রংপুরের পীরগঞ্জে আগাম জাতের ধান কাটা মাড়াইয়ে ব্যস্ত চাষিরা

রংপুরের পীরগঞ্জে মাঠজুড়ে আগাম জাতের পাকা ধান বাতাসে দোল খাচ্ছে। সোনালী রঙে যেন বাতাসে দুলছে ধান চাষীদের স্বপ্ন। কাক ডাকা ভোর হতে উচু জমিতে আবাদকৃত আগাম জাতের ধান পুরোপুরি পেকে যাওয়ায় ধান কাটা মাড়াই নিয়ে কৃষাণ কৃষাণিরা ব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ কেউ ইতিমধ্যেই ধান কাটা মাড়াই করে ফুরফুরে মেজাজে।

আগাম জাতের ধানের ফলন আর কৃষি মাঠে পাকা ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণে চারিদিক বিমোহিত। চলতি মওসুমে পোকামাকড়ের বালাই অনেকটাই কম। ধান অসময়ে ফলনের কারণে উপজেলার অনেক কৃষকদের মধ্যে আগাম জাতের ধান চাষের বেশ আগ্রহ দেখা দিয়েছে। ধানের দাম বিগত সময়ের চেয়ে বেশি হওয়ায় চাষীরাও বেশ খুশি।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, উপজেলায় ব্রি ধান ৭১, ব্রি ধান ৭৫, বিনা ধান ১৭, বিনা ধান ৭, ব্রি ধান ৮৭ এবং হাইব্রিডসহ ১২ টি জাতের ধান এবছর ৭ হাজার ৫ শ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আগাম জাতের ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। অল্প সময়ে ফলন বেশি এবং কম খরচে আগাম জাতের ধান রোপণ করে ভালো ফলন পাওয়ায় সফলতার মুখ দেখছেন কৃষকরা।

চৈত্রকোল ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজার রহমান বাবলু জানায়, আগাম জাতের ধান কাটা হয়েছে। এখন আলু চাষের জন্য জমির পরিচর্যার কাজ চলছে। সিংহারপাড়া গ্রামের শরিফুল ইসলাম ও দানিশনগর গ্রামের শাহজাহান মিয়া বলেন, ধান কাটা মাড়াই চলছে। ক’দিনের মধ্যেই সরিষা এবং শাক-সবজি চাষের প্রস্তুতিও চলছে।

টুকুরিয়া ইউনিয়নের বোয়ালমারি গ্রামের আমিনুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন বলেন, তারা প্রতিবছর আগাম জাতের ধানের চাষাবাদ করে আসছেন। বৃষ্টির পানির অপেক্ষায় না থেকে সেচ পাম্পে পানি সেচ দিয়ে এই ধানের চাষ করেন। এই সময় ধান কাটা শ্রমিকের সংকট হয়না। গো-খাদ্য খড় ব্যবসায়ীরা জমি থেকে ধান কাটা মাড়াই করে ঘরে উঠিয়ে দেয়।

তাছাড়া নতুন ধানের চাল বাজারেও অনেক চাহিদা রয়েছে। এসব ধান কেটে দ্রুত অন্যান্য ফসলের আবাদ করতে পারবে তারা। বর্তমানে কৃষকদের মাঝে এ ধান চাষের ব্যাপক চাহিদা বাড়ছে। তবে আগাম জাতের ধানের উপর পাখিদের নজর বেশি। বাবুইসহ কয়েক প্রকারের পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে পাকা ধান ক্ষেতে আসে। এগুলো তাড়াতে বাড়তি পরিশ্রমও করতে হয়। অনেকে বাড়তি খরচ করে জমির উপর জাল টানিয়ে দেয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার বলেন, আলু ও তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলার স্বল্প মেয়াদী ধানের জমিতে আগাম চাষাবাদ, বৃষ্টির অপেক্ষায় না থেকে সম্পুরক সেচের মাধ্যমে সঠিক সময়ে আমন ধানের রোপন, কৃষকদের প্রশিক্ষণ, মাঠদিবস, কৃষক মতবিনিময় সভায় কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করা হয়েছে। ফলস্বরূপ একদিক যেমন আগাম রোপা আমন ধান চাষ স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি চাষবাস হচ্ছে অপরদিকে উপজেলায় আলু ও সরিষাসহ তেল জাতীয় ফসলের চাষও বৃদ্ধি পাচ্ছে।