রাঙামাটিতে জোরপূর্বক প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধসহ ১৬ দফা দাবিতে সুজনের স্মারকলিপি প্রদান
জোরপূর্বক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম বন্ধসহ গ্রাহকদের ভোগান্তি নিরসনে রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে ১৬ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি দিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন নেতৃবৃন্দ। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, পূর্ববর্তী সরকার দেশকে ডিজিটালাইজেশনের নামে ঘরে ঘরে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাঙামাটি পৌর এলাকায় প্রথম দিকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে এবং বর্তমানে বাসাবাড়িতে মিটার স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হয়েছে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, মিটার স্থাপনের পর গ্রাহকদের বিভিন্ন অভিযোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনা জরুরি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সুজনের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের বিভিন্ন অভিযোগ ও দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হয়েছে।
এদিকে রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জালাল উদ্দীন সুজন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপকালে গ্রাহকদের সকল অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস ও জোরপূর্বক প্রিপেইড মিটার স্থাপন না করার কথা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, আমরা এসব দাবি পজেটিভলি গ্রহণ করেছি। সমস্যাগুলো সমাধানে কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। গ্রাহকদের জোরপূর্বক প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হচ্ছে না। তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আমরা কাজ করছি।
স্মারকলিপি পেশকালে সুজন রাঙামাটি জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট দীননাথ তঞ্চঙ্গ্যা, সম্পাদক এম জিসান বখতিয়ার, সুজন সদর উপজেলার সভাপতি পলাশ কুসুম চাকমা, সাধারণ সম্পাদক শংকর হোড়, পৌর কমিটির সভাপতি ইন্দ্রদত্ত তালুকদার, সম্পাদক মো. এরফানুল হক রুমেল, সুজন বন্ধু জেলা কমিটির সভাপতি মিশু দে, রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জালাল উদ্দীন, সহকারী প্রকৌশলী খন্দকার রোকনুর জামান, উপ সহকারী প্রকৌশলী রঞ্জু আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।
অভিযোগ ও দাবিগুলো হচ্ছে:
১. জোরপূর্বক প্রিপেইড মিটার নিতে বাধ্য করা বন্ধ করতে হবে।
২. প্রিপেইড মিটার না নিলে লাইন কাটা বন্ধ করতে হবে।
৩. লোড বাড়ানোর জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
৪. প্রতি মাসে মিটারের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, এটা কত মাস পর্যন্ত নেয়া হবে তা গ্রাহককে জানিয়ে দিতে হবে।
৫. প্রিপেইড মিটারের গ্রাহককে সকল সেবা নিতে বিদ্যুৎ অফিসে যেতে হয়, এমন অভিযোগ যা কোনভাবেই কাম্য নয়।
৬. যে কোনও কারণে লাইনে টান পড়লে মিটার লক(বন্ধ) হয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
৭. মিটারের ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেলে ব্যাটারি স্থাপনে গ্রাহককে চার্জ প্রদান করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে একটি মিটার কতদিন পর্যন্ত ওয়ারেন্টি/গ্যারান্টি থাকবে সেটা গ্রাহককে জানিয়ে দিতে হবে।
৮. মিটার নষ্ট হলে গ্রাহককে পুনরায় ৭/৮ হাজার টাকা দিয়ে মিটার স্থাপন করতে হয়। সেক্ষেত্রে পুনরায় মিটারের প্রতিমাসের ভাড়া কাটা হচ্ছে।
৯. লোড/কিলো কমানোর সুযোগ দিতে হবে।
১০. কোনও প্রকার পূর্ব নোটিশ বা ঘোষণা ছাড়া মিটার লক করে দেওয়া বন্ধ করতে হবে। যেকোনও অভিযোগের বিষয়ে গ্রাহককে আগেভাগেই জানাতে হবে।
১১. প্রিপেইড মিটারের ক্ষেত্রে বিল বেশি কাটার অভিযোগ রয়েছে।
১২. রিচার্জের তিন ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় রিচার্জ করতে না পারার নিয়ম পরিবর্তন করতে হবে।
১৩. প্রাথমিক পর্যায়ে যে সকল মিটার লাগানো হয়েছিল, সেসব মিটারে এনালগ পদ্ধতিতে নম্বর দিয়ে ইউনিট ক্রয় করতে হচ্ছে। সব প্রিপেইড মিটারে সরাসরি টাকা ঢুকানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
১৪. মিটারে কত টাকা আছে সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোবাইলে জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
১৫. নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বাক্ষর প্রয়োজন যা গ্রাহকরা খুঁজেই পাচ্ছে না। যার কারণে বেশি টাকায় গ্রাহকদের চুক্তিতে যেতে হয়।
১৬. প্রিপেইড মিটার নেয়ার প্রায় এক বছর পর আগের বকেয়া বিল রয়েছে বলে গ্রাহকদের কাছে বিল পাঠানো এবং সেটা দিতে অপারগতা দেখালে মিটার লক করে দেয়া হচ্ছে। অন্তত মিটার স্থাপনের ক্ষেত্রে কোনও বকেয়া থাকলে সেটা আগেই গ্রাহককে নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দিতে হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন