যেভাবে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার পর কবর দেয়া হয়

একসঙ্গে বেঁধে রাখা মিয়ানমারের ১০ মুসলিম রোহিঙ্গা দেখছেন, তাদের প্রতিবেশী বৌদ্ধরা একটি খবর খুঁড়ছেন। কিছুক্ষণ পরেই সেই কবরে ঠাঁই হল তাদের। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সকালের কথা। বৌদ্ধ গ্রামবাসী অত্যন্ত দুজনকে কচুকাটা করলেন। বাকিরা মিয়ানমার সেনাদের গুলিতে নিহত হন। মার্কিন সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এক কবরে ১০ রোহিঙ্গা, বললেন সো চাই নামে এক সাবেক সেনাসদস্য। তিনি ওই কবর খুঁড়তে সহায়তা করেছিলেন। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো বৌদ্ধ গ্রামবাসী রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে, মুসলমানদের হত্যা করে তাদের লাশ পুঁতে ফেলার কথা স্বীকার করেছেন।

সো চাই বলেন, সেনারা প্রতিটি মুসলিম রোহিঙ্গাকে দুই থেকে তিনবার করে গুলি করেছে। যখন তাদের কবরে রাখা হয়, তখনও তাদের কারো কারো মুখ থেকে শব্দ বের হচ্ছিল।

মিয়ানমারের উপকূলীয় গ্রাম-ইন দিনের এই হত্যাকাণ্ড রোহিঙ্গাদের জাতিগত নির্মূলের চরম নিষ্ঠুর অধ্যায়গুলোর মধ্যে একটি।

কেবল উগ্রপন্থী বৌদ্ধরাই নন, ইন দিনে ১০ রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞে যে দেশটির সেনা ও আধাসামরিক পুলিশ বাহিনীর সদীস্যরাও জড়িত ছিলেন, তার প্রমাণ মিলেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ভাষ্যেও।

বয়স্ক এক বৌদ্ধ গ্রামবাসী রয়টার্সকে তিনটি আলোকচিত্রও দিয়েছেন, যাতে ১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সৈন্যদের হাতে ধরা পড়া থেকে শুরু করে পর দিন সকাল ১০টায় রোহিঙ্গাদের হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য মুহূর্তের ছবিও আছে।

এ তদন্তের সূত্র ধরেই মিয়ানমারের পুলিশ বার্তা সংস্থাটির দুই প্রতিবেদক ওয়া লোন এবং কিয়াও সোয়ে ও’কে রাখাইন সংশ্লিষ্ট গোপন নথি হাতানোর অভিযোগে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর গ্রেফতার করে।

এর মাসখানেক পর ১০ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে ইন দিনে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার খবর নিশ্চিত করা হয়।

অন্যদিকে বৌদ্ধ গ্রামবাসী বলছেন, ইন দিনে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বিদ্রোহীদের অনেক সদস্য মিলে আক্রমণের ঘটনাই ঘটেনি।

উল্টো সেনারাই কাছাকাছি একটি সমুদ্রসৈকতে আশ্রয়ের জন্য যাওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে ১০ জনকে তুলে নিয়ে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের।