যবিপ্রবির ক্যাফেটেরিয়ায় চড়া দামে খাবার বিক্রির অভিযোগ, নীরব ভূমিকায় পরামর্শ দপ্তর পরিচালক

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় চড়া দামে খাবার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অবস্থিত বাইরের হোটেলের চেয়ে বাড়তি দাম রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একাধিক পোস্টে সমালোচনা করছে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে মূল্য তালিকা নির্ধারণ ও মনিটরিংয়ে নীরব ভূমিকার অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তর পরিচালকের বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই কোন রকম মূল্য তালিকা প্রণয়ন ছাড়া নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির অযুহাত দেখিয়ে চড়া দামে খাবার বিক্রি করছে ক্যাফেটেরিয়া। যেখানে ক্যাম্পাস-সংলগ্ন বাইরের ভাতের হোটেলগুলোর খাবারের দাম ক্যাফেটেরিয়ার দামের চেয়ে কম।
এছাড়া গেলো দুর্গাপূজার ছুটিতে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল ক্যাফেটেরিয়া। খাবারের মান ও পরিমাণ নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীরা।বাইরের খাবারের হোটেলে একপ্লেট খিচুড়ি ২০ টাকা এবং দেড় প্লেট ৩০ টাকা সেখানে ক্যাফেটেরিয়ায় একপ্লেট খিচুড়ি ৩০ টাকা ও দেড় প্লেট ৫০ টাকা। মাছ-মাংসের আকার বাইরের হোটেলের তুলনায় ছোট।
ক্যাফেটেরিয়ার একশত টাকা সমমূল্যের বিরিয়ানিতে ভাতের ও মাংসের পরিমাণ যৎসামান্য। এখানে প্রতিটি সিংগাড়ার মূল্য দশ টাকা যেখানে আকারে বেশি পার্থক্য না থাকলেও বাইরের হোটেলগুলোতে পাঁচ টাকা। প্রতিটি ডিম-মোগলাই মূল্য একটি ডিম চল্লিশ টাকা আর ডাবল ডিম ষাট টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পানির ট্যাংক পরিষ্কার না করার ফলে ট্যাংকির তলানিতে জমেছে পুরো ময়লার স্তর। ক্যাফেটেরিয়ার ছাদে এই ট্যাংকগুলো সার্বক্ষণিক খোলা আকাশের নীচে ঢাকনা বিহীন অসংরক্ষিত অবস্থায় থাকে, যেখান থেকে ক্যাফেটেরিয়ায় পানি ব্যবহার ও সুপেয় পানি সরবরাহ করা হয়। এছাড়া মূল্য তালিকা নির্ধারণ, পরিদর্শন ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার অভিযোগও তুলেছে শিক্ষার্থীরা।
ইমতিয়াজ আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাফেটেরিয়াতে খাবারের পরিমাণ টাকা অনুযায়ী দেওয়া হয়। কোনো কাজে কিংবা আড্ডা দিতে বসলে কিছুক্ষণ পর পর জিজ্ঞেস করে কি খাবেন! কি খাবেন! যেন কোনো হটেলে খাইতে আসছি। ব্যাপারটা এমন যে, কিছু খেলে বসবেন তা না হলে সিট ছেড়ে দেন। তাই কর্তৃপক্ষেকে আবেদন জানাচ্ছি যে ক্যাফেটেরিয়া নামটা কেটে দিয়ে “যবিপ্রবি আধুনিক ভাতঘর” রাখা হোক। এটা ক্যাফেটেরিয়া, কোন ভাতের হোটেল না। খাবারের মান বাড়ান দাম না।
আসাদ রহমান প্রিয় নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, দুইদিন তাদের ১০০ টাকার তেহারি খেয়েছি, দুইদিন মিলে টোটাল এক সেন্টিমিটার আকারের হাড্ডিসহ মাংসের টুকরা পেয়েছি মোট সাত টুকরা। এখানে কোথায় কোয়ান্টিটি আর কোথায় কোয়ালিটি! মনে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের জন্য নামি-দামি রেস্তোরাঁ খুলে বসেছে।
ক্যাফেটেরিয়ার দায়িত্বে থাকা কোম্পানি অক্টোপাস স্ট্রিমলাইন্ডের আব্দুল্লাহ আল মামুন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি মনে করি আমরা বাইরের হোটেলগুলোর চাইতে তুলনামূলক মানসম্পন্ন খাবার সরবরাহ করছি। আমরা সিঙ্গারাতে বাদাম দিচ্ছি ও সাইজ বড় করেছি, খিচুড়িতে পোলাওয়ের চাল ব্যবহার করছি। তাই আমাদের ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের দাম বেশি। তবে অভিযোগ যেহেতু উঠেছে আমরা এখন থেকে চেষ্টা করবো খাবারের দাম কমানোর।
মূল্য তালিকা নির্ধারণের বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি সার্বিক দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মোঃ রাফিউল হাসান। তিনি বলেন, খাবার যেন স্বাস্থ্যকর ও রুচিসম্মত হয় সে বিষয়ে আমরা ক্যাফেটেরিয়া কর্তৃপক্ষকে কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছিলাম তবে খাবারের মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে তাদের সাথে কোন আলোচনা হয়নি এখনো। আমরা খুব শীঘ্রই তাদের সাথে খাবারের মূল্য তালিকা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা করবো।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন