যে ১০টি বদ অভ্যাসের কারণে জীবনে ব্যর্থ হচ্ছেন আপনি
আমাদের সকলেরই এমন সব বদঅভ্যাস আছে যেগুলো আমরা বারবার করি। কেউ তার নখ কামড়ায়।
আবার কেউ সারাদিন ধরে জাঙ্কফুড খায়।
কিন্তু এমন কিছু বদঅভ্যাস আছে যেগুলো আমাদের নিত্যদিনের তৎপরতায় উৎপন্ন। এই অভ্যাসগুলো এতটাই কমন যে আমরা এমনকি সেগুলো নিয়ে ভাবিও না। যতক্ষণ না কেউ আমাদেকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
আসুন জেনে এমন ১০টি অভ্যাস সম্পর্কে যেগুলো আপনার অজান্তেই আপানাকে ব্যর্থ করছে।
১. দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা
শহুরে জীবন শারীরিক তৎপরতার দিক থেকে খুবই নিষ্ক্রিয় ধরনের। শহুরে মানুষরা, বিশেষকরে চাকরিজীবিরা প্রতিদিন প্রায় ৮ ঘন্টা ধরে ডেস্কে বসে থাকেন। আর শুধুমাত্র দুপুরের খাবার বা কফি ব্রেকের সময়ই ডেস্ক থেকে একটু বের হন। কিন্তু আমরা প্রায় সকলেই জানি ডেস্কে বসে থাকার এই দুর্ভাগ্যজনক জরুরত আমাদেরকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
ডেস্কে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে স্থুলতায় আক্রান্ত হওয়া, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
এই অবস্থাকে বিপাকীয় সিন্ড্রোম বলে। এবং গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ডেস্কে ৪ ঘন্টার বেশি সময় স্থির হয়ে বসে থাকে এর কারণে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৫০% বেড়ে যায়। আর এর ফলে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে ১২৫%। এর পরিবর্তে আপনি কী করতে পারেন? প্রতি ৩০ মিনিট পরপর ডেস্ক থেকে উঠে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করে আসুন। ফোনে কল আসলে ডেস্ক থেকে উঠে গিয়ে হেঁটে হেঁটে কথা বলুন। কফি ব্রেকের সময় সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলুন। একটু পরপর দাঁড়ান এবং হাঁটুন।
২. কুঁজো হয়ে থাকা
এ থেকে পিঠ, কাঁধ এবং ঘাড়ে ব্যথা সৃষ্টি হয়। এছাড়া স্পন্ডিলাইটিস, ভার্টাব্রাল অ্যানোম্যালি এবং এমনকি পিঠে কুঁজও তৈরি হতে পারে। সূতরাং আপনি যদি এই অভ্যাস থেকে মুক্ত হতে চান তাহলে এই বিষয়ে আপনাকে প্রথমেই সচেতন হতে হবে যখনই কুঁজো হওয়ার চেষ্টা করবেন সাথে সাথেই তা শুধরে নিতে হবে।
৩. স্ট্রেচিং না করা
আপনার দেহের মাংসপেশিগুলো হলো রাবার ব্যান্ড এর মতো। ফলে আপনি যখন শারীরিক তৎপরতায় লিপ্ত হন তখন সেগুলো সংকুচিত এবং শিথিল হয়ে নড়া-চড়া করে। কিন্তু যখন আপনি বিশ্রামে থাকেন তখন আপনার মাংসপেশিগুলো সংকুচিত হয়ে পড়ে থাকে। এবং আপনি পুনরায় নড়া-চড়া না করা পর্যন্ত আপনার অঙ্গভঙ্গিতে ভারসাম্য আসে না। আর দুর্ভাগ্যক্রমে যখন আপনি দীর্ঘ সময় ধরে স্থির থাকেন তখন এই মেকানিজম নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে আপনার অস্তিত্বের জন্য ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে। যারা দীর্ঘক্ষণ ডেস্কে বসে থাকে তাদের মাংসপেশিতে এবং পিঠেও ব্যথা তৈরি হতে পারে।
