যে কারণে রংপুরে বিএনপির ভরাডুবি

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেও আশানুরূপ ফল পায়নি বিএনপি। দল সমর্থিত প্রার্থী কাওছার জামান বাবলার ব্যাপক ভরাডুবি হয়েছে। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে এমন ফলাফল হয়েছে বলে মনে করেন দলের নেতারা। এছাড়া দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকেও দায়ী করেছেন কেউ কেউ। তবে সরকার কৌশলে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে বিজয়ী করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন দলের একাধিক নেতা।

নির্বাচনে মোট ১৯৩টি কেন্দ্রে লাঙ্গল প্রতীকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়ে ভূমিধস বিজয় পান জাপার মোস্তফা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সদ্য সাবেক মেয়র সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টু পেয়েছেন ৬২ হাজার ৪০০ ভোট। তিনি নিজ কেন্দ্রেই জাপা প্রার্থীর কাছে হেরেছেন। বিএনপির প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা বলতে গেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেননি। তিনি ভোট পেয়েছেন মাত্র ৩৫ হাজার ১৩৬টি। দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থীরও অর্ধেকের চেয়ে সামান্য বেশি ভোট পেয়েছেন বিএনপি প্রার্থী বাবলা। কোনো ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ই দেখাতে পারেননি তিনি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের সাংগঠনিক ব্যর্থতার কারণেই মূলত নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিএনপি ছিটকে পড়েছে। এ নির্বাচনে জোটগতভাবেই মাঠে নামা হয়নি বিএনপির। স্থানীয় নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আর মূল দলের সঙ্গে অঙ্গদলের কোনো সমন্বয় না থাকায় ফলাফলে এমন ভরাডুবি।

এছাড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের শরিক জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতাদর্শের ভোট থেকেও বঞ্চিত হয় ধানের শীষ সমর্থিত প্রার্থী।

রংপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে সমন্বয়ক দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর অবস্থা ভালো ছিল না। এ কথা এর আগেও বলেছি, এখনও বলছি। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতবে না বলেই তারা কৌশলে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে জিতিয়েছে। কারণ আমি প্রচার-প্রচারণার সময় মাঠে থেকে দেখেছি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কী অবস্থা।’

সরকার কেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী জেতাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি তো আর সরকারের বাইরে নয়।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ নেতা আরও বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় করে ছাত্রদল, যুবদলসহ অঙ্গ দলগুলো কাজ করেছে। এখানে সাংগঠনিকভাবে কোনো দুর্বলতা আছে বলে আমি মনে করি না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আসলে জাতীয় পার্টির এলাকা, আমি ওইভাবে বলব। এখানে বিএনপির আরও সাংগঠনিক দক্ষতা দেখানো উচিত ছিল। সরকারের কারণেও কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। এর মধ্যেও বিএনপির আরও ভালো করা উচিত ছিল। প্রচারণায়ও ঘাটতি ছিল।’

দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী বলেন, ‘৯৬ সালের পর থেকে বিএনপি রংপুরে সেরকম সাংগঠনিকভাবে সুসংগঠিত হতে পারেনি। যে কারণে নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি হয়েছে যার নেতিবাচক প্রভাব নির্বাচনের ফলাফলে পড়েছে।

তিনি বলেন, ‘সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে আমরা পেছনে পড়েছি। নির্বাচন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ, যে কারণে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি।’

রংপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইস আহমেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ইলেশকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে নির্বাচনে জিতিয়েছে। জনগণের প্রতি তাদের আস্থা নেই বলে তারা বারবার নির্বাচনে কারচুপি করে ফলাফল নিজেদের পক্ষে নেয়।’

এছাড়া রংপুর জেলা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দলীয় কোন্দলের কারণে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠ নামতে পারিনি যার প্রভাব ফলাফলে পড়েছে। তবে আওয়ামী লীগ এতো ভোট পাওয়ার কথা নয়। আমরা যখন প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি, তখনই আওয়াজ পাচ্ছিলাম। সরকার কৌশল করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে জিতিয়েছে।’

গত ১৮ ডিসেম্বর রংপুর সফর করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই দিন তিনি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালান। এছাড়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে প্রধান করে রসিক নির্বাচনের জন্য একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করে বিএনপি। দলের কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতা রংপুর সিটি নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা চালান।-পরিবর্তন ডটকম