‘যেভাবেই হোক দেশ থেকে তেঁতুল হুজুরদের উচ্ছেদ করতে হবে’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়ে বলেছেন, ‘দেশ থেকে যে করেই হোক তেঁতুল হুজুর, জঙ্গি-সন্ত্রাসী, জামায়াত ও তাদের পোষণকারীদের চিরতরে উচ্ছেদ করতে হবে।’
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটউশন মিলনায়তনে সাম্যবাদী দলের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জঙ্গি ও দেশবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের অঙ্গীকার করেছেন বাম রাজনৈতিক দলের নেতারা।
ইনু বলেন, ‘অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হচ্ছে সমাজতন্ত্র। আমরা সমাজতন্ত্রের পক্ষে। সমাজতন্ত্রের বিপক্ষে শাসক ও শোষণকারীরা। সমাজতন্ত্র ছাড়া জীবন চলে না। সংবিধানে চার নীতির মধ্যে সমাজতন্ত্র একটি। ৭৫ এর পর সংবিধান থেকে সমাজতন্ত্র নীতিটি কেটে ফেলা হয়। এখন সংবিধানে সমাজতন্ত্রসহ চার নীতি রয়েছে। আমি বলব, প্রধানমন্ত্রী আপনি সংবিধানের পাতা থেকে সমাজতন্ত্রকে জীবনের পাতায় আনেন। মুক্তিযোদ্ধাদের চার নীতির মধ্যে সমাজতন্ত্রী নীতিটি অন্যতম।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের ত্রাণ কিংবা সমবেদনা জানাতে যাননি। রোহিঙ্গাদের অবলম্বন করে নির্বাচনী প্রচারণা করতে গিয়েছেন। শো-ডাউন করে লোক দেখাতে গিয়েছেন। তিনি মূলত পথে পথে নাটক করেছেন, হামলার নাটক সাজিয়েছেন।’
নাসিম বলেন, ‘তিনি রোহিঙ্গাদের সাহায্য-সহযোগিতা করতে গেলে বিমানেই যেতে পারতেন। প্রায় তিন মাস পর সেজেগোজে কোটি টাকা খরচ করে, সারি সারি গাড়ি নিয়ে যেতেন না। পেট্রোল খরচ আর সাজ ঘোজে যে টাকা খরচ করা হয়েছে সেই টাকা দিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করতে পারতেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে গিয়ে তিনি মিথ্যাচার করে বলেছেন, সরকার ও আওয়ামী লীগ রোহিঙ্গাদের জন্য কিছুই করেনি। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এতবড় মিথ্যাচার কী করে করতে পারেন। এ মিথ্যাচারের জবাব দেশের মানুষ আগামী নির্বাচনে দেবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে আবারও জয়ী করবে দেশের মানুষ।’
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা তাদেরই সাজানো নাটক। ওই নাটকের তদন্ত চলছে, অল্প সময়ের মধ্যেই প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে।’
অনুষ্ঠানে ওয়ার্কার্স পার্টিার সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘সমাজতন্ত্র কায়েমের লক্ষে এই উপমহাদেশে দীর্ঘদিন আগে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় সাম্যবাদী দলের যাত্রা। লেনিনের মতাদর্শে এ দেশে মানুষ জাতীয় মুক্তির লড়াইয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠালগ্নে লেখা সংবিধানের চারটি মূলনীতির একটি হলো সমাজতন্ত্র। যা আমরা নিজেরা লিখে তা আজ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। নিজেরা লিখে তা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে সামনে আরও কঠিন সময় আসবে।’
সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ক্ষমতায় আসতে দিলে সামনে বিপদ আছে দাবি করে মেনন বলেন, ‘বাংলাদেশে তিন কোটি মানুষ এখনো দরিদ্র। অনেক মানুষ হতদরিদ্র। শুধু উন্নয়ন নয়, জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ, জামায়াত-শিবিরকে উৎখাত করতে না পারলে, তাদের সঙ্গে লড়াইয়ে জয়ী হতে না পারলে সামনে আরও কঠিন সময় আসবে।’
মেনন বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয় এবং ২০৪১ সালে আধুনিক একটি দেশ হবে বাংলাদেশ। কিন্তু আমি বলতে চাই, এসব উন্নয়ন কার জন্য।’ তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ফাঁসি দিতে পেরেছি এমন ভেবে যদি ভাবি যুদ্ধে জয়ী হয়ে গেছি তা ভুল হবে। যুদ্ধাপরাধী, জামায়াত-শিবির, তাদের আশ্রয় প্রশ্রয়কারী বিএনপি সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে হবে। তারা, তাদের রাজনৈতিক দল যদি কোনো অবস্থায় ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে ৩০ লাখ মানুষ হত্যার শিকার হবে। দেশে প্রগতিশীল মুক্তমনা মানুষদের খুন করা হবে।’
বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) এর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘রাজনৈতিক আলোচনা করতে গেলে সমাজতন্ত্র দলগুলোকে ডাকতে হবে। এখন দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়। মার্কা ছাড়া অনেক বড় বড় দল নির্বাচনে হারবে। আমরা ১৪ দলের সঙ্গে আছি, থাকবো।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম, জাসদের একাংশের সভাপতি শরিফ নূরুল আম্বিয়াসহ বাম রাজনৈতিক দলের নেতারা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন