যেভাবে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমাল উড়িষ্যা


প্রতি বছর প্রচুর মানুষ বজ্রপাতে মারা যায় বাংলাদেশে। গ্রামাঞ্চলের খেটেখাওয়া মানুষ এর শিকার হন বেশি।
তবে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমিয়ে নজির তৈরি করেছে ভারতের উড়িষ্যা রাজ্য।
জানা যায়, ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেসরকারি কোম্পানির সহযোগিতায় এক নতুন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বজ্রপাতের আগাম সতর্কতা জারি করে মৃতের সংখ্যা ৩১ শতাংশ কমানো গেছে।
সতর্কবার্তা পাওয়ার পরেই যে এলাকায় বাজ পড়তে পারে, সেই অঞ্চলের বাসিন্দাদের মোবাইলে এসএমএস করে সাবধান করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে সাইরেন বাজিয়ে সাবধান করা হচ্ছে।
উড়িষ্যা রাজ্যের দুর্যোগ মোকাবিলা মন্ত্রী সুদাম মারান্ডি সম্প্রতি উড়িষ্যা বিধানসভায় পেশ করা এক তথ্যে জানিয়েছেন, ২০১৭ – ১৮ সালে যেখানে ৪৬৫ মানুষ বজ্রপাতে মারা গিয়েছিলেন, সেখানে ২০১৮-১৯ সালে মৃত্যু হয়েছে ৩২০ জনের। গত বেশ কয়েক বছরের মধ্যে এবারই নিহতের সংখ্যা চার শ’র নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে সেখানে।
প্রতিবছর বজ্রপাতে সব থেকে বেশি মৃত্যু হয় মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই। তবে নতুন একটি সতর্কতা ব্যবস্থা গড়ে তুলে হতাহতের সংখ্যা কমাতে সাফল্য পেয়েছে ওই রাজ্য।
ওই রাজ্যের দুর্যোগ মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিষ্ণুপদ শেঠি বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন ‘আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্থ নেটওয়ার্ক নামের একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি, যারা কোনো এলাকায় বাজ পড়বে, তা প্রায় এক ঘণ্টা আগে জানিয়ে দিতে পারছে। আমাদের কন্ট্রোল রুমে ওই বার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা সেই এলাকায় মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে এস এম এস পাঠিয়ে দিচ্ছি। তাদের বলা হচ্ছে নিরাপদে, কংক্রিটের ছাদের তলায় আশ্রয় নিন। সতর্কবার্তা পাওয়ার সময় থেকে সাধারণ মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছতে দুই থেকে তিন মিনিট সময় লাগছে।’
জিওগ্রাফিকাল ইনফরমেশন সিস্টেমসের প্রকৌশলী ভোলানাথ মিশ্র বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির দ্বারস্থ হয়েছেন তারা। ওই সংস্থাটি (আর্থ নেটওয়ার্ক) আমাদের রাজ্যের নানা জায়গায় ৬টি সেন্সর বসিয়েছে। সেই সেন্সর থেকে সংগ্রহ করা তথ্য তাদের দপ্তরে পৌঁছাচ্ছে। মেঘের অবস্থান, আকৃতি, হাওয়ার গতিপ্রকৃতির মতো অনেকগুলি প্যারামিটার খতিয়ে দেখে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে মোটামুটি কোন এলাকায় বাজ পড়তে পারে। সেই তথ্য আমাদের কন্ট্রোল রুমে আসা মাত্র স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় ওই এলাকায় যতগুলি চালু মোবাইল ফোন রয়েছে, সেখানে এস এম এস ঢুকে যাচ্ছে। এ ছাড়া আমরা একটা অ্যাপ বানিয়েছি। অ্যান্ড্রয়েড আর অ্যাপেল ফোনের জন্য তৈরি সেই অ্যাপেও সতর্কবার্তা ঢুকে যাচ্ছে।’
প্রযুক্তির সহায়তার পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবেও সাধারণ মানুষকে সতর্ক করার চেষ্টা করছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে বজ্রপাতের ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার জন্য স্কুল কলেজ আর গ্রামে গ্রামে ব্যাপক প্রচারাভিযান যেমন চলছে উড়িষ্যায়, তেমনই আর্থ নেটওয়ার্কের পাঠানো সতর্কবার্তা আরও কী কী ভাবে মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়া যায়, সেই পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে তাল, সুপারি, খেজুর বা নারকেল গাছের মতো উঁচু গাছ যাতে কেটে ফেলা না হয়, সেই প্রচারও চলছে। এ ধরনের উঁচু গাছ অনেক সময়েই বাজ আকৃষ্ট করে সাধারণ মানুষকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করে। গাছ হয়তো জ্বলে যায়, কিন্তু মানুষ আশপাশে থাকা মানুষ বেঁচে যান।
উড়িষ্যার দুর্যোগ মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ ১৪টি এলাকা চিহ্নিত করেছে, যেখানে সব থেকে বেশি বাজ পড়ে। সেই সব এলাকায় একটা সাইরেনের ব্যবস্থা চালু করেছে। সতর্কতা জারি হলেই সাইরেন বাজতে থাকবে। কেউ যদি মোবাইলের মেসেজ নাও পড়েন, বা অ্যাপের অ্যালার্ট নাও দেখতে পারেন, তাহলেও সাইরেন শুনেই সতর্ক হয়ে যাবেন। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় বা বন্যা আশ্রয় শিবিরগুলিতে যখন বহু মানুষ এসে ওঠেন, সেখানে যাতে বাজ পড়ে একসঙ্গে অনেক মানুষের মৃত্যু না হয়, তার জন্য ‘লাইটনিং ক্যাচার’ লাগানো হয়েছে। এরপরে স্কুল আর কলেজ গুলিতেও এগুলো লাগানোরে উদ্যোগ নিয়েছে তারা।
পরীক্ষামূলক এই কার্যক্রমটি সফল হলে পুরো উড়িষ্যা রাজ্যেই চালু করা হবে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ।
খবর: বিবিসি বাংলা

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন