যশোরের শার্শায় বিদ্যুৎ সেচ লাইসেন্স ও সংযোগের নামে ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ
যশোরের শার্শা উপজেলায় সেচ লাইসেন্স ও বিদ্যুৎ সংযোগের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। কারোর বিরুদ্ধে ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। সব মিলিয়ে উপজেলা কৃষি দপ্তর এখন রীতিমত দূর্ণীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
উপজেলার একাধিক ইউনিয়নে সেচ সংযোগ লাইসেন্স দেওয়ার নামে সংযোগ প্রদানকারীদের নিকট থেকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সেচ আইন বর্হিভুত ভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ আদায় করছে। উপজেলা সেচ কমিটির সিদ্ধান্ত মতে ভুমি, কৃষি, পল্লী বিদ্যুৎ ও বিএডিসি সেচ অফিসের প্রতিনিধির সমন্বয়ে যাচাই বাছাই সাপেক্ষে যৌথ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের পর উপজেলা সেচ কমিটি সরকারী বিধি মোতাবেক লাইসেন্স প্রদান করে থাকেন। এরা সকলেই ঘুষ বানিজ্যের সাথে জড়িত। ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকতারা প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে সেচ লাইসেন্স দেওয়ার নামে সেচ গ্রাহকদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যারা ঘুষের টাকা দিচ্ছে তারা সেচ লাইসেন্স ও বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছে আর যারা ঘুষের টাকা দিচ্ছে না তারা হয়রানীর শিকার হচ্ছে।
এমনি কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে শার্শা উপজেলার উলাশী ও বাহাদুরপুর ইউনিয়নে। এ দুই ইউনিয়নে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকতা মোস্তাফিজুর রহমান গভীর ও অগভীর সেচ লাইসেন্স ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা বলে উলাশী গ্রামের নজরুল ইসলামের নিকট থেকে ৬০ হাজার টাকা, মনিরুল ইসলামের নিকট থেকে ২০ হাজার টাকা, বেনেখড়ি গ্রামের শফিউর রহমানের নিকট থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা,হাড়িখালি গ্রামের ১০ হাজার টাকা, পানবুড়ি গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের নিকট থেকে ২০ হাজার টাকা, বুরুজবাগান গ্রামের আব্দুল হামিদের পুত্র মোজাম্মেল হোসেনের নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকা, বাহাদুরপুর ইউনিয়নের মানিক ও হানিফের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা।
এ দিকে বড়বাড়ীয়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের পুত্র সাইদুজ্জামানের নিকট থেকে গভীর নলকুপের ৮ খুটির লাইন নির্মানে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহন করে ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকতা মোস্তাফিজুর রহমান। নানা জটিলতার কারণে বিদ্যুত সংযোগ না হওয়ায় দেনদরবারের মাধ্যমে মোস্তাফিজুর রহমান কে ঘুষের টাকা ফেরত দিতে হয়েছে।
এ ঘটনায় কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকতা তরুণ বালাকে প্রধান করে তদস্ত কমিটি গঠন করলেও অজ্ঞাত কারণে ঘটনাটি ধামাচাপা পরে যায়। এদিকে ডিহি, লক্ষণপুর নিজামপুর ও বেনাপোল ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একই ধরণের অভিযোগ রয়েছে।
এসব ইউনিয়নে অধিকাংশ সেচ লাইসেন্স ও বিদ্যুৎ সংযোগ নীতিমালা কাগজ কলমে আইন সঠিক থাকলেও বাস্তবে তার কোন মিল খুজে পাওয়া যাবে না। অভিযোগ উঠেছে ঘুষ বানিজ্যের সাথে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ সেচ কমিটি জড়িত রয়েছে। এলাকাবাসির দাবি যৌথ বিভাগীয় তদন্ত হলে সকল ঘটনার প্রমাণ মিলবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ মন্ডল জানান, তার আনিত অভিযোগ সঠিক নয়। তবে ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ঘুষ বানিজ্যের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। তাকে শোকজ করা হয়েছে। ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তদন্ত কমিটির দাবী মৌখিক ভাবে প্রাপ্ত অভিযোগকারীরা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও যশোর উপ-পরিচালক মহোদয়ের দপ্তর থেকে আরও দুইটি তদন্ত কমিটি করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র পাল জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে কোন লিখিত অভিযোগ পায়নি। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবন্থা নেয়া হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ যশোরের উপ-পরিচালক মনঞ্জুরুল হক জানান, শার্শা উপজেলার ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ঘুষ বানিজ্যের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে দোষী প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন