রংপুরে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ায় থানায় অভিযোগ
রংপুরের মিঠাপুকুরে প্রাইভেটকার আর মাহিন্দ্রা ট্রাক্টর সাইড দেওয়াকে কেন্দ্র করেএলোপাতাড়ি মারধরে ট্রাক্টর ড্রাইভার খালেকের মৃত্যুর ঘটনা রোড এক্সিডেন্ট দেখিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত একজনের নাম উল্লেখ্য সহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মিঠাপুকুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন এক মানবাধিকার কর্মী।
অভিযোগে উল্লেখ্য করা হয়েছে নিহত খালেকের বাড়ি নওগাঁ হওয়ায় মৃত খালেক এবং তার পরিবার ন্যায়বিচার পাননি। লোহমর্ষক একটি ঘটনা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। সামাজিক অবক্ষয় রোধে এবং অপরাধ প্রবণতা কমাতে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সোমবার (২৪-জুন) মিঠাপুকুর থানায় উপস্থিত হয়ে মানবাধিকার কর্মী বেলায়েত হোসেন বাবু একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপূর্বে বৃহস্পতিবার (২০-জুন) রাত আনুমানিক ৯ টার সময় মিঠাপুকুর উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বটের চড়া ঝলঝলির বিল নামক স্থানে আব্দুল খালেক (৩৫) নামে একজনকে অমানবিক নির্যাতন করে পিটিয়ে আহত এবং ঘটনার একদিন পর তিনি মারা যান।
মামলার বিবরণে উল্লেখ্য করা হয়েছে, প্রাইভেটকারে থাকা অভিযুক্ত চার তরুণ ঘটনার সময় মাদকাসক্ত হয়ে বেপরোয়া গতিতে বালুয়া থেকে শঠিবাড়ী যাচ্ছিলেন। এসময় নওগাঁ জেলায় বসবাসরত আব্দুল খালেক লালমনিরহাট থেকে একটি মাহিন্দ্রা ট্রাক্টর কিনে রাত হওয়ায় মিঠাপুকুরে বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুরে সম্পর্কে চাচার বাড়িতে ফিরছিলেন।গোপালপুর ইউনিয়নের বটের চড়া ঝলঝলির বিল নামক স্থানে পৌঁছা মাত্র প্রাইভেট কারের সঙ্গে ট্রাক্টরের সাইড দেওয়াকে কেন্দ্র করে উভয়ের বাকবিতন্ডা শুরু হলে বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে প্রাইভেটকারে থাকা চার তরুণ ট্রাক্টর ড্রাইভারকে টেনেহিঁচড়ে নীচে নামিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন। এলোপাতাড়ি মারধরে ট্রাক্টরের ড্রাইভার ঘটনাস্থলে নিস্তেজ হয়ে পড়েন এবং রক্তবমি সহ পায়খানা করে ফেলেন। এসময় পথচারী সহ স্থানীয়রা ছুটে গিয়ে চার তরুণের হাত থেকে ট্রাক্টর ড্রাইভারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান এবং অভিযুক্তদের আটক করে রাখেন।
চার তরুণের মধ্যে একজন গোপালপুর ইউনিয়নের বড় বান্দের পাড়া গ্রামের রয়েল মিয়ার ঢাকায় বসবাসরত ২২/২৩ বছরের পুত্র বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত হন । পরে স্থানীয়দের তোপের মুখে ওই প্রাইভেটকারে ট্রাক্টরের ড্রাইভারকে হাসপাতালে নিয়ে যান এবং আহত আব্দুল খালেকের ফোনের ডায়াল কল থেকে তার চাচাকে ফোন দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে ঘটনা ঘটার পরে ভিকটিমের চাচাকে প্রভাবিত করে নওগাঁয় অবস্থানরত খালেকের পরিবারকে জানানো হয় খালেক এক্সিডেন্ট করেছে এবং এদিকে চলে দেনদার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকের দাবি, খালেকের মৃত্যুর কারন তার চাচাও হতে পারে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, এমন নির্মম হত্যাকান্ড ইতিপূর্বে তারা আর দেখেনি। এমনকি ঘটনার বর্ননা দিতে গিয়ে অনেকে নির্বাক হয়ে পড়েন। জাহাঙ্গীর, রায়হান, হযরত আলী,রায়হান মন্ডল বলেন, প্রাইভেটকারে থাকা তরুনরা ছিলো মাদকাসক্ত। অভিযুক্তরা ট্রাক্টর ড্রাইভার খালেককে ফুটবলের মতো সট আর লাথি মেরেছে। তাদের এলোপাতাড়ি মারধরে খালেক ঘটনাস্থলেই রক্ত বমি এবং পায়খানা করে ফেলেন। তাদের দাবি,এত পরিমাণে আঘাত করা হয়েছে যে,স্থানীয়রা হতভম্ব হয়ে পড়েন। যাহার স্বাক্ষী ঘটনাস্থলের কয়েকশত লোক।
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ রাশেবুল ইসলাম জানান, মারামারির ঘটনায় খালেক নামে একজনকে হাসপাতালে রাত আনুমানিক ১১.৩০ মিনিটে মিলন নামে একজন মুমূর্ষু অবস্থায় ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করি। পরে কি হয়েছে আমাদের জানা নেই।
এদিকে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ বলছে, ঘটনা ঘটার পর তাদের কেউ মারা গিয়েছে এমনটা জানানো হয়নি। বিট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এক জনপ্রতিনিধি ফোনে বলেছিলো একটি ছোটখাটো দূর্ঘটনা ঘটেছে আমরা স্থানীয়ভাবে বসে মিমাংসা করছি। এখন শুনতেছি এই ঘটনা।ইউপি সদস্য আফজাল হোসেন জানান, মারামারি করে একজন মারা যাওয়ার পর বিষয়টি মিমাংসা হওয়ার কথা শুনেছি। বিটু নামে একজন বলেন, বিচারে আমি উপস্থিত ছিলাম। ৭,৮০,০০০ (সাত লক্ষ আশি হাজার) টাকায় বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে। ভাগ উপর থেকে নীচ সবাই পেয়েছে। সবাইকে চুপ করতে যা করা লাগে সব করা হয়েছে।
মানবাধিকারকর্মী বেলায়েত হোসেন বাবু বলেন, ঘটনা ঘটার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে এমন নির্মম ঘটনার বর্ননা জানতে পারি। পরে খবর নিয়ে দেখি বিষয়টি মিমাংসা করা হয়েছে। সম্ভবত ভিকটিমের পরিবারকে রোড এক্সিডেন্ট দেখিয়ে টাকা পয়সা নিয়ে তার স্বজনরা খেয়ে ফেলেছে। পুলিশ সব জানার পরেও ব্যবস্থা নেয়নি। এরকম ঘটনা বারবার ঘটছে। আর অজানা কারনে পুলিশ চুপ করে রয়েছে। তাই বিবেকের তাড়নায় বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করেছি। প্রয়োজনে আদালতে যাওয়া হবে।
মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার থেকে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে একটি অভিযোগ পেয়েছি, যেখানের অভিযোগ সেখানেই পড়ে আছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট, মাহে আলম বলেন, ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হলে মানবাধিকার কর্মী হিসেবে যে কেউ থানায় বা আদালতে অভিযোগ জানাতে পারেন। প্রশাসন তা আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত তরুনের বাড়িতে গিয়ে তালাবদ্ধ পাওয়া যায় এবং তার পিতা রয়েল মিয়াকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন