যানজটে ঢাকায় দিনে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট
প্রতিদিন যানজটের কারণে রাজধানীতে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপের দিক যাচ্ছে। গত ১০ বছরে রাজধানীতে যান চলাচলের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে সাত কিলোমিটারে নেমেছে।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকার উন্নয়ন বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেয় বিশ্বব্যাংক। তারা জানায়, ঢাকায় যানবাহনের গড় গতিবেগ হাঁটার গতির সামান্য বেশি। মানুষের হাঁটার গতি পাঁচ কিলোমিটার হলেও যান চলাচলের গতি এর চেয়ে মাত্র দুই কিলোমিটার বেশি।
আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানান হয়, ঢাকা বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর। কিন্তু পরিকল্পনার অভাব ও নগর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সামঞ্জস্য না রাখায় শহরে নিম্নমানের বাসযোগ্যতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি বন্যা, জলাবদ্ধতা ও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেড়েছে। এর ফলে একটি বিশৃঙ্খল ও অসম নগরায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান বলেন, বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে ঢাকা মহানগরীতে ২০৩৫ সালের মধ্যে জনসংখ্যা বেড়ে হবে তিন কোটি ৫০ লাখ। মহানগরীর পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগনোর লক্ষ্যে ঢাকাকে অবশ্যই সঠিকভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে, সমন্বয় সাধন এবং বিনিয়োগের সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে।
বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বিশ্বব্যাংক রাজধানীর এই রুপান্তরে প্রস্তুত বলেও জানান বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর।
বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশের শহুরে জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশ ঢাকায় বাস করে। আর ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ঢাকার রাস্তা পাঁচ শতাংশ বাড়লেও জনসংখ্যা বেড়েছে ৫০ শতাংশ। আর যানবাহন বেড়েছে ১৩৪ শতাংশ।
ঢাকার নগরায়ন কেন্দ্র থেকে উত্তর দিকে এবং তারপর পশ্চিম দিকে সম্প্রসারিত হয়েছে জানিয়ে বিশ্বব্যাংক মহানগরীর পূর্ব এলাকায় নগরায়নের পরামর্শ দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, এই এলাকাটি এখনও গ্রামীণ রয়ে গেছে। তবে দ্রুত বিকাশ লাভের সুযোগ রয়েছে।
সেমিনারে জানানো হয়, পূর্ব ঢাকা গুলশানের মতো সমৃদ্ধ এলাকার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। আর এই এলাকাটি মহানগরীর মোট এলাকার প্রায় ৪০ শতাংশের সমান।
জলাবদ্ধতা নিরসন, পরিকল্পিত নগরায়ন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য দুই সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সস্থার সমন্বয়ের তাগাদা দেন ঢাকার দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন।
ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ঢাকার বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। ২৬টি সংস্থা কাজ করে আলাদাভাবে। কিন্তু এর দায় এসে পড়ে সিটি করপোরেশনের ওপর।
মেয়র আনিসুল বলেন, ‘এখানে কোনো মাস্টার ড্রেনেজ সিস্টেম নেই। এটা একটা বড় সমস্যা। পাশাপাশি জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
বিশ্বব্যাংকও রাজধানী নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড অনেক দেরিতে শুরু করেছে বলে মনে করেন ঢাকা উত্তরের মেয়র।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘ঢাকা অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠেছে। এর ফলে যানজট, জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে এখন আমরা পরিকল্পনামাফিক কাজ করছি। আশা রাখি আমরা ঢাকার মূল সমস্যা অচিরেই সমাধান করাতে পারব।’
স্থানিয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘অচিরেই ঢাকাকে কাঙ্ক্ষিত বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলতে পারব। এর জন্য পরিকল্পনা হয়েছে, কাজও চলছে। তবে ঢাকার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে দুই সিটি করপোরেশন ও ব্যবস্থাপনার অন্যান্য সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করা প্রয়োজন।’
ঢাকার জন্য যে মহাপরিকল্পনা ছিল সেটি পুরনো হয়ে গেছে জানিয়ে নতুন একটি মহাপরিকল্পনার কাজ চলছে বলেও জানান এলজিআরডি মন্ত্রী।
ভারতের দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লীলা দীক্ষিত, চীনের সাংহাইয়ের ভাইস মেয়র কিঝেং ঝাও তাদের শহর উন্নয়নে নানা দিক তুলে ধরেন সেমিনারে।
এ সময় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীও। তিনি ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে সরকারের নানা পরিকল্পনা তুলে ধরেন। বলেন, সরকার হাতিরঝিলের মত একটি এলাকা করেছে। ফলে ঢাকার পূর্ব অংশের সঙ্গে পশ্চিম অংশের যোগাযোগ সহজ হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকার চারপাশে সার্কুলার রোড তৈরি হচ্ছে। মেট্রোরেলের কাজ এগিয়ে চলছে। মিরপুর, উত্তরায় ফ্ল্যাট প্রকল্পও এগিয়ে চলছে।
সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান সেমিনারে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন