যমুনা নদীর ভয়াল থাবায় নয়ন মণির কবরও রক্ষা করতে পারলো না প্রতিবন্ধী বাবা
টাঙ্গাইল ভূঞাপুরের নজরুল ইসলাম ওরফে নজরুল পাগলা বয়স প্রায় ৫৫। যমুনা নদীর ভয়াল থাবায় এক নিমিষেই তার ৬ শতাংশ বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন। এখন বসতভিটার অল্প কিছু অবশিষ্ট জায়গা রয়েছে।
সেখানে কবর দেওয়া হয়েছিল তার মেয়ে নয়ন মণিকে। অবশেষে মেয়ের কবরটাও যমুনা নদী গ্রাস করছে। মেয়েটির কবর রক্ষায় শেষ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে কবরের পাশে কান্না করছে অসহায় মা-বাবা।
নজরুলের বাড়ি ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা উত্তরপাড়া গ্রামে। নজরুলের বাড়িটি ছিল নদীরপাড় ঘেষা। নজরুল প্রতিবন্ধী। তার দুই মেয়ে ও দুই ছেলে ছিল। প্রায় ৫-৬ মাস আগে ছোট মেয়েটি গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করে।
পরে মেয়েটির লাশ নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়। গত কয়েক দিনের যমুনার কড়ালগ্রাসে কবরটা ভেঙে নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নজরুল ইসলাম এই প্রতিনিধিকে বলেন, আমার মেয়ে নয়ন মণি কোনাবাড়ি দাখিল মাদরাসায় ৭ম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী ছিল। মণি বলেছিল, বাবা আমি কোরআন শরীফ হাতে নেব, তুমি কিনা দিও। তার কিছুদিন পরেই সকলের নজর এড়িয়ে মেয়েটি ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে মেয়েটিকে নিজ বাড়িতে কবর দেই।
কিন্তু যমুনার ভাঙনে মেয়ের কবর রক্ষা করতে পারলাম না, চোখের সামনে নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদের বাড়ির সামনে জিওব্যাগ ফেলছে। অথচ অসহায়দের বাড়ির সামনে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে না।
যার কারণে ৬ থেকে ৭০০ মিটার অংশে ব্যাপকহারে ভাঙছে। যদি জিওব্যাগ ফেলা হতো তাহলে তার বাড়ি ও মেয়ের কবরসহ অন্যদের বসতভিটা রক্ষা পেত। প্রশাসনের কাছে দাবি, ভাঙনরোধে যেন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
নিকরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাসুদ জানান, চলতি বন্যায় কমপক্ষে ২ শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যা এখনও চলমান রয়েছে। অনেকাংশে জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। ভাঙন কবলিত অন্যান্য এলাকায় জিওব্যাগ ফেলার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, আশা করছি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
এছাড়া ভাঙন কবলিত পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হবে। যমুনা নদীর ভাঙনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বেলাল হোসেন জানান, উপজেলার চিতুলিয়াপাড়া, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, মাটিকাটা ও পাটিতাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙনরোধে ইতোমধ্যে জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। নতুন করে যেসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে সেসব এলাকা পরির্দশন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন