে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও রেলপথের একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
শনিবার ৯ সেপ্টেম্বর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন হবে। বাংলাদেশসহ নয়টি দেশকে এই শীর্ষ সম্মেলনে ‘অতিথি দেশ’ হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এই সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শুক্রবার দুপুরে ঢাকা ছাড়ছেন।
এ উপলক্ষে গতকাল ঢাকায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল মোমেন বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে বলে আশা করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে এক. কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা সহযোগিতা। এটি দুই দেশের মধ্যে কৃষি গবেষণা খাতে জোরদার ভূমিকা পালন করবে। দুই. সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তি, যা ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
৩. ভারতের এনপিসিআই ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক; এর মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে নেটওয়ার্ক-টু-নেটওয়ার্ক সংযোগের মাধ্যমে রুপি ও টাকা পারস্পরিক লেনদেনের সম্পাদন সহজ হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পর্যায়ে সুগভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ, বিভিন্ন সময়ে পারস্পরিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমমনা অবস্থান দুই দেশের সম্পর্ককে গভীরতর করেছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে দুই দেশের সম্পর্ক অভাবনীয় গতি লাভ করেছে, যা সোনালি অধ্যায় হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। ভারত বাংলাদেশকে অন্যতম বন্ধুপ্রতিম এবং সহযোগী রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে বলেই জি-২০ সম্মেলনে অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের দুটি অধিবেশনে বক্তৃতা করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বর্তমান বিশ্ব সম্প্রদায়, বিশেষ করে বিশ্বের দক্ষিণাঞ্চলে (গ্লোবাল সাউথ) জলবায়ু পরিবর্তন, করোনা মহামারি–পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, ইউরোপে যুদ্ধের ফলে জ্বালানি-খাদ্যপণ্য-সারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার মতো যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, তা মোকাবিলার বিষয়গুলো তুলে ধরবেন। পাশাপাশি আর্থসামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের আমলে বাংলাদেশের অর্জিত অভাবনীয় সাফল্যের অভিজ্ঞতা বিশ্বনেতাদের সামনে উপস্থাপন করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে সৌদি যুবরাজ, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি ১০ সেপ্টেম্বর অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর তিনি জি-২০ সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে অংশগ্রহণ করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে নয়াদিল্লিতে যাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রমুখ।
আগামীকাল শনিবার জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর দেওয়া নৈশভোজে অংশ নিতে দিল্লি আসছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা হতে পারে। রোববার সকালের সম্মেলন শেষ করেই শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন। তিনি দেশে ফিরেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁকে ঢাকায় অভ্যর্থনা জানাবেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন