যে কারণে জোবাইদাকে এখনই নেতৃত্বে আনার কথা ভাবছে বিএনপি
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর ভোট।
প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ বহু আগ থেকেই নির্বাচনী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বিভিন্ন জরিপের আলোকে প্রার্থীও প্রায় ঠিক করে ফেলেছে।
অথচ মাঠের বিরোধী দল বিএনপি এখনও নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারেনি। গতকাল রোববার তারা নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। স্বভাবতই দেরিতে মাঠে নামায় প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক পিছিয়ে বিএনপি।
বিএনপির ভাবমূর্তিও অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ। দলের শীর্ষ নেতারা দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুই মামলায় ১৭ বছর সাজা নিয়ে কারাবন্দি। আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুর্নীতির একাধিক মামলায় দণ্ডিত হয়ে লন্ডনে অনেকটা নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন।
আদালত দণ্ড স্থগিত না করলে বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার কেউ নির্বাচন করতে পারবে না। এমতাবস্থায় জিয়া পরিবার থেকে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কাউকে দলের নেতৃত্বে আনার দাবি বিএনপির তৃণমূলের।
সে ক্ষেত্রে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমানকে বিএনপির নেতৃত্বে আনার কথা ভাবছে বিএনপি। জোবাইদার মতো স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জিয়া পরিবারের কাউকে ক্ষমতায় আনলে ভোটারদের কাছে যেমন বার্তা দেয়া যাবে, দলের কর্মীরাও চাঙ্গা হবেন বলে মনে করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
ভারতের বহুল প্রচারিত দৈনিক আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
নাম উল্লেখ করতে অনিচ্ছুক বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বরাত দিয়ে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-কর্মীদের চাঙ্গা করে নতুন উদ্যমে ভোটের ময়দানে নামাতে এবং দলে জিয়া পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে নেতৃত্বে আনার বিষয়টি একরকম চূড়ান্ত করে ফেলেছে রাজনীতিতে কোণঠাসা বিএনপি।
জিয়া পরিবারের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার আরও লিখেছে-কারাবন্দি খালেদা জোবাইদা রহমানের নেতৃত্বে আসার বিষয়ে সায় দিয়েছেন। তারেক রহমানও সম্মত। পেশাদার চিকিৎসক জোবাইদা রহমানও ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন যে, বিএনপির হাল ধরতে তিনি তৈরি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এক নেতার উদ্ধৃতি দিয়ে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—ভারতে গান্ধী পরিবারের নেতৃত্ব ছাড়া কংগ্রেস যেমন চলতে পারে না, বাংলাদেশে শেখ পরিবারের কাউকে ছাড়া আওয়ামী লীগকে যেমন ভাবা যায় না, তেমনি জিয়া পরিবারের নেতৃত্ব ছাড়াও বিএনপি টিকতে পারে না। দলের নেতৃত্বে তরুণ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কোনো গ্রহণযোগ্য মুখ এনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ‘দেশি-বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষীরাও।
বিষয়টি মেনেই জুবাইদাকে রাজনীতিতে আনার কথা ভাবা হয়েছে। সিলেট, ফেনী ও বগুড়ার একাধিক আসনে তাকে প্রার্থীও করা হতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
নাম উল্লেখ করতে অনিচ্ছুক বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বরাত দিয়ে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-জোবাইদা রহমান প্রাথমিক সদস্যপদ নিয়ে শিগগিরই বিএনপির রাজনীতি শুরু করবেন। সে ক্ষেত্রে নিজ বাড়ি সিলেট কিংবা শ্বশুরবাড়ি বগুড়া জেলা কমিটির প্রাথমিক সদস্যপদ দেয়া হবে জোবাইদাকে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্রবধূকে আপাতত দলের ভাইস চেয়ারম্যান করার পরিকল্পনা রয়েছে।
নির্বাচনী কাজ সমন্বয়ের দায়িত্বও তার হাতে ছাড়ার কথা বিএনপি নেতৃত্ব ভাবছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আপাতত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেকের নির্দেশানুযায়ী তিনি দল চালাবেন।
মনোনয়ন ফরমে সই করতে পারছেন না জোবাইদা রহমান। তার পাসপোর্ট আপাতত লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনের হাতে থাকায় ঢাকা ফিরতে সময় লাগবে।
সে জন্য প্রচারের মঞ্চ থেকে তার ভিডিও-বক্তৃতা প্রচারের কথা ভেবে রেখেছেন বিএনপি নেতৃত্ব।
প্রতিবেদনটিতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় নারী হিসেবে ডা. জোবাইদা রহমানের উত্থান হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্রবধূর রাজনীতিতে অভিষেক সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
জোবাইদার বাবা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী জিয়াউর রহমানের আমলে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারে তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানী জোবাইদার কাকা। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আইরিন খানের চাচাতো বোন জোবাইদা চিকিৎসকদের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম হন।
লন্ডনের ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিন থেকে রেকর্ড নম্বর ও স্বর্ণপদক নিয়ে এমএসসি করেছেন।
প্রসঙ্গত, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের রাজনীতিতে আসার গুঞ্জন নতুন নয়। বহুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে জিয়া পরিবারের এ সদস্য বিএনপির রাজনীতির হাল ধরবেন। তবে এখনও পর্যন্ত জিয়া পরিবারের কেউ এ বিষয়ে কিছুই বলেননি।-আনন্দবাজারের প্রতিবেদন
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন