রংপুরের পীরগঞ্জে প্রকল্পের কাজ না করেই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

রংপুরের পীরগঞ্জে কাজ না করেই অস্তিত্বহীন প্রকল্প দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলার বড় আলমপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সেলিমের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, গত ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে এলজিএসপি-৩ বরাদ্দকৃত ৪টি প্রকল্প কাগজে-কলমে শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে সবকটি প্রকল্পের টাকা উত্তোলন পূর্বক আত্মসাৎ করেন ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম মিয়া। শুধু তাই নয়, প্রকল্পে আপন ছোট ভাই হাফিজ আব্দুন নুর সোহেলকে ঠিকাদার সাজিয়ে ভুয়া মাস্টার রোলের মাধ্যমে বরাদ্দের অর্থও পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ সরেজমিনে গিয়ে ওই সব প্রকল্পের কোনই অস্তিত্ব মেলেনি। ৪টি প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ৪ লাখ ১৮ হাজার ১৫২ টাকা।

ইউনিয়নের বেকার যুবক ও যুবতীদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে আয়বর্ধক ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের নামে বরাদ্দ ছিলো ৭৫ হাজার টাকা। প্রশিক্ষণ না দিয়েই বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলন পূর্বক আত্মসাৎ, ইউনিয়ন পরিষদের পুকুর পাড়ে বিনোদন পার্ক স্থাপনের নামে বরাদ্দ ২ লাখ টাকা কোন কাজ না করেই অর্থ আত্মসাৎ, ইউনিয়ন পরিষদসহ পত্নীচড়া বাজার ও আশপাশে সিসি ক্যামেরা স্থাপনে বরাদ্দ ছিলো ১ লাখ ৪৩ হাজার ১৫২ টাকা সেটিও কোনো কাজ না করেই বরাদ্দের পুরো টাকা আত্মসাৎ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। এছাড়াও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অবস্থিত ডেলিভারি ধাত্রীদের সন্মানী ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন তিনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রভাব ও স্থানীয় সাংসদ সাবেক স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর প্রভাব খাটিয়ে এসব অনিয়ম দূর্নীতি করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম মিয়া। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে গণস্বাক্ষর সম্বলিত লিখিত অভিযোগ করেছেন উক্ত ইউনিয়নের নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।

এ ছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ চত্তরে শহীদ মিনার নির্মানের জন্য ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও ইউনিয়ন পরিষদ সংস্কারে নিয়োজিত ঠিকাদারের কাছ থেকে বলপূর্বক ইট, সিমেন্ট, বালি ও ইট ভাটা থেকে ভাটা মালিকদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ইট সংগ্রহ করে শহীদ মিনারটির কাজ নির্মাণাধীন। অথচ কাগজ কলমে প্রকল্পের কাজ শেষ দেখিয়ে বরাদ্দকৃত ৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

বড় আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আশরাফুল আলম বলেন, আমার নিকট থেকে বেশকিছু কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন চেয়ারম্যান। বরাদ্দের সকল টাকা চেয়ারম্যানের নিকট রয়েছে। আমি অনেকদিন ধরে তাঁকে (চেয়ারম্যান)কে কাজের জন্য বলে আসছি, কিন্তু তিনি করবো করছি বলে সময় ক্ষেপণ করছেন। বিষয়গুলো নিয়ে আমিও মহা বিপদে আছি।

ইউপি সদস্য শিমুল মিয়া জানান, আমি নিজেও ৩টি প্রকল্পের সভাপতি ছিলাম আমাকে কোনো কিছু না বলেই প্রকল্পের টাকা নিজেই উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন চেয়ারম্যান। সংরক্ষিত মহিলা সদস্য সুরুজতারার বেশ কয়েকটি প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন। ওই সব প্রকল্পে কেনো কাজ করা হয়নি। অথচ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সেলিম মিয়া প্রকল্পের সমূদয় টাকা উত্তোলন করে পকেটস্থ করেছেন। অভিন্ন কথা বলেছেন ইউপি সদস্য আশরাফুল আলম ও আবু তাহের।

এ ব্যাপারে বড় আলমপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সেলিম মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই বলে ফোন কেটে দেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ খাদিজা বেগম বলেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি এবং তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে রংপুরের স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক (উপসচিব) রায়হান কবির জানান, ইউপি চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।