যেভাবে ধরা পড়লেন শাফাত-সাদমান
দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার শাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ গত ৮ মে ঢাকা থেকে সিলেট যান। এদিন দুপুরে তাঁরা সিলেটের দক্ষিণ সুরমার একটি রিসোর্টে গিয়েছিলেন। রিসোর্টে উঠতে না পেরে তাঁরা জালালাবাদ এলাকায় অবস্থিত এক লন্ডনপ্রবাসীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। এই বাড়ি থেকেই গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
শাফাত ও সাদমানের অবস্থান কীভাবে জানা গেল, আর কীভাবেই-বা তাঁদের গ্রেপ্তার করা হলো—তার বিস্তারিত বিবরণ শুক্রবার জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া।
সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার বলেন, শাফাতের পারিবারিক বাড়ি সিলেটে। সিলেটে এসে শাফাত তাঁর এক মামার সাহায্য চান। মামা তাঁর এক লন্ডনপ্রবাসী বন্ধুর বাড়িতে শাফাত ও সাদমানের থাকার ব্যবস্থা করেন। জালালাবাদ এলাকায় অবস্থিত ওই বাড়ি থেকেই গতকাল রাত নয়টার দিকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার একটি বিশেষ দল।
পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-গোপনীয়) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার আসামিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ সদর দপ্তরকে নির্দেশ দেন আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। এই নির্দেশের পর পুলিশ সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার একটি দল সিলেটে যায়।
কয়েকজন সঙ্গীসহ শাফাত গত ৮ মে দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলাম ঠাকুরবাড়ি এলাকার রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টে গিয়েছিলেন বলে ৯ মে খবর বের হয়। সেখানকার এক কর্মকর্তা বলেন, একটি প্রাইভেটকারে করে ওই দিন পাঁচজন তাঁদের রিসোর্টে যান। তাঁদের একজন ছিলেন শাফাত। রিসোর্টে উঠতে না পেরে তাঁরা চলে যান।
সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া জানান, পুলিশ সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার বিশেষ দলটি সিলেটে এসে এখানকার গোয়েন্দাদের সাহায্য নেয়। শাফাত ও সাদমান তাঁদের মোবাইলসহ অন্যান্য ডিভাইস বন্ধ রেখে লুকিয়ে ছিলেন। তবে সিলেটে থাকা শাফাতের এক মামার মোবাইলে দুজনের ফোনালাপের প্রমাণ পাওয়া যায়। মামাকে ধরার পর শাফাত ও সাদমানের অবস্থান জানা যায়।
শাফাতের মামা পুলিশের কাছে দাবি করেন, প্রথমে সাহায্য করতে চাননি তিনি। অনেক পীড়াপীড়ির পর রাজি হন। তাঁর লন্ডনপ্রবাসী এক বন্ধুর বাড়ি জালালাবাদ এলাকায়। বাড়িটিতে একজন তত্ত্বাবধায়ক থাকেন। ওই বাড়িতে শাফাত ও সাদমানের থাকার ব্যবস্থা করেন। জালালাবাদের ওই বাড়ি থেকেই গতকাল রাতে তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
শাফাত ও সাদমানকে শুক্রবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে আনা হয়েছে।
ডিবির উপকমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম বলেন, গ্রেপ্তারের পর সিলেট থেকে শাফাত ও সাদমানকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে। আজ যেকোনো সময় তাঁদের ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে নেওয়া হতে পারে।
শাফাত ও সাদমানকে কখন আদালতে নেওয়া হবে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে, এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান শেখ নাজমুল আলম।
গত ৬ মে বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে একটি ধর্ষণ মামলা করেন ধর্ষণের শিকার হওয়া একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, এক পরিচিত ব্যক্তির জন্মদিনের পার্টিতে অংশ নিতে গিয়ে দুই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন। বনানীর রেইনট্রি হোটেলের দুটি কক্ষে আটকে রেখে তাঁদের ধর্ষণ করা হয়।
এই পাঁচ আসামি হলেন শাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, শাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও তাঁর দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ।
দুই বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বনানী থানার পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় ৬ মে নিয়মিত মামলা নেয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন