যেসব সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে জঙ্গিরা
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে পারস্পারিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করছে জঙ্গিরা। বিশেষ করে টেলিফোন বা মেসেজিং অ্যাপসগুলোতে এসব সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে তারা। সাধারণ মানুষ এসব শব্দ শুনলে বা দেখলে বুঝতেই পারবে না, কী বিষয়ে কথা হচ্ছে। তবে জঙ্গি নিয়ে যারা দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছেন, তাদের অনেকেই এই ‘সাংকেতিক ভাষা’র বিষয়ে ওয়াকিবহাল। বিভিন্ন সময়ে জঙ্গিদের গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ‘সাংকেতিক ভাষা’র অর্থ উদ্ধার করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সম্পৃক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য জানা গেছে।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতেই জঙ্গিরা বিভিন্ন ‘সাংকেতিক ভাষা’ ব্যবহার করে। যেন তাদের এসব ভাষা শুনে পরিকল্পনা সম্পর্কে কোনও আঁচ পাওয়া না যায়।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘জঙ্গিরা প্রতিনিয়ত তাদের ‘কোড ল্যাঙ্গুয়েজ’ চেঞ্জ করে থাকে। মেসেজিং অ্যাপগুলোতে বার্তা আদান-প্রদান করার ক্ষেত্রে তারা কোড ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে। গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব কোড ল্যাঙ্গুয়েজের অর্থ উদ্ধার করা হয়।’’
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট কর্মকর্তারা জানান, জঙ্গিদের প্রচলিত ‘কোড ল্যাঙ্গুয়েজ’ বা ‘সাংকেতিক ভাষা’র মধ্যে অনেক বেশি আরবি শব্দও ব্যবহার করা হয়। জঙ্গিরা তাদের অস্ত্রকে ‘ছামান’ বলে। এছাড়া অস্ত্রকে কলম, থ্রি-পিস, কাঁচা বাজার বা কাপড়ও বলে। গুলিকে ডাকে বিচি নামে। ফল বা জুস বলা হয় গ্রেনেডকে, জুস ব্যাগ অর্থ যে ব্যাগে গ্রেনেড বানানোর সব উপাদান রাখা হয়। ডেটোনেটরকে বলা হয় তাবিজ, জেলকে বলা হয় কলা, অভিযান করাকে বলা হয় বিয়ে বাড়ি যাওয়া, পুলিশের হাতে ধরা খেলে বলা হয় অসুস্থ বা হাসপাতালে বা ডায়রিয়া হয়েছে। কাউকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত হলে বলা হয়, বিদেশে পাঠানো হবে। পুলিশকে তারা কাঙ্গাল বা মামু বলে, র্যাবকে বলে কাক, ক্যান্টনমেন্টকে বলে বড়বাড়ি, জুনুদ অর্থ সেনাবাহিনী, আনফাল অর্থ যুদ্ধ, রাহবার অর্থ পথপ্রদর্শক। আবুল কাশেম অর্থ একে-৪৭, ছিটকিনি অর্থ চাকু, আবুল কাশেমের ছোট ভাই অর্থ চায়না রাইফেল, তাগুত অর্থ সরকারি বাহিনী, রিবাত অর্থ পাহারা ও খোঁজ-খবর নেওয়াকে বলে রেকি করা।
সিটি সূত্র জানায়, জঙ্গিদের ব্যবহৃত অনেক আরবি শব্দের মধ্যে আকিদা শুদ্ধ করাকে মানহাজ, স্বাধীন স্থানকে বলা হয় তামকিন। তাসকিম অর্থ রেফারেন্স, ইদারা অর্থ বিভাগ, তাকওয়া অর্থ ধর্মীয় কার্যক্রম পরিপূর্ণভাবে পালন করা, রিওয়াদা অর্থ রাত জাগা বা রাত্রিকালীন পাহারা, ইয়ানত অর্থ মাসিক চাঁদা, আঁখি অর্থ ভাই, দাবিক অর্থ স্থানের নাম, ইসাবা অর্থ অ্যাকশন বা আক্রমণকারী দল, দায়ী অর্থ দাওয়াতি কার্যক্রম করা, ফিদায়ি অর্থ আত্মঘাতী, আসকারি অর্থ সামরিক, কুয়া অর্থ-শক্তি সঞ্চয় করা।
যারা বাসা ছেড়ে কথিত হিজরতে যায়, জঙ্গিরা তাদের মুহাজির হিসেবে ডাকে উল্লেখ করে সিটির কর্মকর্তা বলেন, যারা বাসায় অবস্থান করছে কিন্তু যেকোনও সময় হিজরত করতে প্রস্তুত রয়েছে, তাদের ডাকা হয় মুনাছির। জঙ্গিদের ভাষায় ইসতামিও অর্থ একত্রিত হওয়া, ইনতেসার অর্থ বিচ্ছিন্ন হওয়া, ইবাদা অর্থ শুরু করা, প্রেসক্রিপশন অর্থ সংবাদ দেখা বা সংবাদ পড়া, চাকরির বিজ্ঞাপন দেখা মানে কোনও ঘটনা ঘটানো, তাজকিয়া অর্থ রেফারেন্স, খোলা অর্থ জামাইয়ের নিকট থেকে স্ত্রীর পুনঃবিবাহের অনুমতি দেওয়া।
সিটির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, জঙ্গিরা প্রতিনিয়ত তাদের সাংকেতিক ভাষা পরিবর্তন করছে। এমনকি ধীরে ধীরে যোগাযোগের পদ্ধতিও পরিবর্তন করছে। প্রথম দিকে জঙ্গিরা সরাসরি যোগাযোগ করতো। পরবর্তী সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতো। বর্তমানে বিভিন্ন মেসেজিং অ্যাপস ব্যবহার করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে মেসেজিং অ্যাপসের যোগাযোগের তথ্য জানা কিছুটা কষ্টকর। তবে উন্নত প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে এসব মেসেজিং অ্যাপস থেকেও নানা তথ্য উদ্ধার করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিন।-প্রতিবেদন বাংলা ট্রিবিউনের সৌজন্যে প্রকাশিত।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন