বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন
যে ঢাবি শিক্ষার্থীর তথ্যের ভিত্তিতে উদ্ধার হয় অপহৃত শিশু জিনিয়া
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ফুল বিক্রেতা শিশু জিনিয়াকে পুলিশ উদ্ধার করলেও এর সূত্র খুঁজে পেতে সহায়তা করেছিলেন এক শিক্ষার্থী।
যার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সূত্র খুঁজে পায় তার নাম হয়তো অনেকে জানেন না।
চলতি মাসের ১ তারিখে সকালের দিকে টিএসসি এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় শিশু জিনিয়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠন এবং শিক্ষার্থীদের নজরে বিষয়টি এলে শিশু জিনিয়ার খোঁজে অনেকে ব্যাকুল হয়ে উঠে।
এরপর কয়েকদিন শাহবাগ থানা পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ করলেও শিশু জিনিয়াকে খুঁজে বের করার ব্যাপারে তেমন কোনও অগ্রগতি পাচ্ছিল না।
অন্য অনেকের মতোই বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র আরাফাত চৌধুরীর নজরে আসে।
ঘটনার চারদিন পর অর্থাৎ ৫ সেপ্টেম্বর আরাফাত চৌধুরী টিএসসি এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথা বলেন।
এদের মধ্যে কেউ শিশু জিনিয়াকে দেখেছে কি না সে বিষয়টি জানার চেষ্টা করেন আরাফাত চৌধুরী।
এছাড়া টিএসসি এলাকা ও চারপাশের রাস্তাগুলোতে যত ক্লোস সার্কিট ক্যামেরা আছে সেগুলোও শনাক্ত করেন আরাফাত চৌধুরী।
আরাফাত চৌধুরী বলেন, “আমি ৫ তারিখে টিএসসিতে এসে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সব প্রত্যক্ষদর্শীকে একসঙ্গে করেছি। আমি সবার কাছ থেকে ডিটেইলস নিয়েছি – জিনিয়া কখন কোথায় বসেছে, কোথায় চটপটি খেয়েছে, ওর সাথে যারা কথা বলেছে তারা দেখতে কেমন, তাদের পরনে কী ছিল – ইত্যাদি।”
এসব তথ্য জোগাড় করে আরাফাত চৌধুরী নিজে উদ্যোগী হয়ে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে যান এবং তার কাছে থাকা তথ্য পুলিশকে জানান।
আরাফাত চৌধুরীর দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে পুলিশও আরও তদন্ত করে।
এরপর চারদিনের মাথায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ জিনিয়াকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ থেকে।
ঢাকার রমনা জোনের পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) এসএম শামীম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আরাফাত চৌধুরী তথ্য দিয়ে সহায়তার কারণে শিশু জিনিয়াকে দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
শামীম বলেন, “ছেলেটা ছিল, সবসময়ই ছিল। ও শুরু থেকেই সবজায়গায় ঘোরাঘুরি করেছে। তথ্য দিয়ে হেল্প করেছে।”
“লোকজন সহায়তা করেছে বলেই তো আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি। আমরা এমনিতেই পারতাম হয়তো। কিন্তু তাতে হয়তো আরো সময় লেগে যেতো।”
কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণ মানুষ তথ্য দিয়ে সহায়তা করলে পুলিশের কাজ অনেক সহজ হয়।
তিনি বলেন, পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তার ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে এক ধরনের ‘আজন্ম ভীতি’ রয়ে গেছে।
পুলিশকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করলে তথ্য প্রদানকারীর সঙ্গে পুলিশের একটি ভালো সম্পর্ক থাকে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এই ঘটনাটিকে পুলিশ অপহরণ বলেই বর্ণনা করছে।
“বৈধ অভিভাবককে না বলে শিশুটিকে নিয়ে গেছে। এটা অপহরণই তো। মেয়েটাকে কাজের কথা বলে নিয়ে গেছে। তার অন্য কোনও মোটিভ ছিল কি না সেটা আরেকটু সময় গেলে আমরা বুঝতে পারতাম। তার আগেই জিনিয়াকে উদ্ধার করা হয়েছে,” বলেন পুলিশ কর্মকর্তা শামীম।
শিশু জিনিয়া অপহরণের ঘটনায় লুপা তালুকদার নামে এক নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
লুপা তালুকদার নিজেকে একজন ‘সাংবাদিক’ এবং একইসঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচয় দেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন