যবিপ্রবিতে গভীর রাতে দুই ব্যক্তিকে আটকে রাখার অভিযোগ বৈষম্যবিরোধীর সাবেক নেতার বিরুদ্ধে

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) গভীর রাতে দুজন বহিরাগতকে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও যশোর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা মারুফ হোসেনের বিরুদ্ধে।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি (এনএফটি) বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ও যশোর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক যুগ্ম সদস্য সচিব ও শিক্ষা সেলের সম্পাদক। এসময় গাজী নামে এক বহিরাগতকে নিয়ে গভীর রাতে মুন্সী মেহেরুল্লাহ হলে অবস্থান করেন মারুফ।

জানা যায়, বুধবার (৮ অক্টোবর) রাত তিনটায় যবিপ্রবির শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন ও তার বন্ধু গাজী দুটি মোটরসাইকেলে (একটির লাইসেন্স নম্বর: যশোর-ল ১৫-১০৩৫ ও আরেকটি লাইসেন্সবিহীন) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জুয়েল ও জাহিদ নামক দুই বহিরাগতকে প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসের ভেতর প্রবেশ করান।

প্রধান ফটকের আনসার সদস্যকে মারুফ বলেন’ এ দুজন (জুয়েল ও জাহিদ) হত্যা মামলার আসামিকে সকালে পুলিশের কাছে দিব, এরা যাতে পালিয়ে না যেতে পারে দেখে রাখবেন’। এরপর দুজনকে আনসার সদস্যদের জিম্মায় রেখে মারুফ ও তার বন্ধু বাইক নিয়ে মুন্সী মেহেরুল্লাহ হলে প্রবেশ করে ও প্রায় দেড় ঘন্টা পর আবার শিক্ষার্থী ছাউনিতে আসে।

বহিরাগত একজনকে দেখতে না পেয়ে আনসার সদস্যদের গালিগালাজ করে এবং সাংবাদিক কেন জানল এ নিয়ে বাজে মন্তব্য করে মারুফ। পরবর্তীতে দৈনিক যায়যায়দিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে পৌঁছালে মারুফের বন্ধু গাজী পালিয়ে যায়। গাজীর পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে মারুফকে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান।

একপর্যায়ে আটককৃত জাহিদকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়ে আনসার সদস্য ও সাংবাদিককে মারুফ বলেন, এ দুটো হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি। এদেরকে চুড়ামনকাটি থেকে ধরে নিয়ে আসছি। এগুলোর একটু উপকার করতে চেয়েছিলাম হয়ে গেল বিপরীত। এরপর মারুফ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেও গাজী প্রবেশ করেনি। তবে গাজীর মোটরসাইকেল ভোর ছয়টায় মারুফ হল থেকে বের করে ক্যাম্পাসের বাইরে দিয়ে আবার হলে প্রবেশ করে।

মারুফ কর্তৃক আটককৃত জাহিদ বলেন, আমার সাথে মারুফ ও গাজীর কোনো পরিচয় নেই। তবে জুয়েলের সাথে ওদের পরিচয়। ওর সাথে কিছু আর্থিক দেনাপাওনা থাকতে পারে। জুয়েলের সাথে থাকায় ওরা আমাকে খাবার খাওয়ার কথা বলে এখানে নিয়ে আসছে।

মাহমুদুল হাসান নামে যবিপ্রবির এক শিক্ষার্থী বলেন, বৈষম্য বিরোধীর নেতা কর্তৃক ও বহিরাগত তার সহযোগীর সহযোগীতায় দুজন অজ্ঞাত লোককে শিক্ষার্থী ছাউনিতে রেখে আবার সহযোগীকে নিয়ে হলে প্রবেশ নিশ্চয়ই কোনো খারাপ ঘটনার ইঙ্গিত বহন করে। এত রাতে ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ করায় আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে আতংকিত আছি।

মারুফ ভাইয়ের দ্বারা এসব বহিরাগত প্রবেশের বিষয়টি আমাদেরকে হল ডাকাতি ও ২০২৩ সালে লিফটে চাকুরী প্রার্থী অপহরণের ঘটনাকে মনে করিয়ে দেয়। মারুফ হোসেনের বিরুদ্ধে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।

অভিযোগ অস্বীকার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের নেতা মারুফ হোসেন বলেন, রাতে তো এবিষয়ে কথা হয়েছে। এখন বিষয়টি নিয়ে কল করছিস বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না? আমি ও আমার বন্ধু গাজী হলে আসি। কোনো আসামিকে ক্যাম্পাসের মধ্যে রাখার সুযোগ নেই। আর জুয়েল ও জাহিদ এ নামে আমি কাউকে চিনিই না। এদেরকে শিক্ষার্থী ছাউনিতে রাখার প্রশ্নই আসেনা।

গভীর রাতে হলে বহিরাগত প্রবেশের বিষয়ে যবিপ্রবি মুন্সী মেহেরুল্লাহের হলের প্রভোস্ট ড. মোঃ আব্দুর রউফ সরকার বলেন, এ বিষয়ে এখন মাত্র জানলাম। হলে বহিরাগত প্রবেশে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে। সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গভীর রাতে শিক্ষার্থী ছাউনিতে দুজন বহিরাগতকে আটকের বিষয়ে যবিপ্রবি প্রক্টর মোঃ ওমর ফারুক বলেন, এ বিষয়টি তোমার থেকে মাত্র শোনলাম। ভুক্তভোগী বা কোনো শিক্ষার্থী যদি অভিযোগ করে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

উল্লেখ্য, মারুফ হোসেন ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল এবং সেসময় শিক্ষার্থী নির্যাতনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও বিভিন্ন অপরাধে বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে একবার বহিষ্কারও হয়। পরবর্তী জুলাই আন্দোলনে যুক্ত হয়ে যশোর বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের যুগ্ম-সদস্য সচিব হয় ও এ ব্যানারের মারুফের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।