যে অভিজ্ঞতা নিয়ে গ্রামে ফিরতে হয়েছিল আদুরীকে?
বাংলাদেশে প্রায় চার বছর আগে নির্যাতনের পর মৃত ভেবে গৃহকর্মীকে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল। আজ সে মামলার রায়ে গৃহকর্ত্রীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত। পটুয়াখালী সদর উপজেলার কৌরাখালি গ্রামের মেয়ে আদুরী তার বাবা-মায়ের সপ্তম সন্তান। অভাব আর অনটনের সংসার, তাই শৈশবেই তাকে শুরু করতে হয় অন্যের বাড়িতে কাজ করা। পাঠানো হয় ঢাকায় কিন্তু সেখানেই মাত্র ১১ বছর বয়সে ভয়াবহ নির্যাতনের অভিজ্ঞতা আর চিহ্ন নিয়ে শেষ পর্যন্ত তাকে ফিরে যেতে হয় কৌরাখালি গ্রামে।
২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকার একটি ডাস্টবিন থেকে যখন তাকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ, তখন শিশু আদুরী প্রায় মৃত। পরে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে আদুরীর ওপর গৃহকর্ত্রীর চরম নির্যাতনের বিবরণ। মামলা হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে। আজ সে মামলার রায়ে গৃহকর্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের রায় দিয়েছে আদালত। পুলিশের তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের যে বাসায় কাজ করতে দেওয়া হয়েছিল সে বাসার গৃহকর্ত্রী ধারালো চাকু দিয়ে কেটে আর গরম ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাঁকা দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে আদুরীর শরীর।
পরে মারাত্মক জখম অবস্থায় মরে গেছে মনে করে তাকে ফেলে দেওয়া হয় ডাস্টবিনে, আর সেখান থেকেই মৃতপ্রায় আদুরীকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এর পর আদুরীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর গঠন করা হয় উচ্চ পর্যায়ের মেডিক্যাল বোর্ড। তখন চিকিৎসকরা জানান, আগুনের কারণে চামড়া কুঁচকে যাওয়া এবং থেঁতলে যাওয়া মাংস সহ আদুরীর মাথা থেকে পা সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখমের চিকিৎসা করা হচ্ছে। পাশে বসে থাকা আদুরীর মা সাফিয়া বেগম বলেছিলেন যে তার মেয়ে তাকে বলেছে তার শরীরে ব্লেড দিয়ে পোঁচ দেওয়া হয়। এমনকি গরম ইস্ত্রি দিয়ে তার শরীরে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে।
পরে আদালতে গিয়েও গৃহকর্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের বর্ণনা দেয় আদুরী। আদুরী জানায় সারা দিন কাজ করিয়ে শুধু মুড়ি কিংবা কখনো কখনো শুধু ভাত আর লবণ মরিচ দেওয়া হতো খাওয়ার জন্য আর তার থাকার জায়গা মিলত ব্যালকনিতে। সেই গৃহকর্ত্রী অবশ্য নিজেও আদালতে আদুরীকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছেন। আজ সেই মামলার রায়ে আদালত গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড আর এক লাখ টাকা জরিমানার রায় দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের পিপি আলী আসগর স্বপন। রায় ঘোষণার পর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আদুরীর মা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন