যে কারণে তিন ভাইকে বিয়ে করতে হয় কিশোরীর!
প্রথমে তার বিয়ে হয় এক তালিবান জঙ্গির সঙ্গে। তার মৃত্যু হয় মার্কিন সেনার হাতে। এরপর তার বিয়ে হয় এক পুলিশকর্মীর সঙ্গে। সে মারা যায় তালিবানদের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে। আর তৃতীয় স্বামী ছিল এক দোভাষী।
মার্কিন সেনাদের দোভাষী হিসেবেই তাকে কাজ করতে হত। এখন তার জীবনও বিপন্ন। কারণ তালিবানরা তাকে এবং তার শিশুপুত্রকে খুনের হুমকি দিচ্ছে। এই ঘটনা যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের।
খাদিজা নামে এক আফগান কিশোরীর জীবনেই ঘটেছে এই ঘটনা। খাদিজার বয়স এখন ১৮।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ‘দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদিজার তিন স্বামী আসলে তিন ভাই। তাদের পাখতুন সমাজের নিয়ম- মৃত ভাইয়ের বউকে বিয়ে করতে হবে স্বামীর পরের ভাইকে। এভাবেই তাকে পেরতে হয় পর পর তিনটি দাম্পত্য।
দক্ষিণ আফগানিস্তানের এক আফিম উৎপাদক কৃষক পরিবারের মেয়ে খাদিজা। জন্মের আগেই তার বাবা তার খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলেন। সেই ৬ বছর বয়সে খাদিজার বিয়ে হয় তার থেকে ১৫ বছরের বড় জিয়া উল হকের সঙ্গে। সে সময়ে তাদের বাসভূমি মারজা ছিল তালিবানদের স্বর্গ।
জিয়া তালিবানদের খাতাতেই নাম লেখায়। মাঝে মাঝে সে বাড়ি আসত। কিন্তু মারজায় মার্কিন সেনার প্রভাব বাড়লে তার আনাগোনা কমে আসে। এক সময়ে বন্দুকযুদ্ধে সে মারা যায়। খাদিজার বয়স তখন ১০।
জিয়ার পরের দুই ভাই পুলিশে চাকরি করত। পুলিশও এই সময়ে যুদ্ধে লিপ্ত। তাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠটির সঙ্গেই খাদিজার আবার বিয়ে হয়। তার নাম আমিনুল্লাহ্। তার বয়স সেই সময় ২২।
এরপর ২০১৪-এ আমিনুল্লাহও মারা যায়। খাদিজার গর্ভে তখন সন্তান। ১৪ বছর বয়সে তার এক কন্যাসন্তান জন্মায়। চার মাস পরে বিধবা খাদিজার পুনর্বিবাহ হয় পরের ভাই শামসুদ্দিনের সঙ্গে।
শামসুদ্দিন তার পরিবার নিয়ে হেলমন্দ প্রদেশের রাজধানী লস্কর গড়ে চলে যায়। এবং সেখানে সে প্রতিদিন ২৫ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে দোভাষীর কাজ করতে থাকে। কিন্তু একদিন সেই চাকরিও চলে যায়।
এরপর শামসুদ্দিন রিকশা চালানো শুরু করেন। ইতিমধ্যে তাদের পরিবারের বাকি পুরুষরা মারা যায়। কখনও তালিবান হানায়, কখনও বা যুদ্ধে। শামসুদ্দিন একাই বেঁচে থাকে খাদিজা আর শিশুকন্যাটিকে নিয়ে।
সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শামসুদ্দিন জানিয়েছে, সে খাদিজাকে বিয়ে করতে চায়নি। পরিবার তাকে বাধ্য করেছে বড় ভাইয়ের বিধবাকে বিয়ে করতে। সে চেয়েছিল, খাদিজা অন্য কাউকে বিয়ে করুক। কিন্তু তখন কিছুই করার ছিল না।
আজ খাদিজা ও শামসুদ্দিনের এক পুত্রসন্তানও রয়েছে। তালিবানরা নিয়মিত ফোন করে সেই শিশুটিকে হত্যার হুমকি দেয়। শামসুদ্দিনও নিয়মিত প্রাণনাশের হুমকি শোনে। যুদ্ধ আর তালিবানি শাসন তাদের সমস্ত স্বপ্নকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।
এই কাহিনী একা খাদিজার নয়। এটা আফগান গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ পরিবারেরই ছবি। খাদিজার হাত ধরে পুত্র-কন্যা নিয়ে বাঁচতে চায় শামসুদ্দিন। আর কোনও স্বপ্ন তার সামনে নেই। অষ্টাদশী খাদিজার চোখ শুকনো। সেখানে ছায়া নেই কোনও মেঘের। আবার কি তালিবানরা দখল নেবে শহরের? আশঙ্কায় দিন কাটে, দিন কেটে যায়…
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন