মোহাম্মদপুরে বস্তিতে আগুন, প্রাণ ছাড়া বাঁচেনি কিছুই
রবিবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর শ্যামলী হাউজিং বস্তিতে আগুনের ঘটনায় চলছে হাহাকার। এতে পুড়ে ছাই হয়েছে বস্তির দুই শতাধিক ঘর। কেউ হতাহত না হলেও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বহু সাজানো সংসার।
তিন শতাধিক ঘর নিয়ে ছিল বিশাল এই বস্তি। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ যখন আগুন লাগে তখন বস্তির অধিকাংশ বাসিন্দা ঘুমিয়ে। আগুন লাগার পর আশপাশের বাসিন্দাদের হাঁকডাকে তাদের ঘুম ভাঙে। যে যার মতো বের হয়ে আসেন ঘর থেকে। ফলে কেউ হতাহত হয়নি। কিন্তু প্রাণ ছাড়া অধিকাংশ বস্তিবাসী রক্ষা করতে পারেনি মূল্যবান কোনো জিনিসপত্র।
রাশিদা বেগম ১৫২টি ঘর তদারকি করতেন। নিজের সম্বল এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা ধার করে জমি লিজ নিয়ে ঘরগুলো তুলেছিলেন। এখনও বেশ কিছু টাকা দেনা আছেন। এর মধ্যে ঘর পুড়ে ছাই।
রাশিদা বলেন, ‘জমি লিজ নিয়া ঘর তুলছিলাম, আমার সব শেষ! কিচ্ছু নাই আর, সব শেষ।’
তিন হাজার টাকা মাসিক ঘর ভাড়া নিয়ে একটি ঘরে থাকতেন জোৎস্না। ঢাকায় এসে অন্যের বাড়িতে কাজ করে ঘর সাজিয়েছিলেন। গত রাতের আগুনে পুড়ে সব শেষ।
পুড়ে যাওয়া ঘরের ছাইয়ের উপর বসেছিলেন জোৎসনা। বলেন, ‘সাড়ে দশটার পর আগুন লাগছিল। সকালে কাম আছিল, তাড়াতাড়ি ঘুমাইছিলাম। যারা ঘুমায়নাই তারা আগুন দেইখা চিল্লান দিছে। আমরা কোনো রকম ঘর থাইকা বাইরে আইছি। কিছু বাইর করতে পারি নাই।’
পোড়া ছাইয়ের মধ্যে সবাই খুঁজে ফিরছিলেন হারানো স্মৃতি। আগুনে পুড়েও যার যা বেঁচে গেছে তা সংগ্রহ করছেন তারা। স্থানীয়দের অনেকেই দেখতে এসেছেন ঘর পোড়া বাসিন্দাদের। কেউ কেউ এসেছেন সান্ত্বনা দিতে।
‘আগুন বস্তির দক্ষিণ দিক থেকে উত্তরের দিকে আসে। প্রাণ বাঁচাতে ইটের দেয়াল ভেঙে বের হয়েছেন অনেকে। জীবন বাঁচাতে পারলেও বাঁচেনি বইখাতা, টাকা, গয়না’- বলছিলেন বস্তির বাসিন্দা মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী নাজমা আক্তার রাহা।
বন্ধুর কষ্টের দিনে তাকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে এসেছেন স্কুলের বন্ধুরা। ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং বিভিন্ন সংগঠন। পাশের একটি নির্মাণাধীন ভবনে আপাতত ক্ষতিগ্রস্তদের রাখার ব্যবস্থা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সকাল থেকে ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ব্যবস্থা করা হয়েছে খাবার এবং কাপড়ের। তদারকি করছিলেন আদাবর থানা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি মনিরুজ্জামান মনিরের ব্যক্তিগত সহকারী খালিদ হোসেন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘আগুন লেগেছে তথ্য পেয়ে আমরা রাতেই ঘটনাস্থলে আসি। সকাল থেকে আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খাবার, পানি এবং প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবস্থা করা। কারও অন্য কোনো সাহায্য লাগলেও আমরা তা করছি। নারীদের সহযোগিতার জন্য আমাদের নারী কর্মীরা উপস্থিত আছেন।’
গৃহনির্মাণ বা সহায়তার কী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে-জানতে চাইলে খালিদ বলেন, ‘স্থানীয় সাংসদ এই মুহূর্তে দেশের বাইরে আছেন। তাই এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।’
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকেও অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে ঢাকাটাইমসকে নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির কর্মী শিখা আক্তার।
এর আগে রবিবার রাতে ছাগলের খামারে গরম হাওয়া দিতে আগুন জ্বালানো হলে তা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ভুক্তভোগীরা জানায়। এসময় খামারে ছয়টি ছাগল পুড়ে মারা যায়। বাতাসে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে এক ঘণ্টার বেশি সময় চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে পুড়ে যায় বস্তির দুই শতাধিক ঘর।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন