যবিপ্রবিতে পাঁচ নিয়োগ নিয়ে বির্তক

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) অধ্যাদেশ বহির্ভূতভাবে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি পদে নিয়োগ দিয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) আর্থিক ও প্রশাসনিকের সদ্য দায়িত্ব প্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মোঃ জাকির হোসেন। ‘আর্থিক ও প্রশাসনিক’ দায়িত্বের ক্ষমতাবিধি সর্ম্পকে অবগত না হয়ে নির্দিষ্ট মেয়াদে নিয়োগের ব্যাপারটি ড. জাকিরের নির্দেশে নোটিশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো: আহসান হাবীব। তবে অধ্যাদেশ অনুযায়ী শুধুমাত্র উপাচার্য এ নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।

গত ৩ সেপ্টেম্বর যবিপ্রবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোঃ আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে তিনটি অনুষদের ডীন, একটি বিভাগের চেয়ারম্যান ও একটি ইনস্টিটিউটের পরিচালকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর ২৩(৫) ধারা অনুসারে যবিপ্রবি ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডীন পদে জিন প্রকৌশল ও জীব প্রযুক্তি (জিইবিটি) বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ জিয়াউল আমিন, বিজ্ঞান অনুষদের ডীন পদে রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ কোরবান আলি, ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের ডীন পদে অ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম (এআইএস) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ কামাল হোসেন কে দায়িত্ব পাওয়ার পরবর্তী দুই বছর পর্যন্ত ডীনের দায়িত্ব পালন করার জন্য বলা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর ২৫(২) ধারা মোতাবেক তিন বছরের জন্য পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং (পিএমই) বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ তোফায়েল আহমেদকে। এছাড়া ঐদিনই আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে জিইবিটি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ শেখ মিজানুর রহমানকে ড. এম. এ. ওয়াজেদ মিয়া উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ থেকে জানা যায়, যবিপ্রবির আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব প্রাপ্ত ড. জাকির হোসেন কর্তৃক তিনটি অনুষদের ডীন ও একটি বিভাগের চেয়ারম্যানের নিয়োগের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের সাথে সাংঘর্ষিক। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসারে উপাচার্য জৈষ্ঠতার ভিত্তিতে অনুষদের ডীন ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান নিয়োগ করতে পারেন। ডীন নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর ২৩(৫) ধারাতে উল্লেখ আছে, ‘প্রত্যেক অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে এবং ভাইস-চ্যান্সেলর কর্তৃক নির্দিষ্টকৃতভাবে অধ্যাপকদের মধ্যে উহার ডীন পদ আবর্তিত হইবে এবং তিনি দুই বৎসরের মেয়াদে তাহার পদে বহাল থাকিবেন’। এছাড়া বিভাগীয় চেয়ারম্যান নিয়োগের বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ২৫(২) ধারায় উল্লেখ আছে, ‘বিভাগীয় শিক্ষকদের মধ্য হইতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে তিন বৎসরের মেয়াদে ভাইস-চ্যান্সেলর ( উপাচার্য) কর্তৃক বিভাগীয় চেয়ারম্যান নিযুক্ত হইবেন’।

অপরদিকে গত ২৯ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এক পরিপত্রে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ও ট্রেজারাররা পদত্যাগ করছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলরসহ অন্য কর্মকর্তা পদত্যাগ না করা সত্ত্বেও কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। ফলে তাদের পদত্যাগ ও অনুপস্থিতিজনিত কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রমে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান রাখা ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার নিমিত্তে নিয়মিত ভিসির নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কাউন্সিল, ক্ষেত্রমতে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনাক্রমে একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে দিয়ে সাময়িকভাবে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে পরামর্শ দেওয়া হলো।

এবিষয়ে ডিনস কমিটির আহ্বায়ক ও জীববিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ভিসি বা প্রোভিসি ছাড়া অন্য কেউ এমন নিয়োগ দিতে পারেন না। তবে জরুরি প্রয়োজনে আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমগুলো মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তি সীমিত পরিসরে দায়িত্ব দিতে পারেন। কিন্তু কয়েকটি পদে দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ওনি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েছেন কিনা আমার জানা নেই। তাছাড়া আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে থেকে কি কি করতে পারবেন সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা নেই আমার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোঃ আহসান হাবীব বলেন, আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বের পদটি উপাচার্য/উপ-উপাচার্যের পদমর্যাদা বহন করে কিনা সেটা আমি জানি না। এ পদে থেকে তিনি কোনো ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন বা কি ধরনের সুবিধা প্রাপ্ত হবেন সেটা সম্পর্কেও আমার কোনো সঠিক ধারণা নেই। তবে ওই পাঁচজনকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে নিয়ম মেনেই সবকিছু করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

এবিষয়ে যবিপ্রবির ‘আর্থিক ও প্রশাসনিক’ দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. মোঃ জাকির হোসেন বলেন, জরুরি ভিত্তিতে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন অনুষদের ডীন ও বিভাগীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নোটিশ উল্লেখিত ২/৩ বছর সময় পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের যে কথাটি উল্লেখ আছে সেটি ভুল, এটি শীঘ্রই পরিবর্তন করা হবে। আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে থেকে কি করতে পারব আর কি করতে পারব না এবিষয়ে আমি এখনও স্পষ্ট কিছু বলতে পারছিনা। এবিষয়ে আমাকে আরো জানতে হবে।