যেভাবে রাতারাতি মডেল হলেন ৬০ বছরের দিনমজুর!
পরনে রংচটা শার্ট আর ভাঁজ করা লুঙ্গি। একগাল গোঁফদাড়িতে মুখ প্রায় ঢাকা। কপাল বেয়ে নামা উস্কোখুস্কো চুলে শেষ কবে তেলের ছোঁয়া লেগেছিল, তা মনে পড়ে না বৃদ্ধের। প্রতিবেশিরা তাকে এ চেহারায় দেখতেই অভ্যস্ত। তবে আজকাল ওই বৃদ্ধের গ্ল্যামারের ছটায় চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে তাদের। দিনমজুরি করে আয় করা বৃদ্ধ রাতারাতি হয়ে উঠেছেন ওয়েডিং স্যুটের মডেল!
ভারতের কেরালার কোঝিকোড়ের ওই বৃদ্ধ মাম্মিক্কার দিকে বিশেষ নজর ঘোরাতেন না প্রতিবেশিরা। তবে সাধারণ চেহারার মাম্মিক্কাই আজকাল সকলের নজর কাড়ছেন। বিয়ের স্যুটের মডেল হিসেবে নেটদুনিয়ায় শোরগোল ফেলে দিয়েছেন তিনি। আজকাল তার পরনে উঠছে দামি স্যুট!
মাম্মিক্কার প্রতিদিনের চালচলনে নতুনত্ব ছিল না। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে দৌড়াতে হত রুটিরুজির সন্ধানে। দিনের শেষে সামান্য যা কিছু রোজগার হত, তা দিয়ে মাছ-শাকসব্জি কিনে বাড়ি ফিরতেন। কোঝিকোড়ের বেন্নাক্কড় এলাকায় ওই বৃদ্ধ দিনমজুরের এটাই ছিল নিত্যদিনের রুটিন।
আচমকাই ভাগ্য বদলে গিয়েছে মাম্মিক্কার। রংচটা লুঙ্গি আর শার্ট ছেড়ে দামি স্যুট-টাই গায়ে চড়িয়ে ক্যামেরার মুখোমুখি হচ্ছেন। স্থানীয় একটি ওয়েডিং স্যুট প্রস্তুতকারী সংস্থার হয়ে মডেলিং করে রাতারাতি খ্যাতির আলোয় বৃদ্ধ।
মাম্মিক্কার গ্ল্যামারাস লুক দেখে মুগ্ধ তার প্রতিশিদের পাশাপাশি নেটমাধ্যমের লোকজন। দিনমজুর থেকে রাতারাতি গ্ল্যামারাস মডেল হলেন কী করে?
আসলে কেরালার খ্যাতনামী ফোটোগ্রাফার শরিক বয়ালিল শেখের নজরে পড়ে গিয়েছিলেন মাম্মিকা। তবে সেটি বেশ কিছুকাল আগের কথা। সে সময় ওই দিনমজুর বৃদ্ধের একটি ছবি তুলে ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন শরিক। তা নিয়ে বেশ হইচই পড়ে গিয়েছিল নেটদুনিয়ায়।
মাম্মিক্কার ছবি পোস্ট করার পর তা ভুলেও গিয়েছিলেন শরিক। তবে সম্প্রতি নিজের ওয়েডিং সংস্থার জন্য একজন মডেলের প্রয়োজন হয় তার।
সংবাদমাধ্যমের কাছে শরিক জানিয়েছেন, মডেলের প্রয়োজন পড়তেই একজনের কথাই মাথায় এসেছিল। তিনি মাম্মিক্কা!
তার সংস্থার হয়ে মডেলিং করার জন্য এবার মাম্মিক্কার সঙ্গে যোগাযোগ করেন শরিক। তার মেকওভারও শুরু হয়। মাম্মিক্কাকে দামি সালোঁতে নিয়ে যান। উস্কোখুস্কো চুল ছাঁটা হয় কেতাদুরস্ত ভাবে। খসখসে ত্বকের জেল্লা ফেরাতে ব্যবহার করা প্রসাধনী। এবার ট্রিম করা হয় তার এলোমেলো গোঁফদাড়ি। রাতারাতি ভোল বদলে যায় বৃদ্ধ দিনমজুরের।
ওয়েডিং স্যুটের মডেলিং করার আগে বেশ কয়েকবার ক্যামেরার সামনে দাঁড় করানো হয়েছিল মাম্মিক্কাকে। নানা ছাঁটকাটের স্যুট, শেরওয়ানি পরিয়ে ছবিও তোলা হয় তার। শেষমেশ বৃদ্ধের ফটোশুট শুরু করেন শরিক।
শরিকের হাতের জাদুতে বদলে যায় মাম্মিক্কার লুক। নেটমাধ্যমে দেখা গিয়েছে মডেল মাম্মিক্কার চোখ ধাঁধানো অজস্র ছবি। এক হাতে ধরা অ্যাপল আইপ্যাড। চোখ ঢাকা দামি রোদচশমায়। পরনে দামি স্যুট-টাই। কখনও ঝাঁ-চকচকে এসইউভি’র বাইরে দাঁড়িয়ে। কখনও বা ধীর লয়ে হাঁটছেন। নেটমাধ্যমের এই বৃদ্ধ মডেলকে দেখে অনেকেই বলেছেন, ঠিক যেন মালায়ালাম অভিনেতা বিনায়কান!
ফেসবুক বা টুইটারে মডেল মাম্মিক্কার অজস্র ছবিও চালাচালি শুরু হচ্ছে। ভক্তদের জন্য একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টও খোলা হয়েছে তার।
রাতারাতি তারকার খ্যাতি পেলেও মাটি থেকে পা সরেনি মাম্মিক্কার। তিনি জানিয়েছেন, মডেল হিসেবে আলোড়ন তুললেও দিনমজুরি ছাড়বেন না। এক সময় দিনমজুরি করেই তো সংসার টানতেন মাম্মিক্কা!
সূত্র: নিউজ এনসিআর, ওড়িশা পোস্ট, দ্য কুইন্ট, ইন্ডিয়া টুডে
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন