‘মোবাইল প্রতিষ্ঠানকে গোপনীয় তথ্য দিয়ে দিচ্ছে ফেসবুক’
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য মোবাইল ফোনসহ অন্য ডিভাইস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে ফেসবুক।
কর্তৃপক্ষ জানায়, গত এক দশকে সারা বিশ্বের স্মার্টফোনগুলো দিয়ে যখন ফেসবুক ব্যবহার শুরু হয়, তখনই প্রতিষ্ঠানটি অ্যাপল, অ্যামাজন, ব্ল্যাকবেরি, মাইক্রোসফট, স্যামসাংসহ প্রায় ৬০টি ডিভাইস প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করার চুক্তিতে যায়।
এই চুক্তির মাধ্যমে ফেসবুক আরো বেশি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে পারবে। কিন্তু এই চুক্তির বিষয়টি আগে প্রকাশ করা হয়নি। তাই ফেসবুকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ফেসবুকের অংশীদাররা কী মাত্রায় সুবিধা পাবে, তা এর আগে জানানো হয়নি। এর ফলে প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
এমনকি ব্যবহারকারীদের ফেসবুক বন্ধুদের তথ্যও তাঁরা পেয়ে যাবেন কোনো ধরনের সম্মতি ছাড়াই। যদিও ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ ঘোষণা দিয়েছিলেন, এ ধরনের তথ্য আর কখনো শেয়ার করা হবে না।
সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের দেওয়া তথ্যমতে, কোনো প্রতিষ্ঠান যদি মনে করে তাদের পর্যাপ্ত তথ্য দেওয়া হচ্ছে না, তাহলে তারা ব্যবহারকারীদের ফেসবুক বন্ধুদের কাছ থেকেও তথ্য নিতে পারবে।
অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই চুক্তি বর্তমানে চলমান রয়েছে। যদিও গত এপ্রিল থেকে তথ্য শেয়ারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে ফেসবুক।
এরই মধ্যে ফেসবুক আইনপ্রণেতা ও নিয়ন্ত্রণকারীদের ব্যাপক তদন্তের মুখোমুখি হয়েছে। গত মার্চ মাসে একটি সংবাদ প্রতিবেদনে রাজনৈতিক আলোচক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ১০ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্যের অপব্যবহার করার খবর প্রকাশিত হয়।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গোপনীয়তাবিষয়ক গবেষক সার্গে এজেলম্যান বলেন, ‘আপনারা হয়তো বা ভাবতে পারেন, ফেসবুক আর ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ভরযোগ্য। কিন্তু সমস্যা হলো, একটা মোবাইল ফোনে যত বেশি তথ্য জমা হতে থাকে এবং সেখানে যত বেশি অ্যাপস ঢোকানো হয়, এটা ততই গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ায়।’
তবে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে ফেসবুকের কর্মকর্তারা এভাবে তথ্য দেওয়াকে সংগত বলেই যুক্তি দেখাচ্ছেন। কোথাও কোনো তথ্যের অপব্যবহার হয়েছে এমন কোনো তথ্যও তাদের কাছে নেই বলে তাঁরা জানান।
ফেসবুকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইমি আরচিবং বলেন, ‘এই চুক্তিতে যাঁরা আছেন, তাঁরা অন্যভাবে, অন্য উপায়ে কাজ করে থাকেন। অন্য ডেভেলপাররা ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছে গেমসসহ অন্য সেবাগুলো পাঠায়। কিন্তু ডিভাইসের নির্মাতা-অংশীদাররা ফেসবুক ব্যবহারের অভিজ্ঞতাগুলো পাঠাতে পারবে।’
কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে ব্যবহারকারীর সম্পর্কের অবস্থা, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক শিক্ষা, কোনো অনুষ্ঠানের তথ্যও নিয়ে নিতে পারবে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, মোবাইল প্রতিষ্ঠানগুলো বাইরের কেউ না। তাদের আরো বেশি অংশীদারত্ব বাড়ানো উচিত। নিউইয়র্ক টাইমস পরীক্ষা করে দেখে, ফেসবুক ব্যবহারকারীর ‘ফ্রেন্ডসের’ও তথ্য পেয়ে যাবে মোবাইল প্রতিষ্ঠানগুলো। এমনকি যারা ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, তাদের তথ্যও পাবে।
বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে ফেসবুকের বেশ কয়েকজন সাবেক সফটওয়্যার প্রকৌশলী এবং নিরাপত্তা গবেষক বলেন, ফেসবুকের তথ্য শেয়ার করতে না চাইলেও তা অন্যের হাতে চলে যাওয়ায় আশ্চর্য হয়েছেন তাঁরা।
গবেষক ও গোপনীয়তাবিষয়ক পরামর্শক আশকান সোলতানি বলেন, ‘এটা এমন যে ঘরের দরজায় তালা দিয়ে তালা-চাবি মিস্ত্রি তাঁর সব বন্ধুকে চাবি দিয়ে রেখেছেন এবং তাঁরা এসে অনুমতি ছাড়া ঘরে ঢুকে লুটপাট করে যেতে পারে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন