যুক্তরাষ্ট্রে হ্যারিকেন হার্ভের আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

হারিকেন হার্ভের আঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখন্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। টেক্সাসে হার্ভের প্রভাবে ভূমি ধস হয়েছে। ঘর-বাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়েছে। অসংখ্য গাছ উপড়ে গেছে, রাস্তা-ঘাটের পোস্ট ল্যাম্প ও দিক নির্দেশনার খুঁটি ভেঙ্গে পড়েছে। ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। সঙ্গে মুষল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে। গত ১৩ বছরের মধ্যে দেশটিতে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে এটিকে সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

হারিকেন হার্ভে দেশটির মূলভূখণ্ডে আঘাত হানে শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১০ টার দিকে। ঘন্টায় ২০৯ কিলোমিটার বাতাসের বেগ নিয়ে হার্ভে টেক্সাসের উপকূলে আঘাত হানে। চার মাত্রার এই হারিকেন টেক্সাস উপকূলের আরকানসাস এবং ওকনর বন্দরের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে মেক্সিকো উপসাগর থেকে স্থলে উঠে আসে।

প্রাথমিকভাবে রকপোর্ট শহরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের খবর দিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। হাইস্কুল, হোটেল এবং অন্যান্য ভবনে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

স্যাফির-সিম্পসন স্কেলে বলা হয় ৪ মাত্রার এই ঘূর্ণিঝড় হার্ভে, ভূখণ্ডের গাছ উপড়ে ফেলতে পারে, বাড়িঘর ধ্বংস করে দিতে পারে। কয়েকদিন ধরে দৈনন্দিন সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় আঘাত হানা হারিকেন উইলমার পর এটিই যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানা তিন মাত্রার চেয়ে শক্তিশালী প্রথম ঝড়।

আগামী কয়েকদিনে হারিকেন হার্ভে ধীরে ধীরে টেক্সাস উপকূল হয়ে লুজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের উপকূলের দিকে এগিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সময় হার্ভের প্রভাবে ওই উপকূলজুড়ে চার মিটার পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস ও ৯০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

পরিস্থিতি বিবেচনায় লুইজিয়ানা ও টেক্সাসে দুর্যোগাবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। হার্ভে যে এলাকা দিয়ে এগিয়ে যাবে সেই অঞ্চলে প্রায় ৬০ লাখ লোক বসবাস করেন বলে প্রাথমিক হিসাবে বেরিয়ে এসেছে। আর এখানেই দেশটির অধিকাংশ তেল শোধনাগারগুলোর অবস্থান।

ঝড় শোধনাগারে আঘাত হানতে পারে এমন আশঙ্কায় এরই মধ্যে তেলের মূল্য বেড়ে গেছে। বন্যা এবং ঝড়ের তাণ্ডবের আশঙ্কায় ঝড়ের পথে থাকা শহরগুলোর হাজার হাজার বাসিন্দা নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছে। তবে সরে যাওয়ার বাধ্যতামূলক নির্দেশ অমান্য করেই কিছু মানুষ খাদ্য, জ্বালানি ও বালুরবস্তা মজুদ করে নিজ বাড়িতে থেকে গেছেন।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই প্রথমবারের মতো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। হার্ভে আঘাত হানার কিছুক্ষণ আগে টুইটারে ট্রাম্প দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ঘোষণায় স্বাক্ষরের কথা জানান যেখানে সরকারি সব বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতায় কর্পাস ক্রিস্টির শহর ছেড়েছেন প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার বাসিন্দা।

দেশটির জাতীয় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র জানিয়েছে, হার্ভে দক্ষিণ-পশ্চিম হিউস্টনে একদিনেরও বেশি সময় ধরে অবস্থান করতে পারে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ জনবহুল এ শহরে বাতাস ও বৃষ্টির দ্বিমুখী ঝাপটা আঘাত হানতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।