রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে নিশ্চিহ্ন ঘরবাড়ির ৯৫ ভাগই অবৈধ!
রাঙামাটি পৌর এলাকায় সম্প্রতি পাহাড়ধসে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া বাড়িঘরগুলোর ৯৫ শতাংশই অবৈধ স্থাপনা বলে দাবি করেছেন স্থানীয় পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী। তাঁর অভিযোগ, এসব জায়গা জেলা পরিষদ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। সেখানে তাঁর কোনো হাত ছিল না।
তবে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
গত সোম ও মঙ্গলবার রাঙামাটিতে প্রবল বর্ষণের কারণে ভয়াবহ পাহাড়ধসে ১১৫ জন প্রাণ হারায়। রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রকাশ কান্তি চৌধুরী গতকাল রোববার বলেন, ‘পৌর এলাকায় এ পর্যন্ত পাহাড়ধসে ৫৬ জন নিহত হয়েছেন।’
পৌর এলাকার ভেদভেদী, শালবন, যুব উন্নয়নসংলগ্ন এলাকাতেই পাহাড়ধসে বাড়িঘর ধসে পড়েছে। এই এলাকাগুলোয় অন্তত শ দেড়েক বাড়িঘর নষ্ট হয় বলে জানা গেছে। রাঙামাটির পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘যেসব বাড়ি পাহাড়ধসে নষ্ট হয়েছে, এর মধ্যে ৫ শতাংশও বৈধ স্থাপনা নয়। এসব জায়গা জেলা প্রশাসন বা পরিষদের পক্ষ থেকে বন্দোবস্ত (ব্যবহারের জন্য অনুমোদন) দেওয়া হয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করে পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো ভবন তৈরির অনুমোদন দেয়। এ ক্ষেত্রে তারা জমির দলিল, মাটির পরীক্ষার প্রতিবেদন, স্থাপত্য এবং পুর নকশা অনুমোদন করে। অর্থাৎ পাকা বাড়ি বলতে যা বোঝায়, পৌর কর্তৃপক্ষ সেসবই অনুমোদন দেয়। পৌর মেয়র এ সূত্র ধরেই বলেন, ‘বাড়িঘরগুলোর বেশির ভাগই টিনের বা মাটির। এসব স্থাপনা তৈরির সময় আমাদের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। খুব কম বাড়িই আছে যেগুলো পাকা।’
কাঁচা বাড়ি হলেও সেগুলো দেখভালের দায়িত্ব কি পৌর কর্তৃপক্ষের নেই? এর জবাবে পৌর মেয়র বলেন, সব সময় মনিটরিং করা সম্ভব হয় না।
রাঙামাটি বা পার্বত্য জেলাগুলোতে জেলা পরিষদের বাজার ফান্ড নামের একটি শাখা বা জেলা প্রশাসক বন্দোবস্ত দিতে পারেন। পৌর মেয়র ভেঙে যাওয়া বাড়িগুলোকে এসব প্রক্রিয়া অবলম্বন করে পাওয়া জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করছেন।
তবে রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা বলেন, ‘পৌর মেয়র যদি আমাদের দোষ দিয়ে থাকেন, তবে ভুল করেছেন। আমার সময় কোনো বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি।’
স্থানীয় ব্যক্তিদের অনেকেই বলেছেন, ধসে যাওয়া বাড়িগুলোর কিছু পাকা বাড়িও ছিল। সেসবের অনুমতি তাহলে কীভাবে মিলল? এ প্রশ্নের জবাবে রাঙামাটি পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্র এমন দেখা যায় যে পুরো পাহাড়টা হয়তো ৮০ ফুট। কিন্তু ৩০ ফুট এলাকার মাটির পরীক্ষা করে এনে প্রতিবেদন দেওয়া হলো। আর শুষ্ক মৌসুমে যখন এই প্রতিবেদন দেওয়া হয় তখন তো ফলাফল এক রকম হয়। বর্ষায় এর পরিস্থিতি কেমন হয় তার প্রতিবেদন আমরা পাই না।’
এবার ধ্বংস হওয়া যেসব টিনের বাড়ি বা অন্য কোনো উপায়ে তৈরি হয়েছে, এসব নির্মাণ যখন হচ্ছে, তখন পৌর কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়নি কেন? এর জবাবে নির্বাহী প্রকৌশলীর বক্তব্য, ‘পাহাড়ের ভেতরে খাঁজের মধ্যে অনেকে বাড়ি করে ফেলে। এর পর্যবেক্ষণ নিয়মিত করা অনেকটা দুঃসাধ্য।’
ধসে যাওয়া বাড়ি অননুমোদিত হলেও এসব বসতি স্থাপনে পৌর কর্তৃপক্ষের দায় রয়েছে বলে মনে করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান। তিনি রাঙামাটি পৌরসভা এবং জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, জায়গার বন্দোবস্ত দেওয়া এবং এতে স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ ও পৌরসভার মধ্যে একটা সমন্বয়হীনতা রয়ে গেছে। এসব এখন স্পষ্ট হচ্ছে। এই সমন্বয়হীনতা যত দ্রুত দূর করা সম্ভব।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন