রাঙামাটিতে ইয়াবা কারবারিদের হামলায় নাইটগার্ড আহত, পরিবার নিরাপত্তাহীনতায়


রাঙামাটিতে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলায় নৃশংস হামলার শিকার হয়েছেন মো. ইসাক ভান্ডারি এবং তার পরিবার।
মাদক ব্যবসায়ীদের হামলা, হুমকি ও মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার (১৫ মার্চ) সকাল ১১টায় শহরের মোল্লাপাড়া, ৬নং ওয়ার্ড, বাঙ্গা বাটিতে সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগীর পরিবার।
ভুক্তভোগীর দাবি, সম্প্রতি তিনি মাদক কারবারিদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় তাদের রোষানলে পড়তে হয়। অভিযোগ রয়েছে, মাদক ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন শাকিল (দেলু)-এর নেতৃত্বে একদল যুবক পরিকল্পিতভাবে তাদের উপর হামলা চালায়।
হামলার পরপরই ভুক্তভোগী পরিবার থানায় মামলা করে। ঘটনার পরদিন রাতেই পুলিশ অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন শাকিলকে গ্রেপ্তার করে। তবে ভুক্তভোগীর পরিবারের দাবি, অভিযুক্ত গ্রেপ্তারের পর থেকে তাদের নিরাপত্তা আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
ভুক্তভোগীর পরিবারের নূর হোসেন বলেন, “আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভুক্তভোগী পরিবার মোঃ ইসাক ভান্ডারি, স্ত্রী শারমিন আক্তার, পুত্র: নূর হোসেন, কন্যা: শারমিন।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
আমি নুর হোসেন, মোল্লা পাড়ার একজন স্থায়ী বাসিন্দা। গত ৯ মার্চ ২০২৫, রাত আনুমানিক ১১টার দিকে, আমার বাবা ইসাক ভান্ডারী ডিউটিরত অবস্থায় ছিলেন। এসময় দেলোয়ার হোসেন শাকিল ওরফে দেলু এবং তার সঙ্গে আরও কয়েকজন যুবক নির্মাণাধীন ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করে। তিনি তাদের সেখানে প্রবেশের কারণ জানতে চাইলে তারা স্পষ্টভাবে জানায়- “আমাদের ভিতরে কাজ আছে, আমরা কিছুক্ষণ বসে চলে যাবো”
যেহেতু আমার বাবা সেখানে নাইট গার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাই তিনি বাধা দিলে তারা তাকে হুমকি দিতে থাকে এবং শারীরিকভাবে হামলা চালায়। তখন তিনি আমাকে ফোন করলে, আমি এলাকাবাসীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসি। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে দেলোয়ার দেলু (শাকিল) ও তার সহযোগীরা মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর দেলোয়ার তার মোটরসাইকেল নিতে এলে, আমরা তাকে আটক করি এবং সে স্বীকার করে যে, সে মাদক ব্যবসা ও সেবনের সঙ্গে জড়িত। আমাদের কাছে তার স্বীকারোক্তির ভিডিও ক্লিপ সংরক্ষিত রয়েছে। আমরা তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, কিন্তু সে সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায়।
এই ঘটনার জেরে, ১১ মার্চ রাত ৮টার দিকে আমার বাবা ও এলাকার গন্যমান্য মানুষ যখন চায়ের দোকানে বসেছিলেন, তখন দেলোয়ার ও তার সহযোগীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তারা শুধু আমার বাবার ওপরই নয়, ঘটনার দিন উপস্থিত থাকা অন্যান্য কয়েকজনের ওপরও হামলা করে।
আমার বাবার আহত হওয়ার খবর শুনে আমি এবং আমার বোন ও আমার মা ঘটনাস্থলে গেলে, আমাদেরকেও মারধর করা হয়। আমার বোনকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে মারধর করে ফেলে রাখা হয়।
আমাকে ও আমার বাবাকে এলাকাবাসী হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতির খবর পেয়ে হামলাকারীরা পালিয়ে যায় এবং এলাকাবাসী আমার বোনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
১২ মার্চ সকাল ১১ ঘটিকায় থানায় মামলা দায়ের করি, যার পরিপ্রেক্ষিতে ১২ মার্চ রাতেই পুলিশ দেলোয়ার হোসেন শাকিল ওরফে দেলুকে গ্রেপ্তার করে।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, তার গ্রেপ্তারের পর থেকে আমাদের পরিবারের ওপর হুমকির পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে। বর্তমানে আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৩ মার্চ, দেলোয়ারের পরিবার সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করে যে, নদীতে জাল ফেলা নিয়ে বিরোধের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই- তাদের এই বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
মূল ঘটনা হচ্ছে- ইয়াবা ব্যবসাকে ধামাচাপা দিতে নদীতে জাল ফেলার মিথ্যা গল্প সাজানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে বিবি ছালেহা বলেন, আমি আমার দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি। আমার ছেলেকে মারার জন্য নূর হোসেন কোন হুমকি দেয়নি।
এই ঘটনার পর রাঙামাটির সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা দ্রুত প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ আশা করছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন