যশোরের বেনাপোলে কলেজ ছাত্র অপহরণ ও গুমের অপরাধে তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

বেনাপোল বাজার থেকে রেজওয়ান হুসাইন নামে এক কলেজ ছাত্রকে অপহরণ ও গুমের অভিযোগে বেনাপোল পোর্ট থানার সাবেক তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বুধবার (২৮ আগষ্ট) দুপুরে রেজওয়ানের ভাই রিপন হোসেন বাদী হয়ে যশোর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।

বিচারক মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য বেনাপোল পোর্ট থানার ওসিকে আর্দেশ দিয়েছেন। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী আলমগীর সিদ্দিকী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় এজাহার ভুক্ত আসামিরা হলেন, বেনাপোল পোর্ট থানার সাবেক ওসি অপূর্ব হাসান, ওসি তদন্ত খন্দকার শামীম আহমেদ ও এস আই নূর আলম।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, বেনাপোল মহিষাডাঙ্গা গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে রেজওয়ান বাগআঁচড়া কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলো। ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে সে বেনাপোল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পাশে রেজাউলের চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলো। এসময় বেনাপোল পোর্ট থানার সাবেক এসআই নূর আলম ও অপর একজন মোটরসাইকেল নিয়ে সেখানে যায়।

এরপর রেজওয়ানের নাম জানতে চায়। সে নাম বললে তোকেই খুঁজছি বলে মোটরসাইকেলে উঠতে বলে। এরপর তাকে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন থানায় গেলে ওসি অপূর্ব হাসান তাদের বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। অন্যথায় সকলকে গুম করা হবে বলে হুমকি দেয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ৭ আগস্ট রেজওয়ান নিখোঁজ উল্লেখ করে জিডি করতে গেলে ওসি তদন্ত খন্দকার শামীম আহমেদ জিডি লেখা সঠিক হয়নি বলে কাগজ ফেরত দেন।

এরপর নিজের মনগড়া একটা জিডি লিখে তা লিপিবদ্ধ করে। ওই ঘটনার পর থেকে অদ্যবধি রেজওয়ানের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। রেজোয়ানের পরিবারের ধারণা, পুলিশ আটকের পর তাকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে। ওই সময় পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় মামলা করতে পারেনি তার পরিবার।

বর্তমানে প্রেক্ষাপটে সুষ্ঠু ন্যায় বিচার পেতে আদালতের মাধ্যমে মামলা দায়ের করেছেন রেজওয়ানের ভাই রিপন হোসেন। রেজওয়ানের পরিবারের দাবি আটকের প্রথম থেকে সর্বশেষ খোঁজখবর এসআই নুর আলম সব জানে।

নিখোঁজ রেজওয়ানের পিতা মিজানুর রহমান বলেন, আজ আট বছর হলো আমার ছেলের কোন খোঁজ খবর নেই। ২০১৬ সালের ৪ আগষ্ট বেনাপোল বাজার থেকে শত শত মানুষের সামনে দিয়ে তাকে এস আই নুর আলম ও একজন সহযোগি মিলে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এখন আমার একটাই চাওয়া আমার ছেলে কোথায় আছে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

এদিকে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান, এস আই নুর আলম ক্ষমতার দাপটে পোর্টথানাথীন এলাকায় মানুষকে জিম্মি করে ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা জোর পূর্বক আদায় করেছে। কেউ টাকা দিতে না চাইলে মিথ্য মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়ে তাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। আর সেই অবৈধ টাকা দিয়ে বেনাপোল পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড বড়আঁচড়া গ্রামে তৈরী করেছেন তিন তলা বিশিষ্ট আলিশান বাড়ি। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা।

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী আলমগীর সিদ্দিকী জানান, গতকাল যশোর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রেজওয়ান নামে এক কলেজ ছাত্রকে অপহরণ সহ গুমের ঘটনায় তার ভাই রিপন হোসেন বাদী হয়ে বেনাপোল পোর্ট থানার সাবেক ওসি অপূর্ব হাসান, ওসি তদন্ত খন্দকার শামীম আহমেদ ও এস আই নূর আলমের নামে মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার বিষয়ে বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি সুমন ভক্ত জানান, শুনেছি যশোর আদালতে বেনাপোল পোর্টথানার সাবেক ৩ পুলিশ কর্মকর্তার নামে মামলা হয়েছে তবে এখন পর্যন্ত কোন কাগজ হাতে পায়নি। কাগজপত্র হাতে পেলে আপনাদেরকে জানাতে পারবো।