রংপুরের পীরগঞ্জে জালিয়াতির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত, মামলা

পীরগঞ্জের ছাতুয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরমান হোসেন মুকুলের বিরুদ্ধে ব্যাপক দূর্নীতি, জালিয়াতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং বিদ্যালয়ে অস্থির পরিবেশ সৃষ্টির অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সভাপতির স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ এবং অনলাইনে তার নিজের ৩টি যোগদানের তথ্যের সন্ধ্যান পাওয়ায় আদালতে ৩টি মামলা করা হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওই বরখাস্তকৃত শিক্ষককেই সহযোগিতা করায় পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, বিগত ১৯৯৫ সালে উপজেলার টুকুরিয়া ইউনিয়নে ছাতুয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর ২০২৩ সালে এমপিওভুক্তির নির্দেশ পায়। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান ২০০৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর ইস্তফা দিলে শুন্যপদে সহকারী শিক্ষক আরমান হোসেন মুকুলকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়।

প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়ার থেকেই মুকুল বেপরোয়া হয়ে উঠেন। তার কাছে বিদ্যালয়ের পাসওয়ার্ড থাকায় তিনি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সহ অনেকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে তার স্ত্রী রোকসানা বেগম সহ ৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেখিয়ে ২০১৩ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এর অনলাইনে ‘ব্যানবেইস টিচার্স ডাটাবেইজ’ এ তথ্য আপলোড করেছেন। অথচ ২০০৪ সালে নিয়োগপ্রাপ্তদেরকে অনলাইনে দেখাননি। এছাড়াও প্রধান শিক্ষক হিসেবে তার ৩টি নিয়োগ-যোগদানের তথ্য অনলাইনে আপলোড করার ঘটনাও ঘটিয়েছেন। যোগদানের তারিখগুলো হলো, ১৫/১/২০০৩ইং, ২৪/৯/২০০৩ইং এবং ২৫/১১/২০০৪ ইং। উল্লেখ্য যে, প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে ১০/৯/২০০৩ সালে আবেদন করলেও তার ৮ মাস আগেই মুকুল নিজেকে ১৫/১/২০০৩ইং প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান দেখিয়েছেন। এছাড়াও তিনি বিদ্যালয়টির ‘পিডিএস আইডি’ তেও জালিয়াতি করেছেন। তার নামে ২টি, সহকারী শিক্ষক আক্তারুজ্জামানের ৩টি এবং অপর সহকারী শিক্ষক আজাহার আলীর নামে ২ টি পিডিএস আইডি করেছেন।

সুত্র জানায়, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে এমপিওভুক্তির জন্য প্রধান শিক্ষক মুকুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর জালিয়াতি করে তিনিসহ ৩ জন শিক্ষকের কাগজপত্র অনলাইনে পাঠালে বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়ে। পরে বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আফজাল হোসেন দূর্নীতি, অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতির অভিযোগে মুকুলকে কারণ দর্শানোর পর ৩১/১২/২০২৩ ইং সাময়িক বরখাস্ত করেন।

সুত্র আরও জানায়, ২০০৪ সালে বিদ্যালয়টিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে নিয়োগের রেজ্যুলেশন, শিক্ষক বিবরনী, শিক্ষা জরিপসহ বিভিন্ন তথ্যে উল্লেখ থাকলেও ওই প্রধান শিক্ষক তাদেরকে ২০১৩ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অনলাইনভুক্ত করেননি। এমনকি পিডিএস আইডি’তেও দেখায়নি। তবে ২০০৪ সালে নিয়োগ পাওয়া ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে ২০২৩ সাল থেকে অনলাইনে দেখানো হয়েছে। বরখাস্তকৃত ওই শিক্ষক ব্যাপক ঘাপলা করায় এমপিওভুক্ত হওয়ার ব্যাপারে বিদ্যালয়টির শিক্ষক-কর্মচারীরা চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের কাজকর্মে বাঁধাগ্রস্থ করছেন বলে জানা গেছে। এদিকে এমপিওভুক্তির নির্দেশ পাওয়ার ১৪ মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কেউই এমপিওভুক্ত হতে পারেননি।

বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আফজাল হোসেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাকিলা পারভীন এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক-কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরখাস্তের বিষয়টি না মেনে উল্টো বরখাস্তকৃত ওই শিক্ষককে সহযোগিতা করায় আমরা দাপ্তরিক কাজ করতে পারছিনা। সদ্য সাবেক সভাপতি আফজাল হোসেন বলেন, ম্যানেজিং কমিটি প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করলেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তা মানছেন না। ফলে বিল বেতনের কাগজপত্র পাঠানো সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, বরখাস্তকৃত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৩ টি মামলায় আদালত শোকজ করলেও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে সহযোগিতা করছেন না।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাকিলা পারভীন বলেন, আমি পাসওয়ার্ডের জন্য আবেদন করলেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তা আমলে নিচ্ছে না।

বরখাস্তকৃত আরমান হোসেন মুকুল তার ৩ টি যোগদানের ব্যাপারে বলেন, এমপিওভুক্তির জন্য আমি যে যোগদানের তারিখ দেখিয়েছি, সেটিই সঠিক। অনলাইনে ৩টি যোগদানের তারিখ কিভাবে হলো, জানি না। তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা করতে গিয়েই আমার স্ত্রী (রোকসানা বেগম) কে শিক্ষক প্রতিনিধি দেখাতে তাকে নিয়োগ দিয়েছি। এখন তিনি (স্ত্রী) আর শিক্ষক নন। আরও ৮ জনকে নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে তিনি মন্তব্য করেননি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন মন্ডল বরখাস্তকৃত শিক্ষককে সহযোগিতার কথা অস্বীকার করে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষকের মাঝে সৃষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করছি। তবে আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে পাসওয়ার্ড দেয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেইনি। তিনি মামলার ব্যাপারে বলেন, আদালত বরখাস্তকৃতকে শোকজ করেছে।