মৎস্য অফিস
যশোরের ঝিকরগাছায় ৭ হাজার চাষীর বিপরীতে কর্মকর্তা একজন, সংকটে সেবা প্রার্থীরা


আনিচুর রহমানের পুকুরে গত সপ্তাহে মাছের পাখনায় সাদা দাগ দেখা দিয়েছিল,হঠাৎ মাছ মারা যেতে থাকে। উপজেলা থেকে বেশ দূরত্বে মাছের ঘের থাকায় সমাধান করার চেষ্টা করেন স্থানীয় মাছের খাদ্য ও ওষুধ বিক্রেতার কাছ থেকে। কিন্তু আলীর ক্ষতি হয়ে গেল প্রায় ৪০ হাজার টাকা। অবশেষে দারস্থ হলেন সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার, কার্যালয়ে। কর্মকর্তা তাৎক্ষনিক ছুটে গেলেন সেখানে। সমাধান হলো। ঝিকরগাছার হাজার হাজার মৎস্য চাষির গল্প এখন আনিচুরের মতোই—একটি মাত্র পদে থেমে থাকা সরকারি ঘড়ির নীচে দীর্ঘশ্বাস জমা হচ্ছে। এমন একজন সেবা পেলেও না পাওয়ার আক্ষেপ অনেকের।
ঝিকরগাছা উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে,ঝিকরগাছায় বার্ষিক মৎস্য উৎপাদন: ১১,৫০০ মেট্রিক টন (২০২৪-২৫ অর্থবছর)। মৎস্য চাষির সংখ্যা: ৫০০০+ (৮৫% ক্ষুদ্র চাষি)। বর্তমান জনবল: ১ কর্মকর্তা, ১ অফিস সহকারী (ফিল্ড স্টাফ শূন্য)।
উপজেলা সদর থেকে বাঁকড়ার মাছ চাষের শেষ সীমানার দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার আর গঙ্গানন্দপুর এর দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। এছাড়াও উপজেলার মাছ চাষের এলাকা গুলো বেশ দূরে হওয়ায় চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন উপজেলার মাছ চাষীরা।উপজেলা জুড়ে ৭ হাজার ৭৫৪ টি পুকুর, ১৮টি সরকারি জলাশয়, ১২টি খাল, ৯টি বাঁওড়, ৭ টি বিল ও ২ টি নদী রয়েছে। এর বিপরীতে মাছ চাষীর সংখ্যা ৪ হাজার ৯৮৯ জন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জীবিকা নির্বাহ করে প্রায় ৭ হাজার জন।
উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের মৎস্য চাষি আব্দুর রহিম বলেন, “গত মাসে আমার পুকুরের মাছে সমস্যা হয়েছিলো। স্থানীয় কীটনাশক কোম্পানির প্রতিনিধির সহায়তায় সমাধান করি। আমার এখান থেকে উপজেলায় গিয়ে সেবা নেওয়া প্রায় ৫০ কিলোমিটার রাস্তা। যা ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষা। আমাদের এদিকে কোন কর্মকর্তা না থাকায় মৎস্য অফিসের সেবা নেওয়ার মতো মনমানসিকতা আমাদের নেই। অনেক চাষি অভিযোগ করেন, প্রযুক্তিগত সহায়তা, সরকারি ভর্তুকি বা প্রশিক্ষণের তথ্য পেতে দীর্ঘসূত্রিতা হয়, যা তাদের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অ.দা.) নান্নু রেজা বলেন, “উপজেলায় ৫০০০ এর বেশি নিবন্ধিত মৎস্য চাষি রয়েছেন। প্রতি মাসে গড়ে ২৫০+ চাষি পরামর্শ নিতে আসেন, কিন্তু একা সবাইকে সময় দেওয়া সম্ভব হয় না। মাঠপর্যায়ে গিয়ে হ্যাচারি পরিদর্শন, রোগ নির্ণয় বা প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো কাজ জটিল হয়ে পড়েছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, উপজেলায় একটি পূর্ণাঙ্গ মৎস্য দপ্তরের জন্য কমপক্ষে ৩ জন কর্মকর্তা ও ৫ জন ফিল্ড সহকারী প্রয়োজন, যা দীর্ঘদিন ধরে অনাবেদিত রয়েছে।
মৎস্য বিশেষজ্ঞ ড. মো. আলিমুল হক বলেন, “একটি উপজেলায় কমপক্ষে ৫-৭ জন বিশেষজ্ঞ থাকা উচিত মৎস্য স্বাস্থ্য, প্রজনন ও বিপণন ব্যবস্থাপনায়। অটোমেশন ও ডিজিটাল রেকর্ড চালু করলে চাপ কমতে পারে।
স্থানীয় চাষিরা দাবি করছেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অতিরিক্ত কর্মকর্তা নিয়োগ, মোবাইল টিম গঠন এবং চাষিদের নিয়ে কমিউনিটি ভিত্তিক নেটওয়ার্ক তৈরি করা হোক।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন