যমুনার পানি বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপরে

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং তিস্তা নদীতে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের অধিকাংশ গেট খুলে দেওয়ায় সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ১৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয়ের ডাটা এন্টি অপারেটর আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা ছাড়াও কাজীপুর, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে সিরাজগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। যমুনার করাল গ্রাসে অনেকে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন।
যমুনার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দুর্ভোগও বাড়ছে। পানিবন্দি মানুষ অসহায় জীবনযাপন করছেন। বন্যাকবলিতদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট। বন্যাকবলিত এলাকায় সরকার থেকে যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে, তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
যমুনা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। গত সাত দিনে কাজীপুর, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলায় পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বন্যাকবলিত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলার মিল্ক ভিটার খামারিরা গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
সিরাজগঞ্জ ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়নের ১৯৪টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৪ হাজার ৮১৬ পরিবার ও ৬১ হাজার ১৮৬ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের মধ্যে ৮৪ টন চাল ও তিন লাখ ৩৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
শাহজাদপুর কৈজুরী ইউপির হাটপাচিল গ্রামের বুলবুলি বেগম, সোলেমান ও সাইদুল বলেন, ‘সকালে বসতবাড়ি ঠিকই ছিল। কিন্তু রাতে যমুনার ভাঙনে অধিকাংশ চলে যায়। ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠে ছেলেমেয়েকে নিয়ে যা পেরেছি, তা সরিয়ে নিয়েছি।’
একই গ্রামের জলিল ও হানিফ বলেন, ‘নদীতীরে বসতভিটা যেভাবে ভাঙছে, কখন যে সবকিছু নদী গ্রাস করে নেয়, এমন আতঙ্কে সব সময় থাকতে হচ্ছে।’
ইউপি সদস্য আবদুল লতিফ জানান, মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে পাঁচ শতাধিক বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, পাউবো খোঁজ নিতেও আসেনি।
শাহজাদপুরের কৈজুরী ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ভাঙনের বিষয়টি পাউবো ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু তারা শুধু আশ্বাসই দিয়েছে। কাজের কাজ কিছুই করছে না।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানান, বন্যাকবলিত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ মজুদ রয়েছে। এরই মধ্যে বন্যাকবলিত পরিবারের মাঝে ৮৪ টন চাল ও তিন লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বাড়ায় জেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে। এ জন্য পাউবো সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা জানান, বন্যাকবলিতদের মধ্যে এরই মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বন্যাকবলিত পাঁচটি উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় থেকে পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি চিড়া, এক কেজি লবণ, এক কেজি চিনি, ডাল, দিয়াশলাই, মোমবাতি, মুড়িসহ দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপজেলাওয়ারি দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সার্বক্ষণিক বন্যা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন। বন্যায় যাতে ক্ষয়ক্ষতি কম হয় এবং বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন




















