যাত্রী সংকটে আরো হজ ফ্লাইট বাতিলের আশঙ্কা!

আসন্ন হজে এবছর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ৬৩ হাজার ৫৯৯ যাত্রী বহন করবে। ইতোমধ্যে ৩২ হাজারের উপরে হজযাত্রী বহন করেছে। তবে হজ ফ্লাইটের ১৫ দিন অতিবাহিত হতে চললেও এখনো প্রায় ৭ হাজার টিকেট বিক্রি হয়নি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। ফলে বিমানের একটি সূত্র আশঙ্কা করছে এ সপ্তাহে আরো কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল হতে পারে। খবর পরিবর্তন ডটকমের।

জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে এবছর ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ জন পবিত্র হজব্রত পালনে সৌদি আরব যাচ্ছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ৬৩ হাজার ৫৯৯ যাত্রী বহন করবে এবং একইভাবে সৌদি এয়ারলাইন্স বাকি অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করবে।

বিমান গত ১৪ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১৮৭টি ফ্লাইট সৌদি আরবে যাবে (ডেডিকেটেড-১৫৫ এবং শিডিউল-৩২)।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, বিমানের এখনো পর্যন্ত ৭ হাজার টিকেট বিক্রি হয়নি। এর মধ্যে শেষের দিকে চার হাজার টিকেট অবিক্রিত রয়েছে। বাকি তিন হাজার মাঝের কিছুদিন টিকেট অবিক্রিত রয়েছে।

তিনি জানান, যেহেতু শেষের দিকে এখনো সময় বাকি আছে, তাই খুব সমস্যা হবে না। কিন্তু ২৯ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত হজের তিন হাজার টিকেট এখনো বিক্রি হয়নি।

অন্যদিকে, কিছু হজ এজেন্সি সৌদিতে বাড়ি ভাড়াই এখনো ঠিক করতে পারিনি। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে তারা সবকিছু ঠিক করতে পারবে না, যার কারণে ফ্লাইট বাতিল হওয়ার সম্ভবনা থেকেই যাচ্ছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, বিমানের এখনো ৭ হাজার টিকেট অবিক্রিত রয়েছে। ইতোমধ্যে হজযাত্রীর জন্য টিকিট কাটতে ৫২৮টি ট্রাভেল এজেন্সিকে ই-মেইলের মাধ্যমে অবহিত করা হয়। আগামী ৭ আগস্টের (ভিসা ইস্যুর শেষ দিন) মধ্যে এসব টিকিট কাটা না হলে বড় ধরনের ফ্লাইট সংকটে পড়বেন হজযাত্রীরা।

তিনি বলেন, এ বছর সৌদি কর্তৃপক্ষ বিমানের বাড়তি কোনো স্লট দেয়নি। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিমানের টিকিট সংগ্রহ করতে হবে হজযাত্রীদের।

গত বছর ভিসা জটিলতায় যাত্রী না পেয়ে ২৪টি হজ ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল বিমান। তাতে ৪০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে হয়। ওই জটিলতা এড়াতে সরকার এবার ভিসা হওয়ার আগেই সব এজেন্সিকে নিজ নিজ যাত্রীদের বিমান টিকিট সংগ্রহ করতে বলেন।

তবে হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) ও হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদ বলছে- রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ না দিলেই ঘাটতি থেকেই যাবে ও ফ্লাইট বাতিল হবে।

বাংলাদেশে হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদ বলছে, হজের জন্য প্রাক-নিবন্ধন করা হয়েছে প্রায় দেড় বছর আগে। নিবন্ধিত হওয়ার পরও শারীরিক বা আর্থিক সমস্যা কিংবা অন্য কারণে অনেকে হজে যেতে পারছেন না। আবার সরকার হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্টের সীমা বেধে দেওয়ায় সেই শূন্যস্থান পূরণ হচ্ছে না। টিকেট অবিক্রিত থাকার এটাও একটা কারণ।

বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নাসের বলেন, এবছর হজের জন্য যত সংখ্যাক হজযাত্রী নিবন্ধন করেছিল, এর মধ্যে কেউ মারা গেছেন বা অসুস্থ হয়েছেন। ফলে যারা যেতে পারছেন না, তাদের সকলের রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ দিতে সরকারের কাছে দাবি করছি।

জানা যায়, মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থতার মত অনিবার্য কারণে কোনো নিবন্ধিত হজযাত্রী যেতে না পারলে তার বদলে অন্য কোনো নিবন্ধিত ব্যক্তিকে হজে পাঠানোর সুযোগ দেওয়া হয় এজেন্সিগুলোকে। সেজন্য চিকিৎসকের সনদ ও অঙ্গীকারনামাসহ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন করতে হয়।

প্রত্যেক এজেন্সি তাদের মোট হজযাত্রীর মধ্যে সর্বোচ্চ আট শতাংশকে ওই নিয়ম মেনে রিপ্লেসমেন্ট করার সুযোগ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। কিন্তু ৮ শতাংশ রিপ্লেসমেন্টের পরেও এখনো প্রায় ৪ হাজার রিপ্লেসমেন্টের বাকি রয়েছে বলে জানিয়েছে হজ এজেন্সিদের সংগঠন হাব।

হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসাইন তাসলিম বলেন, সরকার ৮ শতাংশ রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ দিয়েছিল। তারপরও প্রায় ৪ হাজার মত রিপ্লেসমেন্ট বাকি। তাই আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে সব মিলিয়ে ১৫ শতাংশ রিপ্লেসমেন্টের দাবি করছি।

হজ অফিসের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছর হজের পরিবেশ অনেক ভালো। গতবার হজের ৪র্থ দিনের মাথায় হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছিল। আর এবার ১৫ দিনের মাথায় এসে সমস্যা হয়েছে। তারপরও সেসব যাত্রীদের অন্য ফ্লাইটে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে, আশা করি সমস্যা হবে না।

এদিকে, হজ অফিস ও বিমানের তথ্যমতে, ১৪ জুলাই থেকে আজকে সকাল ৮টা পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৬২ হাজার ৩৩২ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছাইছে। এর মধ্যে বিমান ৩২ হাজার ২২৩ জন ও সৌদি এয়ারলাইন্স ৩০ হাজার ১০৯ জন হজযাত্রী বহন করেছে।