রংপুরের পীরগঞ্জে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পূর্বেই নতুন বই বিতরণ! নানা অভিযোগ
পীরগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়ালি বই বিতরণ কায্যক্রম উদ্বোধনের পূর্বেই অভিনব কায়দায় শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ করছেন উপজেলার ছাতুয়া দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসার সুপার। ওই মাদ্রাসার শিক্ষকরা মোটর সাইকেলযোগে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেকে এনে বই হাতে গুজে দিয়ে আবার বাড়িতে পৌছানো হচ্ছে। নির্ধারিত তারিখের পূর্বেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, আগামী ৩০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বই বিতরণী অনুষ্ঠান করোনা মহামারীর কারণে মূল ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠান হবে আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ৩০ডিসেম্বর উদ্বোধণী অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই ২০২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে নতুন বই বিতরণ করবেন। এ লক্ষ্যে সারা দেশের ন্যায় পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে নতুন বই পৌঁছে গেছে।
মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, উপজেলার টুকুরিয়া ইউনিয়নের ছাতুয়া দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসা সুপার একেএম শহিদুল ইসলামের নির্দেশে সহকারী শিক্ষক মৌলভী শাহজাহান, জাহাঙ্গীর হোসেন, মৌলভী রমজান আলী, ও উত্তম কুমার মোটর সাইকেলযোগে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেকে এনে নতুন বই বিতরণ করছেন। তিনি ৩ দিন ধরে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পূর্বেই বই বিতরণ করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। অভিযোগ করে মাধবপুর গ্রামের অভিভাবক সোহেল রানা জানান, আমার মেয়ে রোজী আক্তার ছাতুয়া দ্বি-মুখী মাদ্রাসার এবতেদায়ী শাখার ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী। সুপারের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত মনোমালিন্যের কারণে ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার মেয়েকে সমাপনী পরীক্ষার চূড়ান্ত তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়া হয়েছে। ছাতুয়া গ্রামের অভিভাবক হারুনুর রশিদ বলেন, আমার একমাত্র পুত্র শাহাদত হোসেনকেও অভিন্ন কারণে সমাপনী পরীক্ষার চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ক্ষিপ্ত অভিভাবকরা জানায়, ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা হবে কেন? তাদের জীবন থেকে কি ১টি বছর সুপার ফিরিয়ে দিতে পারবেন।
এ বিষয়ে ঝাড়বিশলা হায়াতুল উলুম আলিম মাদ্রাসার সুপার আবু ছালেক সরকার বলেন, এটা শিষ্টাচার বহিঃভূত।
দুধিয়াবাড়ী গ্রামের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী শিমুল মিয়া জানায়, তাকে হঠাৎ বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় শিক্ষক শাহজাহান। পরে মাদ্রাসা হতে বই হাতে দিয়ে ওই শিক্ষক তাকে বাড়ীতে রেখে যায়। এ ঘটনায় শিমুল মিয়ার বাবা আশরাফুল ইসলাম অনেকটাই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। একই কথা জানান, মোনাইল গ্রামের খাদেমুল ইসলামের পুত্র আহাদ আলী, বিছনা গ্রামের নাসির উদ্দিনের পুত্র মুন্না মিয়া ও দুধিয়াবাড়ী গ্রামের বাবুল মিয়ার পুত্র সৌরভ।
২০২২ সালের নতুন বই দিয়ে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকেও নিজ মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে মাদ্রাসা সুপার একেএম শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে সরকারী অর্থ আত্নসাৎ, ভূয়া নিবন্ধনে তার নিজ স্ত্রীকে ওই মাদ্রাসায় নিয়োগ প্রদান, আয়া ও নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ বাণিজ্যে বিভিন্ন প্রার্থীর নিকট ২১ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে ছাতুয়া দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসা সুপার একেএম শহিদুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিব করেননি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মমিন মন্ডল জানান, যেকোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই হোক, প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পূর্বে বই বিতরণ ঠিক না।
এ বিষয়ে রংপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোকসানা বেগম বলেন, যেহেতু ইতিপূর্বে বই উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করা হতো, কিন্তু এবার বই উৎসব না থাকলেও ১ জানুয়ারীর পূর্বে বই বিতরণ নীতি বহিঃভূত। তাছাড়া সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো সব শ্রেণীর বই পৌছেনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন