রংপুরের পীরগঞ্জে ধর্মান্তরিত প্রেমিক যুগল বিয়ে করেও পালিয়ে বেড়াচ্ছে, বাবা’র বিরুদ্ধে মামলা
দীর্ঘ এক যুগ ধরে একে অপরের সঙ্গে চেনা জানা, পরিচয় অতঃপর প্রেম। আর প্রেমের শেষ পরিণাম বিয়ে। প্রেমকে চির অম্লান করে রাখতে প্রেমিক যুগল স্থানীয় কাজী অফিস ও রংপুর নোটারী পাবলিক কার্যালয়ের মাধ্যমে বিয়ে করেও ধর্মান্তরিত যুবতির বাবাসহ তার পরিবারের লোকজনের অব্যাহত হুমকি ধামকি ও প্রাণনাশের আশংকায় তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
এ বিষয়ে ধর্মান্তরিত যুবতি গত ৯ জানুয়ারী-২০২৪ তারিখে তার বাবা, মামা ও বোনসহ ৪জনের নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে রংপুরের বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১০৭/১১৭ (সি) ধারায় মামলা করেছেন।
ভুক্তভোগী ও আদালতের মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের মৃত আবুল হোসেন সরকারের পুত্র মুসফিকুর রহমান রতন (৫০) এর সঙ্গে একই উপজেলার টুকুরিয়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের শ্রী রাজ কুমার রায়ের কন্যা শ্রীমতি দুলালী রাণী (৩৩) এর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। মুসফিকুর রহমান রতন বিবাহিত ও সন্তান-সন্ততির জনক আর দুলালী রাণী কুমারী (অবিবাহিত)।
তাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের বিষয়টি রতন ও দুলালীর উভয় পরিবার অনেক পূর্ব থেকেই জানতো। ধর্ম বৈষম্যের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তা নিরসনে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও থানায় উভয় পরিবারকে নিয়ে একাধিকবার বৈঠক হলেও দুলালী ও রতন তাদের সিদ্ধান্তে ছিলো অনড়। ফলে কোন সুরাহা হয়নি।
বরং গত ২৬ জুলাই’ ২৩ তারিখে রংপুর নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে সনাতন ধর্ম হতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং ইসলামী শরীয়া মোতাবেক স্থানীয় কাজীর নিকট ৩লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য করে রেজিষ্ট্রির মাধ্যমে মুসফিকুর রহমান রতনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তার নাম রাখা হয় মোছাঃ দুলালী রানী। বিবাহের পর রতন দুলালীর দাম্পত্য জীবন ভালই চলছিল।
এদিকে দুলালীর বাবা রাজ কুমার রায় ও তার পরিবার বিষয়টি মেনে না নিতে পেরে কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়। গত ২৬ নভেম্বর’২৩ তারিখে দুলালী তার চাকুরীস্থল ডাসারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে স্বামীর বাসায় যাওয়ার পথে তার বাবা ও পরিবারের লোকজন জোরপূর্বক সিএনজিতে তুলে পিত্রালয়ে নিয়ে যায়।
সেখানে তাকে শারিরীক ও মানষিকভাবে নির্যাতনের মাধ্যমে গত ২৮ নভেম্বর’২৩ তারিখে বলপূর্বক আদালতে করা এভিডেভিট বাতিলের নিমিত্বে কিছু ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। শুধু তাই নয়, তাকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হতো। রতনের সঙ্গে যাতে কোন প্রকার যোগাযোগ না হয় সেজন্য তাকে মোবাইলও ব্যবহার করতে দেয়া হয়নি।
দুলালী জানায়, আমি এখন মুসলিম। আমার স্বামী মুসফিকুর রহমান রতন। ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক তার সঙ্গেই আমি সারা জীবন কাটাবো। এজন্য পুনরায় গত ৯ জানুয়ারী’২৪ তারিখে আদালতে এফিডেভিট পূর্বক আমার বাবা রাজ কুমার চন্দ্র, মামা পরিমল চন্দ্র, বোন শিউলী রানী ও প্রতিবেশী আবু তাহেরের নাম উল্লেখ করে মামালা করেছি।
দুলালী আক্ষেপ করে বলেন, যখন অর্থাভাবে পড়ালেখা বন্ধের উপক্রম তখন প্রেমিক রতন তাকে আর্থিক সহায়তাসহ লেখা পড়ায় নানাভাবে উৎসাহ যুগিয়েছে। নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে সহায়তা করেছে। এখন আমি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।
আমার চাকুরীটাই এখন তাদের (বাবাসহ পরিবারের সদস্য) লোভের বিষয়। সে জন্য আমার স্বামীসহ আমাকে মারডাং, খুন জখম ও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকী দিয়ে আসছে। দুলালী আকুতিভরা কন্ঠে বলেন, আমি ধর্মান্তরিত একজন নারী, আমি আমার স্বামীকে নিয়ে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন