যুবদল নেতা মজিদ : পুলিশের সাজানো নাটকে পায়ে গুলি করার লোমহর্ষক সেই ঘটনা
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/Kalaroa-Mozid-Pic-copy.jpg)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
আরিফ মাহমুদ: আব্দুল মজিদ। যাকে ধরে নিয়ে জোর করে ঠান্ডা মাথায় ইচ্ছাকৃতভাবে পায়ে গুলি করে পুলিশ। কেটে ফেলতে হয় একটি পা। উপরন্তু বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে অস্ত্র মামলা দেয়া হয়, খাটতে হয় দীর্ঘদিন জেল।
আওয়ামী শাসনামলে যখন দেশব্যাপী ক্রসফায়ারের মহোৎসব চলছে তখন বন্দুকের নলের সামনে থেকে বেঁচে ফেরেন তিনি। তবে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় তাকে।
আব্দুল মজিদ বর্তমানে সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌর যুবদলের আহবায়ক। দায়িত্বে ছিলেন কলারোয়া সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ও পৌর ছাত্রদলের সভাপতি। বাড়ি কলারোয়া পৌরসভাধীন ১নং ওয়ার্ড তুলশীডাঙ্গা গ্রামে।
দিনটি ছিলো ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৬ তারিখ। আওয়ামী দু:শাসনের জাতাকলে যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্রসফায়ারের নাটক চলছে তখন কথিত গাড়িবহর হামলা মামলার আসামি হয়ে পলাতক জীবন কাটাচ্ছিলেন তৎকালীন পৌর ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল মজিদ। কলারোয়ার পার্শ্ববর্তী যশোরের শার্শা উপজেলার কায়বা এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। শার্শা থানা পুলিশ সেদিন সন্ধ্যায় সেখান থেকে তাকে আটক করে শার্শা থানা হাজতে রাখে। রাতভর করা হয় নির্যাতন। কাছে থাকা একটি মোবাইল ও কয়েক হাজার টাকা নিয়ে নেন তৎকালীন শার্শা থানার এসআই আইনুদ্দীন ও এসআই সৈমেন। ছেড়ে দেয়ার নাম করে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা টাকা দাবি করলে তৎকালীন ছাত্রদল নেতা আব্দুল মজিদ মোবাইল ফোনে আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করে ৫লাখ টাকা তুলে দেন পুলিশকে। তাকে জানানো হলো সকালে ছেড়ে দেয়া হবে। পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো, তাকে ছাড়া হলো না। বেলা ৩টার দিকে শার্শা থানা পুলিশ একটি মহেন্দ্রযোগে যশোরের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো মজিদকে। ঝিকরগাছার লাউজানি রেললাইন ক্রসিং এলাকায় পৌছুলে একটি মাইক্রোবাসে সাদা পোশাকধারী কয়েকজন ব্যক্তি পুলিশের গাড়ি থেকে মজিদকে তাদের গাড়িতে তুলে নেন। নিয়ে যাওয়া হয় যশোর এএসপি সার্কেলের অফিসে। সেখানে দীর্ঘক্ষণ রেখে থেমে থেমে নির্যাতন চলতে থাকে। এরপর রাত আনুমানিক ১২টার দিকে একটি মাইক্রো গাড়িতে করে সাতক্ষীরার দিকে নিয়ে যেতে থাকে জীবন্ত যুবক মজিদকে। বাগঁআচড়া পার হয়ে বেলতলা নামক স্থানে পৌছুলে আগে থেকে অবস্থান করা কলারোয়া থানা পুলিশের কাছে আব্দুল মজিদকে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে একটি মাইক্রোসহ পুলিশের গাড়ি ছিলো ৩টি। বলা হয় কোর্টে চালান দেয়া হবে। কিন্তু চোখ বেঁধে, হাতে পিছন দিক দিয়ে হাতকড়া পড়া অবস্থায় গাড়িতে তোলা হলো। সাথে ২০/২৫ জন পুলিশ। অল্প কিছুদূর যেতেই গাড়ি থামলো, স্থানটি কলারোয়ার কাজিরহাট কলেজ সংলগ্ন। রাস্তা থেকে পায়ে হাটিয়ে আব্দুল মজিদকে সামান্য দূরে ফসলি মাঠের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হলো। চোখ বাঁধা, মুখের মধ্যে কাপড় ঢুকানো, হাতে হাত কড়া পড়ানো। জোর করে মাথা ও মুখ মাটির সাথে চেপে ধরা হলো, বাঁধা হলো দুই পা। মুখ চেপে ধরা হলো, বুকের উপর একজন উঠে দাঁড়ালো, কোমড় বরাবর একজন শক্ত করে ধরে রাখলো, দুই পায়ে দুইজন শক্ত করে ধরে মাটির সাথে মিশিয়ে রাখলো। বাম পায়ের হাটুর কাছে কীটনাশক জাতীয় পানীয় স্প্রে করলো। প্রথম থেকে এ পর্যন্ত এগুলো ছিলো ভয়াবহ ঘটনাচিত্র। এরপর ঘটলো আরো ভয়াবহ লোমহর্ষক সেই ঘটনা। বাম পায়ের হাটু বরাবর ২/৩ রাউন্ড