যেখানে রাষ্ট্রপতির দারোয়ান ঢুকতে দেয়নি কোবিন্দকে
নতুন রাষ্ট্রপতি পেল ভারত। দলিত সম্প্রদায়ের হয়ে রাজনীতি করা রামনাথ কোবিন্দ এখন ভারতের সব জায়গায় আলোচিত নাম। বর্ণ বৈষম্যের দেশ ভারতে নীচ শ্রেণি থেকে উঠে এখন দেশটির সর্বোচ্চ সম্মানের চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন। এই ব্যক্তি নিয়ে অনেক বিষয়েই আলোচিত হচ্ছে। তার মধ্যে দশটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য সোনালীনিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের আগে তিনি ইউপি রাজ্যের গভর্নর ছিলেন। গভর্নরের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সিমলায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে গ্রীষ্মকালীন সময়ে অবকাশ যাপনে রাষ্ট্রপতির জন্য একটি সুরম্য প্রাসাদ নির্মাণ করা আছে। তিনি সেখানে নিজের পরিচয় দিয়েই ঢুকতে চেয়েছিলেন। গিয়েছিলেন সেই বাড়ি দেখতে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ভবনের অনুমতি নেই বলে পাহারায় থাকা রক্ষীরা তাকে গেট থেকেই ফিরি দিয়েছিলেন। এই ঘটনার বর্ণনা করে কোবিন্দকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।
আগামী ২৫শে জুলাই ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন রামনাথ কোবিন্দ। তাকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি।
ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন যিনি, সেই নতুন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে নিয়ে এখানে দেখে নিন এমন দশটি তথ্য, যা অনেকেরই হয়তো জানা নেই।
১) উত্তরপ্রদেশের কানপুর দেহাত জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম পারোঙ্খে এক দলিত কোলি পরিবারে জন্ম নেন রামনাথ কোবিন্দ। তিনি অবশ্য তার গ্রামের পৈতৃক ভিটেবাড়িটি গ্রামবাসীদের উদ্দেশে দান করে দিয়েছেন – সেটিকে এখন ওই গ্রামে বরাতঘর (বিয়েবাড়ি বা বরযাত্রীদের রাখার জায়গা) হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
২) রামনাথ কোবিন্দ হবেন উত্তরপ্রদেশ থেকে নির্বাচিত ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি। মজার ব্যাপার হল, ভারতের সবচেয়ে জনবহুল এই রাজ্যটি থেকে দেশের মোট নজন প্রধানমন্ত্রী এসেছেন – কিন্তু মি কোবিন্দের আগে এ রাজ্যের কেউ রাষ্ট্রপতি হননি!
৩) ভারতের আমলারা যে মর্যাদাবঞ্জক ইউপিএসসি পরীক্ষা দিয়ে চাকরিতে ঢোকেন, মি কোবিন্দ তাতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু আইএএস সার্ভিসের বদলে অ্যালায়েড সার্ভিসে মনোনীত হওয়ায় সে চাকরি তিনি আর নেননি।
৪) বিজেপি-তে যোগদান করার আগে তিনি ১৯৭৭ সালে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের ব্যক্তিগত সচিব বা প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসেবেও কাজ করেছেন।
৫) বিজেপিতে যোগদান করার পর তিনি দলিত শ্রেণীর একজন নেতা হিসেবে উঠে আসেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি বিজেপির দলিত মোর্চার প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
৬) উত্তরপ্রদেশে দলিত নেত্রী হিসেবে মায়াবতীর যখন দ্রুত উত্থান হচ্ছে, তখন বিজেপি রামনাথ কোবিন্দকে মায়াবতীর পাল্টা দলিত মুখ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল। বছরকয়েক আগেও বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং রাজ্যের দলিত এলাকাগুলোতে নির্বাচনী প্রচারের সময় সব সময় মি কোবিন্দকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন।
৭) লোকসভার ভোটে কোনও দিন না-জিতলেও রামনাথ কোবিন্দ দু’দুবার ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ রাজ্যসভার সদস্য হয়েছেন। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত টানা বারো বছর তিনি রাজ্যসভার এমপি ছিলেন।
সিমলার হিমাচলে অবস্থিত রাষ্ট্রপতির গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপন করা এই বাড়ির গেট থেকেই ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল নতুন রাষ্ট্রপতি কোবিন্দকে
৮) রামনাথ কোবিন্দ নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরেও ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০০২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তিনি ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে ভাষণও দেন।
৯) ২০১৫ সালের ৮ আগস্ট তাকে বিহারের রাজ্যপাল (গভর্নর) পদে নিয়োগ করা হয়।
১০) নিয়তির পরিহাসই বলি বা সমাপতন, মাত্র মাসদেড়েক আগে বিহারের রাজ্যপাল থাকাকালীন সপরিবারে হিমাচল প্রদেশে বেড়াতে গিয়ে মি কোবিন্দ সিমলার কাছে রাষ্ট্রপতির সামার রিট্রিটে ঢুকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ভবনের অনুমতি নেই, এই যুক্তিতে রক্ষীরা তাকে গেট থেকে ফিরিয়ে দেয়।
তখন তিনি ঘুণাক্ষরেও জানতেন না রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে কয়েকদিনের মধ্যেই তার নাম ঘোষণা করা হচ্ছে।
আর এখন দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে সিমলার ওই রাজকীয় প্রাসাদই হবে তার গ্রীষ্মকালীন অবকাশযাপনের ঠিকানা – যার গেট থেকে তাকে কিছুদিন আগেই ফিরে আসতে হয়েছিল!
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন