রংপুরের গোপালপুর দ্বি-মূখী উচ্চ বিদ‍্যালয় এন্ড কলেজে অনিয়ম-দুর্নীতি ও শিক্ষকদের নির্যাতনের অভিযোগ

১০ বছর ধরে ভারপ্রাপ্তের ভারে জর্জরিত রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার গোপালপুর দ্বি-মূখী উচ্চ বিদ‍্যালয় এন্ড কলেজ। ২০১৪ সালের ১২ এপ্রিল হতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পেয়ে নিজের ইচ্ছেমত অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেছেন প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও শিক্ষকদের নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

তাকে অপসারণে জন্য ওই প্রতিষ্ঠানের ৭ শিক্ষক রংপুর জেলা প্রশাসক, শিক্ষা কর্মকর্তা ও মিঠাপুকুর ইউএনও বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন। প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ভাড়া দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, টিআর-কাবিখার অর্থ লোপাট ও অতিরিক্ত ফির আদায়ের টাকা পকটস্থ করার অভিযোগও রয়েছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে দ্বি-মূখী গোপালপুর উচ্চ বিদ‍্যালয় এন্ড কলেজে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১২ এপ্রিল অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক মৃত্যুবরণ করলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ মাধ্যমিক শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম। এরপর থেকে তিনি শুরু করেন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি। এর ফলে শিক্ষার্থী সংকটে বন্ধ হয়ে যায় কলেজ শাখাটি। ধিরে ধিরে কমতে শুরু করে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থী। ১০ বছরের তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে পরিনত করেছেন অর্থ লোপাটের আখড়ায়।

শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম ইতোমধ্যে শিক্ষক ওমর ফারুক, তাজনুর ইসলাম, মিথুন চক্রবর্তী, উজ্জ্বল কুমার মন্ডল, এরশাদুল হক তুহিন, নারায়ন চন্দ্র ও আবুল খায়েরকে বিভিন্ন সময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও নির্যাতন করেছেন। ভারপ্রাপ্ত অধক্ষের অনিয়ম ও দূর্নীতির প্রতিবাদ করায় এসব শিক্ষককে হয়রানী ও নির্যাতন করা হয়েছে বলে শিক্ষকরা দাবি করেন।

শিক্ষক ওমর ফারুক বলেন, ১০ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানটিকে অনিয়ম ও দুর্নীতির আতুরঘরে পরিনত করেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে অতিরিক্ত ফি আদায়, প্রতিষ্ঠানের মার্কেটের ভাড়া উত্তোলন, গাছ বিক্রি ও জমি লিজের টাকা এবং উন্নয়ম মুলক কর্মকান্ডের জন্য সরকারী বরাদ্দ আত্মসাৎ করেছেন।

আমরা এর প্রতিবাদ করায় আমাদেরকে নানা ভাবে হয়রানী ও নির্যাতন করছেন। একই কথা বলেন শিক্ষক তাজনুর ইসলাম, মিথুন চক্রবর্তী, উজ্জ্বল কুমার মন্ডল, এরশাদুল হক তুহিন, নারায়ন চন্দ্র।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, ১০ বছরে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মান নিম্মমুখী হয়েছে। বছরে বছরে কমেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বর্তমানে এমন পর্যায়ে এসেছে, অনেক অভিভাবক বিদ্যালয় হতে শিক্ষার্থীদের ছাড়পত্র নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের ভর্তি করাচ্ছেন। অনেক আগে বন্ধ হয়েছে কলেজ শাখাটি।

কয়েকজন অভিভাবক জানান, ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি এখন টিকে থাকায় মুশকিল। শিক্ষার মান এতটাই নিম্মমুখী হয়েছে যে, সেখানে শিক্ষার্থী পাঠাতেই ভাবতে হচ্ছে। মুলত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম ওদূর্নীতির ফলে প্রতিষ্ঠানটির এই অবস্থা। শিক্ষকদের উপর নির্যাতন,হামলা-মামলায় জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলামকে অপসারণ খুবই জরুরী।

গোপালপুর দ্বি-মূখী উচ্চ বিদ‍্যালয় এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম বলেন,আমি ১০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব পালন করছি। আমি অনেকবার নিয়োগের চেষ্টা করেছি, হামলা-মামলার কারণে নিয়োগ হয়নি। আমি ভারপ্রাপ্তের দায়িত্বে না থাকলে আগের জায়গায় ফেরৎ যাব। তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের একটি পক্ষ আমাকে সহযোগীতা করে না। একারণে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহি অফিসার বিকাশ চন্দ্র বর্মন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলামের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং শিক্ষকদের নির্যাতনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।