গুলি করলো তৎকালীন কলারোয়া থানার এএসআই ইকবাল ও এসআই মামুন। লোমহর্ষক ও বর্বরোচিত ওই ঘটনার সময় মজিদকে চেপে ধরে রাখা ও সেই কর্মযজ্ঞতায় ছিলেন তৎকালীন কলারোয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুর রহমান, এসআই হিমেল, কনস্টেবল হাবিবুল্লাহসহ অন্তন্ত ২০/২৫ জন পুলিশ। সেসময় কলারোয়া থানার ওসির দায়িত্বে ছিলেন শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম, সাতক্ষীরার এসপি ছিলেন চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির। আব্দুল মজিদকে ইচ্ছাকৃত ঠান্ডা মাথায় গুলি করার পর রক্ত গড়িয়ে মাটি ভিজে গেলো, তবু তাকে ওইভাবেই বলপূর্বক পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা তাকে মাটিতে লুটিয়েই রাখলো। এরপর আরো কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করা হলো। যন্ত্রণা আর কষ্টে জীবন যায় যায়, তবু পরিত্রাণের বিন্দুমাত্র উপায় নেই। রাতেই গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত ও গুরুতর আহতাবস্থায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে মেঝেতে ফেলে রাখা হয় আব্দুল মজিদকে। এভাবে ৭ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাত থেকে ৩দিন বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয় হাসপাতালে। অবস্থা বেগতিক হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সেখান থেকে তাকে রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার হয়ে হৃদরোগ ইন্সটিটিউট হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে সামান্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে হাটুর উপর থেকে বাম পা সম্পূর্ণ কেটে ফেলা হলো আব্দুল মজিদের, স্থায়ী পঙ্গুত্ব উপহার দিলো তৎকালীন সরকার ও পুলিশ প্রশাসন।
এতো কিছুর পরেও পরিত্রাণ হয়নি আব্দুল মজিদের। উল্টো বন্দুকযুদ্ধ, অস্ত্র, নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলা দেয়া হয় আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে। পঙ্গু হাসপাতালে কিছুদিন চিকিৎসাধীন রাখার পর আব্দুল মজিেেদর আবারো ঠিকানা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সাতক্ষীরা কারাগারে। ফুলের মতো একটি জীবন, একটি পরিবার তছনছ হয়ে যায় মুহূর্তে।
পুলিশের ভয়াল বিভৎস সাজানো বন্দুকযুদ্ধে ইচ্ছাকৃত গুলি করা ও সাজানো কথিত মামলায় জলজ্যান্ত যুবকের জীবনের কালো অধ্যায় নেমে আসলো আব্দুল মজিদের। দীর্ঘদিন জেলা খাটার পর ২০১৬ সালে ১১ মার্চ জামিনে বেরিয়ে আসলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন কর্তৃক উপহার দেয়া কৃত্রিম পা সংযোজন করে কোন রকম খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটতে পারতেন তৎকালীন যুবদল নেতা আব্দুল মজিদ।
এরপরেও আওয়ামী দু:শাসনের শিকার আব্দুল মজিদের জীবন থেকে কালো মেঘ যেনো সরলো না। কথিত গাড়িবহর হামলা মামলায় আবারো তাকে যেতে হলো কারাগারে।
প্রায় ৪বছর একটানা জেল খাটার বছর পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ থেকে শেখ হাসিনা পালালে দেশের রাজনৈতিক ও সার্বিক পটপরিবর্তনে অবশেষে ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মুক্ত আকাশে বের হতে পারেন আব্দুল মজিদ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এখন নিজের দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফের ব্যস্ততা বেড়েছে তার। নেতা-কর্মীদের পাশে থাকতে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে তাকে। প্রত্যাশা আগামি দিনে সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে। এমনটাই জানালেন গুলিতে পা হারা জীবন সংগ্রামের এক জলন্ত বিষ্ময় আব্দুল মজিদ।
আওয়ামী লীগের ১৭ বছরের শাসনামলের একজন আব্দুল মজিদের লৌমহর্ষকর ঘটনা পড়লেন-শুনলেন। এমন হাজারো মজিদের ঘটনা লুকিয়ে আছে বাংলার লাখো মানুষের অন্তরে।
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন