যেখানে ইফতার করেন এক কাতারে ধনী গরিব

আসরের নামাজ শেষ হয়েছে মাত্র। ইফতারের সময় হতে ঘড়ির কাঁটায় তখনো বাকি দেড় ঘণ্টা। আসরের নামাজ শেষে মুসল্লিদের বড় একটা অংশ অবস্থান নেন মসজিদের পূর্ব শাহানে। বলছি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইফতার আয়োজনের কথা। অন্য বছরের মতো রোজাদারদের ইফতারের এ আয়োজন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) উদ্যাগে। চলবে শেষ রোজা পর্যন্ত।

রোজাদারদের ইফতার করানোর কাজে যুক্ত আছেন জাতীয় মসজিদের খাদেম, ফাউন্ডেশনের স্টাফ, স্বেচ্ছাসেবীসহ অর্ধশতাধিক কর্মী। ইফতারের সময় যত এগিয়ে আসে পূর্ব শাহানের মেঝে পুরোটাই ভরে গিয়ে দরজা পর্যন্ত অবস্থান নেন রোজাদাররা। মহতী এ আয়োজন ঘিরে সৃষ্টি হয় অন্যরকম এক আবহ। বিশাল ফ্লোরে আগে থেকে বিছানো প্লাস্টিক ম্যাটে রাখা বড় বড় ডিশ। প্রতি ডিশে সাত থেকে আটজন রোজাদারের জন্য হিসাব করে রাখা হয়েছে ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, জিলাপি, খেজুর, কলাসহ নানা ইফতারসামগ্রী। পাশাপাশি সারিবদ্ধ গ্লাসভর্তি লেবুর শরবত। উত্তরপাশের মঞ্চ থেকে পরিচালিত মোনাজাতে অংশ নিয়ে হাজার হাজার কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে আমিন আমিন। মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে মুসল্লিরা ইফতারি তুলে নিচ্ছেন। হাজার হাজার মুসল্লি এক কাতারে বসে ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে ইফতার করছেন।

গত ১৫ বছর ধরে এ আয়োজন করে আসছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ২০০৯ সাল থেকে বড় আকারে ইফতার আয়োজন শুরু করে। ইফতারের দায়িত্বে থাকা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক (মসজিদ ও মার্কেট) মহীউদ্দিন মজুমদার জানান, রোজাদাররা হচ্ছেন আল্লাহর মেহমান। তাদের ইফতার করাতে পেরে ইসলামিক ফাউন্ডেশন গর্বিত ও আনন্দিত।

তিনি বলেন, ফাউন্ডেশন গত বছর ইফতারের জন্য ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। এ বছর তা বাড়িয়ে ২৭ লাখ টাকা করা হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ইফতারের বাজেট ধরা হয়েছে ৯০ হাজার টাকা। ইফার এই কর্মকর্তা আরো জানান, এখানে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার রোজাদার ইফতারে অংশ নিয়ে থাকেন। ইফতারের মেন্যুতে থাকে ১১ উপাদান।

তিনি জানান, রোজাদারদের ইফতার পরিবেশনে কাজ করছেন মসজিদের ২০ জন খাদেম, ফাউন্ডেশনের স্টাফ, স্বেচ্ছাসেবীসহ অর্ধশতাধিক কর্মী। আর তত্ত্বাবধানে থাকছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কয়েকজন কর্মকর্তা। জাতীয় মসজিদে ইফতার করতে আসেন কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম।

তিনি জানান, প্রতি রমজানেই তিনি ঢাকায় থাকলে জাতীয় মসজিদে ইফতার করেন। ইফতার সেরে নামাজ পড়ে দোকানে যান। বলেন, একসঙ্গে হাজারো রোজাদারের সঙ্গে ইফতার মনে অন্যরকম তৃপ্তি এনে দেয়। তাই এখানে ইফতার করতে চলে আসি। সেগুনবাগিচার বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী আলাউদ্দিন বলেন, আমি গত বছর রমজানে এখানে ইফতার করেছি। হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে ইফতার করতে মনে অনেক শান্তি লাগে। এখানে কোনো ধনী-গরিবের হিসাব নেই। সবাই একসঙ্গে বসে ইফতার করছি।

সরেজমিন দেখা যায়, বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভেতরে হাজার হাজার মানুষের এক অপূর্ব সম্মিলন। মসজিদ থেকে ভেসে আসছে হামদ-নাত। হামদ-নাত শেষ হলে শুরু হলো ইসলামী বয়ান। রোজাদাররা মন দিয়ে তা শুনছেন। ইফতারের সময় যত ঘনিয়ে আসছিল ততই বাড়ছিল রোজাদার মুসল্লির সংখ্যা। আসরের পর থেকে ইফতারের প্রস্তুতি চলে মাগরিবের নামাজের আগ পর্যন্ত।

মসজিদের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব প্রান্তজুড়ে মুসল্লিরা একে অন্যকে বসার জায়গা করে দিচ্ছেন। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।

জাতীয় এ মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ছাড়াও মুসল্লিদের জন্য ইফতারের আয়োজন করে তাবলিগ জামাতের বায়তুল মোকাররম মসজিদ শাখা। বায়তুল মোকাররম ব্যবসায়ী সমিতিও ইফতারের ব্যবস্থা করে।