৪. ওজন কমানোর ব্যাপারে অতিচিন্তা করা
দুর্ভাগ্যক্রমে ওজন কমানোর ব্যাপারে অতিরিক্ত ভাবিত হওয়া এবং তা নিয়ে আবেশে আক্রান্ত হলে এতে আপনার দীর্ঘমেয়াদে কোনো লাভ হবে না। কারণ আপনি যখন শুধু জীবনের একটি দিক নিয়ে বেশি ভাবিত হয়ে পড়েন তখন আপনি শুধু তা থেকেই আত্মবিশ্বাস অর্জনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে এই একটি দিকের একটু এদিক ওদিক হলেই আপনি হতাশ হয়ে পড়েন। আর যে কোনো ব্যাপারেই এই কথাটি প্রযোজ্য। সুতরাং কোনো বিষয়ে খুব বেশি আসক্ত হয়ে পড়বেন না।
৫. লিফটে চলাচল করা
সিঁড়ি দিয়ে ওপরে না ওঠে সবসময়ই লিফটে চলাচল করলে আপনি স্থুলতায় আক্রান্ত হবেন। যা আপনার সার্বিক জীবনের ওপর প্রভাব ফেলবে। তবে এমন নয় যে, ২২ তলা বা ৩৫ তলায় বাসা হলে সেখানেও সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠতে হবে। অন্তত ৬ থেকে ৭ তলা পর্যন্ত আপনি সিড়ি বেয়ে উঠতে পারেন।
৬. শরীরচর্চার জন্য কোনো উপলক্ষের জন্য অপেক্ষা করা
অনেকেই নতুন বছরের শুরুতে শরীর চর্চা শুরু করেন ব্যাপক উদ্যম নিয়ে। কিন্তু কিছুদিন পরই সেই উৎসাহে ভাটা পড়ে। সুতরাং কোনো উপলক্ষের অপেক্ষা না করে বরং বছরজুড়েই শরীরচর্চা করার মনোভাব বজায় রাখুন।
৭. খাবার কম খাওয়া
প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার খেলে ওজন তো কমবেই না বরং তা আরো প্রকট রুপ ধারণ করবে। আর স্থুলতা না থাকলে অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা বা হাড়গিলা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে।
৮. অসময়ে ঘুমানো
দেহঘড়ির প্রতিকুল সময়ে ঘুমানোর ফলে আরো বেশি অনিদ্রা, পাকস্থলির রোগ এবং মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। সুতরাং একদিন রাত ১টার সময় তো আরেকদিন রাত ১০টার সময় ঘুমানোর বদঅভ্যাস ত্যাগ করুন। তারচেয়ে বরং আপনার দেহের জন্য উপযোগী এমন একটি নির্দিষ্ট রুটিনে প্রতিদিন ঘুমাতে যান।
৯. ঘুমাতে যাওয়ার আগে স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ব্যবহার করা
আপনার ঘুম চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে মেলাটোনিন নামের হরমোন। আর অন্ধকার ছাড়া এই হরমোন যথাযথভাবে কাজ করে না। আর এ কারণেই হয়তো লোকে দিনের বেলা সহজে ঘুমাতে পারেন না।
১০. ঘুমের বড়ি সেবন
ঘুমের বড়ি স্বাস্থ্যের জন্য সত্যিই বেশ ক্ষতিকর। কারণ ঘুমের বড়ি কৃত্রিমভাবে আপনাকে মেলাটোনিন এবং সেরোটোনিন সরবরাহ করে। ঘুমিয়ে পড়ার জন্য এই হরমোন জরুরি। কিন্তু কৃত্রিমভাবে এই হরমোন নিঃসরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে পরে আর প্রাকৃতিকভাবে এই হরমোন উৎপাদন সম্ভব হয় না। সুতরাং অনিদ্রা হলে ঘুমের বড়ি সেবন না করে কিছুদিন অপেক্ষা করুন। দেখবেন কয়েক রাত স্বাভাবিকভাবে ঘুমাতে যাওয়ার ফলে পুনরায় আপনার দেহে ঘুমের হরমোন প্রাকৃতিকভাবেই নিঃসরিত হচ্ছে। এবং অনিদ্রা দূর হয়ে গেছে।
সূত্র: বোল্ডস্কাই
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন