যুক্তরাষ্ট্র পুলিশে উচ্চপদে আবদুল্লাহ, কৃতজ্ঞতা বাংলাদেশিদের

বিশ্বের রাজধানী নামে খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরীর পুলিশের নির্বাহী পদে যোগ দেওয়ার পর ক্যাপ্টেন খন্দকার আবদুল্লাহ বাংলাদেশিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বলেছেন সম্ভাবনা আর সাফল্যের এ দেশে বাংলাদেশি নতুন প্রজন্ম আরও এগিয়ে যাবে। লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়ে লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি স্বদেশি আমেরিকান নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান। খবর প্রথম আলো’র।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান খন্দকার আবদুল্লাহ এনওয়াইপিডির ক্যাপ্টেন পদে শপথ নিলেন বৃহস্পতিবার। এনওয়াইপিডির সদর দপ্তর ম্যানহাটনের ওয়ান পুলিশ প্লাজায় এ শপথ অনুষ্ঠিত হয়। পদোন্নতি নিয়ে নিউইয়র্ক পুলিশের সদর দপ্তর ছিল পদোন্নতিপ্রাপ্ত লোকজনের স্বজন-অনুরাগীদের আনন্দময় উপস্থিতিতে উৎসবমুখর। খন্দকার আবদুল্লাহর প্রবাসী বর্ধিত পরিবার, আত্মীয়স্বজন, সংবাদকর্মীসহ প্রবাসী কমিউনিটি লোকজনের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।

অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক পুলিশের প্রধান কমিশনার জেমস ও’নীল বলেছেন, বিশ্বের সেরা পুলিশ বিভাগ এনওয়াইপিডি। নিউইয়র্ক নগরীর মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া আর নগর সুরক্ষায় বিশ্বের আধুনিকতম আর দক্ষ এ পুলিশ ফোর্সে ক্রমশ বৈচিত্র্য আসছে।

ক্যাপ্টেন হিসেবে খন্দকার আবদুল্লার পদোন্নতির দিনটিতে এনওয়াইপিডিতে ট্রাফিক সুপারভাইজার-২ হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন আরও দুই বাংলাদেশি আমেরিকান। তাঁরা হচ্ছেন বুরহান আহমেদ ও মোহাম্মদ ওয়ালী।

আবদুল্লাহ যেভাবে এনওয়াইপিডির ক্যাপ্টেন
৩৩ বছর বয়সী খন্দকার আবদুল্লাহর শৈশব কেটেছে তাঁর বাংলাদেশের সিলেট শহরে। মা-বাবার সঙ্গে অভিবাসী হয়ে ১৯৯৩ সালে খন্দকার আবদুল্লাহ আমেরিকায় আসেন। নিউইয়র্কের বাংলাদেশিবহুল এলাকা কুইন্সের এস্টোরিয়ার উডসাইড এলাকায় তাঁর বেড়ে ওঠা।

২০০৫ সালে নিউইয়র্কের পুলিশ বিভাগে যোগ দেন খন্দকার আবদুল্লাহ। ইউনিভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় সিদ্ধান্ত নেন পুলিশ ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেওয়ার। পুলিশ একাডেমির প্রশিক্ষণের পরই খন্দকার আবদুল্লাহর প্রথম দায়িত্ব পড়ে ইস্ট নিউইয়র্কের অপরাধবহুল এলাকা বলে পরিচিত ব্রুকলিনের ৭৫ প্রিসিংটে (পুলিশ অফিস)। ২০১৩ সালে খন্দকার আবদুল্লাহ এনওয়াইপিডির কর্মকর্তা হিসেবে সার্জেন্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন। এবার দায়িত্ব পড়ে সাউথ ব্রংকসে, যা নিউইয়র্ক পুলিশের সার্ভিস এলাকা-৭ নামে পরিচিত। অপরাধ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সাদাপোশাকের পুলিশের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে তিনি সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন। লং আইল্যান্ড সিটির ১০৬ প্রিসিংটেও এক বছর সার্জেন্ট হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের আগস্টে খন্দকার আবদুল্লাহ লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি পান। পদোন্নতির পরই তাঁকে নিউইয়র্কে নগরীর ২৮ প্রিসিংট দায়িত্ব দেওয়া হয়। নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ হার্লেম এলাকায় লেফটেন্যান্ট খন্দকার আবদুল্লাহ কমান্ডিং অফিসারের একান্ত প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন নিজের সততা, দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তায়। এ সময়ে অপরাধ-সংশ্লিষ্ট সমস্যা চিহ্নিতকরণ, অপরাধের তথ্য বিশ্লেষণ, কার্যকর কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং পরিকল্পনা ও গৃহীত কৌশলের সাফল্য নিয়ে কাজ করে কৃতিত্ব দেখান খন্দকার আবদুল্লাহ।

একই সময়ে খন্দকার আবদুল্লাহ নগরীর কৌঁসুলিসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার সুযোগ পান। হার্লেম এলাকায় তাঁকে স্পেশাল অপারেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ দায়িত্ব তিনি ২০১৬ থেকে ২০১৮—এই দুই বছর পালন করেন। পরপরই তিনি পুলিশের পেশাদারি দেখাশোনাসহ নানা প্রশাসনিক কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

এনওয়াইপিডির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। নিয়মিত বাহিনীতে প্রায় ৩৫০ জন বাংলাদেশি আছেন। এর মধ্যে ১৪ জন বাংলাদেশি আমেরিকান নারী ইউনিফর্ম পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। নিউইয়র্ক নগরীর ট্রাফিকসহ পুলিশের অন্যান্য বিভাগ মিলে এক হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।

খন্দকার আবদুল্লাহ তাঁর কর্মের জন্য এর মধ্যে পুলিশের আটটি মেডেল লাভ করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ নগরী নিউইয়র্কে খন্দকার আবদুল্লাহর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে অনেক খুনি, মাদক সম্রাটসহ দুর্ধর্ষ অপরাধী।

সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার তালতলা গ্রামের প্রয়াত খন্দকার মদব্বির আলী ও মুহিবুন্নেসা চৌধুরীর ছেলে খন্দকার আবদুল্লাহ শৈশবে আমেরিকায় এলেও এখনো সাবলীল বাংলায় কথা বলেন। দুই সন্তানের জনক খন্দকার আবদুল্লাহ স্ত্রীকে নিয়ে লং আইল্যান্ড এলাকায় থাকেন।

শপথ গ্রহণের পর পুলিশ প্লাজার সামনে খন্দকার আবদুল্লাহকে পুলিশের ব্যাজ পরিয়ে দেন তাঁর মা মুহিবুন্নেছা চৌধুরী এবং স্ত্রী লীনা চৌধুরী। এ সময় তাঁর দুই শিশুসন্তানকেও আনন্দ উৎসবে যোগ দিতে দেখা যায়। আবদুল্লাহকে অভিনন্দন জানাতে উপস্থিত স্বজন-অনুরাগী ও প্রবাসীদের পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।

শপথ নেওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় ক্যাপ্টেন আবদুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ছোটবেলায় এসেছি। তবে আমি কখনো আমার পরিচয় ভুলি না।’ তিনি নিউইয়র্কের পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে দাঁড়িয়ে স্বজন, অনুরাগীদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। সমর্থনের জন্য এবং তাঁকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য স্বদেশিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমেরিকা সম্ভাবনার দেশ, এ দেশ আমাকে অনেক দিয়েছে। আমাদের নতুন প্রজন্ম লক্ষ্য স্থির রাখলে অনেক এগিয়ে যেতে পারবে।’

এনওয়াইপিডির বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা এবং বিপুলসংখ্যক সদস্য এ সময় পুলিশ প্লাজায় উপস্থিত থেকে ক্যাপ্টেন আবদুল্লাহসহ বোরহান আহমেদ ও মোহাম্মদ ওয়ালীকে অভিনন্দন জানান।

টুইটারে বার্তায় অভিনন্দন
খন্দকার আবদুল্লাহকে প্রথম বাংলাদেশি ক্যাপ্টেন হিসেবে উল্লেখ করে অভিনন্দন জানিয়েছে এনওয়াইপিডি। তারা তাদের বিবৃতি এবং টুইট বার্তায় বাংলা ভাষায় ‘অভিনন্দন’ শব্দটি ব্যবহার করেছে।

মা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মুহিবুন্নেছা চৌধুরী বলেছেন, ‘সবাই দোয়া করবেন, সে যেন আরও এগিয়ে যেতে পারে। আবদুল্লাহর সাফল্যে অন্যরা অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের সন্তানেরা যেন আমেরিকায় আরও সাফল্য দেখাতে পারে।’