যাদের সাহসিকতায় ফের আলোর মুখ দেখল ১২ ক্ষুদে ফুটবলার
থাইল্যান্ডে দুর্গম গুহার চার কিলোমিটার ভেতরে আটকে পড়া ১২ ক্ষুদে ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধার করা হয়েছে। টানা তিন দিনের রুদ্ধশ্বাস এই অভিযান শেষ হয় মঙ্গলবার। প্রায় ৯০ জন অভিজ্ঞ ডুবুরির অসামান্য সাহসিকতায় সফলভাবে এই অভিযান সম্পন্ন করা হয়েছে।
রোববার ও সোমবার চারজন করে আটজন কিশোর ফুটবলারকে উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার অভিযানের তৃতীয় দিনে এসে বাকি চার ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধার করা হয়।
কোনো গুহার ভেতরে উদ্ধার অভিযান চালানো এতো সহজ কাজ হয়। এটা একইসঙ্গে বিপজ্জনক এবং ঝুঁকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে ওই ডুবুরিকে এ ধরনের অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে অভিজ্ঞ ও পারদর্শী হওয়াটা বাধ্যতামূলক।
থাইল্যান্ডের ওই গুহার উদ্ধার অভিযানে ৯০ জন ডুবুরির একটি দল কাজ করে। এদের মধ্যে ৫০ জনই বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন।
বিবিসি বাংলা জানায়, ওই আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দলের এমন কয়েকজন সাহসী ডুবুরির ছিলেন যারা কিশোরদের বের করে আনতে নিজেদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন।
এই ডুবুরিদের একজন বেন রেমেন্যান্ট। এই বেলজিয়ান নাগরিক মূলত ফুকেটে একটি ডুবুরির সরঞ্জামের দোকান পরিচালনা করেন। উদ্ধার অভিযানের প্রধান নারংসাক ওসোত্থানাকর্নের অধীনে তিনিও এই অভিযানে যোগ দিয়েছেন।
ডেনমার্কের নাগরিক ক্লস রাসমুসেন এমনই আরেকজন ডুবুরি। তিনি রেমেন্যান্টের সঙ্গে ফুকেটের ওই ডুবুরির স্কুলে কাজ করেন।
আরেকজন এসেছেন ফিনল্যান্ড থেকে। তার নাম মিকো পাসি। তিনি এই উদ্ধার অভিযানে স্বেচ্ছাসেবক ডুবুরি হিসেবে কাজ করছেন। মিকো ওই গুহার ভেতরের কিছু ছবি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেন।
আরেক স্বেচ্ছাসেবক ডুবুরি ডেন ইভান কারাজিচ। তিনি ডেনমার্কের নাগরিক। মিকোর সঙ্গে তিনি থাইল্যান্ডের ছোট আইল্যান্ড কোহ তাওতে একটি ডুবুরি বা ডাইভিংয়ের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করেন।
এই দুজনই মূলত ডুবুরির প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে একটি হল কেইভ ডাইভিং বা গুহার ভেতরে ডুব দিয়ে চলা।
একই উদ্দেশে অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন রিচার্ড হ্যারিস। তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক হলেও ডুবুরি হিসেবেও বেশ পারদর্শী। তিনি ঝুঁকি নিয়ে ওই গুহার ভেতরে আটকে পড়াদের কাছে যান। উদ্ধার অভিযান শুরুর আগেই তাদের জরুরি চিকিৎসা দেন তিনি।
নিজের প্রায় ১০ বছরের ডুবুরির অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে হ্যারিস এই অভিযানে নামেন। তিনি একইসঙ্গে একজন এক্সিপিডিশন মেডিসিন এবং উদ্ধার অভিযানে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ।
একজন ব্রিটিশ ডুবুরি সর্ব প্রথম ওই শিশুদের খোঁজ পান। তার অনুরোধে তিনি এই অভিযানে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এই উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া এক সাবেক থাই নৌবাহিনীর ডুবুরির মৃত্যুর ঘটনার মধ্যে দিয়ে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে এই যাত্রা কতোটা বিপজ্জনক ছিল।
সামান গুনান নামের ওই ডুবুরি শুক্রবার গুহার মধ্যে দিয়ে কিশোরদের অক্সিজেন ট্যাঙ্ক দিয়ে ফিরছিলেন। এসময় পানির ভেতরেই অক্সিজেন ফুরিয়ে গেলে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যান তিনি।
জানা গেছে, প্রথমে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন গুনান। পরে আর তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তার সহকর্মীরা বলেন, ‘তাদের বন্ধুর এই আত্মত্যাগ তারা বৃথা যেতে দেবেন না।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন