যে কারণে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে চায় বিএনপি

১০ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু নয়াপল্টনের পরিবর্তে ২৬ শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলছেন, যে কোনো মূল্যে নয়াপল্টনেই তারা সমাবেশ করবেন। সামগ্রিক পরিস্থিতি, ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের গতিবিধি পর্যালোচনা করে ২৮ নভেম্বর দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে।

বিএনপি সূত্র বলছে, নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে লোক সমাগমে সুবিধা বেশি। চারদিক থেকে নির্বিঘ্নে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হতে পারবেন। পশ্চিমে কাকরাইল-বিজয়নগর মোড়, দক্ষিণে পুরানা পল্টন মোড়, পূর্বে ফকিরাপুল এবং উত্তরে রাজারবাগ ও মালিবাগ মোড় দিয়ে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে দলে দলে সমাবেশে যোগ দিতে পারেন। সমাবেশে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও নেতাকর্মীরা চারদিকের রাস্তা দিয়ে নিরাপদে সরে যেতে পারেন। তা ছাড়া নিজেদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে হওয়ায় নেতাকর্মীদের মনোবলও চাঙ্গা থাকে।

অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের গেট খুবই সরু। এ গেট দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীর আসা-যাওয়া বিঘ্নিত হয়। এতে প্রচণ্ড ভিড় হয়। সার্বিকভাবে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিক থেকে ঢুকতে গেলে ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগের হামলার শিকার হতে পারেন তারা। আবার শাহবাগ দিক থেকেও একই শঙ্কা। চারপাশে আটকানো উদ্যানের ভেতর লাখ লাখ নেতাকর্মীকে ভেতরে ঢোকানো ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করে দলটি। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বেন নেতাকর্মীরা।

গত ২০ নভেম্বর ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি চায় বিএনপি। এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলে নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে বলেও মনে করছে দলটি।

সমাবেশ শেষ করে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়তে হতে পারে। অন্যদিকে অতীতের মতো কর্মসূচি শেষে পুলিশের পক্ষ থেকে লোকজনকে গ্রেফতার করারও ভয় আছে বিএনপিতে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চাই নাই। আবেদনের কোথাও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আভাসও দেয়া হয় নাই। সরকার হঠাৎ এত নমনিয় হয়ে কোনো উদ্যানে অনুমতি দিলো? এখানে হাজারো প্রশ্ন। শুধু আমাদের না, সকল রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের প্রশ্ন। এখানে ঘটনা কী তাহলে? আমরা তো এখানে চাই নাই, কেনো এখানে দিবে।

তিনি বলেন, আমরা নয়াপল্টনে অফিসের সামনে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ডিএমপি কমিশনার থেকে যেহেতু আমাদের কাছে চিঠি আসছে। সে ক্ষেত্রে আমরা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেবো যে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।

এক প্রশ্নের জবাবে আলাল বলেন, নয়াপল্টনে সমাবেশ করার কিছু সুবিধা তো আছেই। সব সুবিধার কথা তো আর বলা যাবে না। আমাদের সম্প্রতী কর্মসূচি সেখানেই হয়েছে। সেখানে সমাবেশ করে আমরা সুবিধা পেয়েছি।

নয়াপল্টনে সমাবেশের সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা নয়াপল্টনে সমাবেশ করব। এটা আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। নয়াপল্টন ঘিরেই আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সরকার অনুমতি দিলেও আমরা তো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চাইনি। সেখানেই সরকার কেন অনুমতি দিল? তাদের উদ্দেশ্য কী?

দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তি, জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপক্ষে সরকারের দাবিতে দলের সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ করেছে বিএনপি।ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেট ও কুমিল্লায় বিভাগীয় সমাবেশ সম্পন্ন করেছে দলটি। আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই ধারাবাহিক কর্মসূচি।

এদিকে ঢাকার গণসমাবেশ সফল করতে সাতটি উপকমিটি করা হয়েছে। যেখানে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান ও আবদুস সালামকে কো-কনভেনর এবং ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদকে সদস্য সচিব করে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা উপকমিটি।-বিডি জার্নাল