মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বালুবাহী ট্রাক চাপায় শিশু ও নারীর মর্মান্তিক মৃত্যু

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলাধীন ভুনবীর ইউনিয়ন অন্তর্গত পাত্রিকুল এলাকায় ভুনবীর-মির্জাপুর আঞ্চলিক পাকা সড়কে সোমবার (১জুলাই)সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বেপরোয়া গতির অবৈধ বালুবাহী ট্রাক চাপায় এক শিশু সাফিনা আক্তার সাদিয়া(৯) ও মধ্য বয়সী নারী পেয়ারা বেগম(৪৫)এর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

মর্মান্তিক এই মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী রাস্তা অবরোধ করে এবং প্রশাসন ও স্থানীয় অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসময় প্রায় দুই ঘন্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, নিহত পেয়ারা বেগম তার বোনের শিশুকন্যা সাফিনা আক্তার সাদিয়াকে সাথে নিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামীণ ডাক্তারের কাছে ওষুধের জন্য গিয়েছিলেন, ফেরার পথে প্রথমে একটি অবৈধ বালু বাহি ট্রাক তাকে রাস্তার পাশে চাপা দিলে শিশু মেয়েটি তার হাত থেকে ছিটকে দূরে পড়ে যায়,একই সময়ে পিছন থেকে দ্রুতগতিতে আসা ওপর আরেকটি বালুবাহি ট্রাক শিশু বাচ্চাটিকেও চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা এ ঘটনা দেখে ট্রাকগুলোকে আটক করার চেষ্টা করে কিন্তু সম্ভব হয়নি।তারা আহতদের হাসপাতালে প্রেরণ করার চেষ্টা করলে দেখা যায় ঘটনাস্থলেই পেয়ারা বেগমের মৃত্যু হয়। এ সময় শিশুকন্যাটি জীবিত থাকায় তাকে দ্রুত শ্রীমঙ্গল সরকারি হাসপাতালে প্রেরণ করেন সেখান থেকে মৌলভীবাজার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে বলে স্থানীয়রা জানান।

এ ঘটনায় হাজারো স্থানীয়রা রাস্তায় নিহত নারীর লাশ রেখে রাস্তা অবরোধ করে। এ ঘটনা শুনে প্রথমে ঘটনাস্থলে পুলিশ যান পরে স্থানীয়রা পুলিশকে লাশ উদ্ধার করতে বাধা দিলে উপজেলা চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় ও উপজেলা কর্মকর্তা আবু তালেবসহ পুলিশ প্রশাসনের তদন্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম ও অপারেশন কর্মকর্তা তাপস রায় ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা অবৈধ বালু ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে রাস্তায় গাছ ফেলে অবরোধ করে রাখে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদসহ সবাই ক্রমান্বয়ে তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করে, আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে। সর্বশেষ উপজেলা কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে অত্র এলাকায় অবৈধ বালু ব্যবসা আর করতে দেওয়া হবে না এমন অঙ্গীকারের পরে রাস্তার অবরোধ তুলে নেন।

স্থানীয়রা দাবি করেন অবৈধ বালু সিন্ডিকেট, মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পয়সা দিয়ে বছরের পর বছর এই অবৈধ ব্যবসা করে আসছে। অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা খুবই বেপরোয়া তারা একদিকে মানুষ মারছে অপরদিকে পরিবেশেরও বড় ধরনের ক্ষতি করছে।

এসময় স্থানীয়দের অনেকে অভিযোগ করেন বালু ব্যবসায়ীরা সেলো মেশিন দিয়ে রাত দিন মাটির গভীর থেকে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব নষ্ট করছে এবং জমিন ও বাড়ি ঘরের বড় ধরনের ক্ষতি করে যাচ্ছে যেকোন সময় হালকা-পাতলা ভূমিকম্প হলেই ঐ সমস্ত এলাকায় বড় ধরনের ভূমিধ্বসে নামতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
এ সময় বিক্ষুব্ধদের অনেকেই দাবি করেন এই সমস্ত অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে থাকেন এর সাথে কিছু সাংবাদিকদেরও দায়ী করে তারা।

এদিকে দ্বিতীয় দফা আবারো রাস্তা অবরোধ করেন, একই ইউনিয়নের দিঘীরপাড় এলাকার লোকজন, নিহত শিশু সাবিনা আক্তার সাদিয়া নিহত পেয়ারা বেগমের বোনের মেয়ে। নিহত সাফিনা আক্তার সাদিয়ার বাবার বাড়ি থেপাড়া এলাকায়। নিহত সাফিনা আক্তার সাদিয়ার বাবা একজন কৃষক।

উপজেলা কর্মকর্তা আবু তালেব জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, বালু চোরদের সাথে আমি নেই এবং আমি কখনো থাকবও না এরকম কোন অবৈধ কাজের সাথে যদি আপনারা আমার কোন সংশ্লিষ্টতা পান তাহলে ব্যবস্থা নিবেন আমি আইনের উর্ধ্বে নয়। তার এই বক্তব্যে এলাকাবাসী সন্তুষ্ট হয়ে এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়ের আশ্বাসে উভয় রাস্তার অবরোধ তুলে নেন। পরে পেয়ারা বেগমের মৃতদেহ পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার মর্গে প্রেরণ করেন, অপরদিকে শিশু সাফিনা আক্তার সাদিয়ার মৃতদেহ ও মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে। উভয়ের ময়নাতদন্ত শেষে আজ(মঙ্গলবার) তাদেরকে দাফন করা হবে।

অত্র এলাকার শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘাতক বালুর খালি ২টি ট্রাক আটক করা হয়, যাহার রেজি: নং- ঢাকা ড-১১-১৮৩২ ও রেজি: নং- ঢাকা ড-১১-২১৬৫ ড্রাইভার শাকিল (২৪) পিতা- দুদু মিয়া সাং- পাত্রীকুল, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার ও আরেকটি গাড়ীর ড্রাইভার- অজ্ঞাত।